কুষ্টিয়া: সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারী) কুষ্টিয়া মডেল থানার এস আই সাহেব আলীর নেতৃত্বে এ এসআই আসাদ সহ সংগীয় ফোর্স শহরতলীর কোর্টপাড়ার বারো শরীফ দরবার এর পাশে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ৩ জন মহিলা ও একজন ভূয়া পুলিশ পরিচয়দানকারী যুবককে আটক করেছেন।
আটককৃতরা হলেন কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার মোঃ তমছের আলীর মেয়ে মোছাঃ তানিয়া খাতুন (২৫), কুষ্টিয়া শহরের থানা পাড়া এলাকার মোঃ শহিদুলের স্ত্রী মোছাঃ সালমা বেগম (৩০), বারখাদা ত্রিমোহনী পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশের এলাকার মোঃ আনছার আলী পিয়াদার মেয়ে মোছাঃ বেবী খাতুন (৩৫), ও ভুয়া পুলিশ পরিচয়দানকারী বারখাদা ত্রিমোহনী এলাকার আতোর আলী শেখের ছেলে মোঃ শাহারুল ইসলাম (৩০)। মহিলা তিনজন দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত এবং তাদের সাহায্যকারী পুরুষ নিজেকে পুলিশের এসআই হিসাবে পরিচয় দিয়ে তাদের দেহ ব্যবসার কাজে সাহায্য করত।
পুলিশ চারজনকে আটক করলেও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঘটনা সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া মিরপুর এর নদী (ছদ্ম নাম) নামের মেয়ে কুষ্টিয়া কোর্টপাড়ার দরবার শরীফের পাশেই গত তিন-চার দিন আগে বাসা ভাড়া নেন। সে মূলত নারী দেহ ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করার জন্যই উক্ত ভাষাটি ভাড়া নেন। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারী) একজন মধ্যবয়স্ক এবং একজন যুবক নদীর ভাড়ার বাসায় আসেন অবৈধ কাজ করার জন্য।
কিন্তু নদী যে প্রতারক সেটা তাদের জানা ছিল না । পরবর্তীতে নদী জানান, তিনি যাকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি আসলে তার স্বামী নয় এবং তিনি সাংবাদিক বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন ।নদীসহ এই সিন্ডিকেটের কাজ ছিল তাদের কাছে যারা আসতো তাদেরকে জিম্মি করে এবং ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া । ওই দুই ব্যক্তি নদীর বাসায় পৌঁছানোর পরে নদীসহ অপর একটি মেয়ে তাদের দুইজনকে নিয়ে দুই রুমের মধ্যে চলে যায়।
এরপর পুলিশ পরিচয় প্রদানকারী এক যুবক এবং সাংবাদিক পরিচয়দানকারী অন্য আরেক যুবক এসে তাদেরকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে এবং তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা নেই বলে জানালে তখন নারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদেরকে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে ।ঘটনার এক পর্যায়ে, আটক দুইজন তাদেরকে বাড়ি থেকে টাকা এনে দেবে বলে জানান এবং তারা তাদের বাড়িতে প্রকৃত ঘটনা না বলে টাকা নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন।
এদিকে আটক দুই ব্যক্তির স্বজনেরা বিষয়টি কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করেন ।কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ পাওয়ার পরে তারা কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই সাহেব আলীর নেতৃত্বে একটি টিমকে ঘটনার তদন্ত ভার দেন। এছাড়াও কুষ্টিয়া মডেল থানা থেকে চাঁদা দাবি করা এবং এই সিন্ডিকেটের দেওয়া একটি বিকাশ মোবাইল নাম্বার ট্রেকিং শুরু করে।
এরপর তাদের দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে নারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদেরকে কুষ্টিয়া শহরতলীর কাটাইখানা মোড়ে যাওয়ার জন্য বলেন ।কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই সাহেব আলীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ টিম এই নারী সিন্ডিকেটের ৩ নারী সদস্য সহ একজন ভুয়া পুলিশ’ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিকে আটক করেন এবং পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তাদের সাথে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী হরিপুরের এক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন।
এদিকে এই বিষয়টা নিয়ে সমস্ত কুষ্টিয়া জুড়ে নানা রকম গুঞ্জন এবং আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে । বিশ্বস্ত একটি সূত্র থেকে জানা যায় কুষ্টিয়া শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন নারীর সিন্ডিকেটের সদস্যরা এই ভাবেই তাদের রমরমা দেহ ব্যবসা খুলে বসেছেন। যেখানে কুষ্টিয়া শহরের নামিদামি বিভিন্ন কলেজের মেয়েরা নিয়মিত যাতায়াত করেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের একজন ছাত্র বলেন, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ সহ বিভিন্ন কলেজের মেয়েরা নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে এই দেহ ব্যবসার মতো জঘন্য অপরাধে লিপ্ত রয়েছেন ।এদিকে এই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে গেলে জানা যায়, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের অনেক কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েরা ইতিমধ্যে এই দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন।
এই ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির জানান, দোষীদের আটক করে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আসামীদেরকে আদালত প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী কুষ্টিয়া শহরে এই ধরনের যতগুলো সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে তাদেরকে অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।
ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক 
























