ছেলের থেকে মা ছোট : বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে করছেন সরকারি চাকরি
রাজশাহী ব্যুরো: ছেলের জন্ম ১৯৯৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর অর্থাৎ ছেলের বর্তমান বয়স প্রায় সাড়ে ২৫ বছর। মায়ের জন্মসালও ১৯৯৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর অর্থাৎ মায়ের বয়সও প্রায় সাড়ে ২৫ বছর। জন্ম তারিখ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে মা ছেলের থেকে ২ দিনের ছোট। এভাবেই তথ্য গোপন ও বয়স জালিয়াতি করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাংগুল দেখিয়ে ৬ বছর যাবত দিদার্সে চাকরি করছেন কুবিরা বেগম (৪১)। তিনি ৬ বছর ধরে উপজেলা পরিবার কল্যান সহকারী (এফ ডব্লিউ এ) পদে চাকুরী করছেন। সরকারি চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ায় বয়স জালিয়াতি করেছেন কুবিরা বেগম। তিনি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল ইউপি’র ৩ নম্বর ইউনিট এ পরিবার কল্যান সহকারী হিসেবে কর্মরত এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের মোঃ কুবাদ আলীর মেয়ে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ৩৬ বছর বয়সে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই সরকারি চাকরি বিজ্ঞপ্তি আবেদন করেন কুবিরা এবং ২০১৮ সালে তিনি চাকুরীতে যোগদান করেন। তার আসল জন্ম তারিখ ১৬ জুন ১৯৮১। স্বামী: মো: জালাল, পেশা গৃহিণী। সরকারি চাকুরী বিধি অনুযায়ী বয়স বেশি হওয়ায় এখানেই ঘটে বিপত্তি। তথ্য গোপন করে পরিবার কল্যান সহকারী পদে চাকুরি নেন। তবে বয়স জালিয়াতি করে সরকারি চাকুরির খবর প্রকাশ পাওয়ায় জনমনে কঠিন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার কল্যান সহকারী পদে কুবিরা’র চাকুরী হওয়ার মাস চারেক পর কুবিরার নামে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন একই ইউনিয়নের শাহনাজ নামের চাকুরি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী এক প্রার্থী। পরবর্তীতে চাকুরি বাঁচাতে কুবিরা ও তার পরিবার বিষয়টি নিয়ে আপোষ মিমাংসা করে নেওয়ায় বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগের ভিত্তিতে মুঠোফোনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কুবিরা দাবি করেন, ছোট বেলায় বিয়ে হয় তার। কয়েক বছর পর স্বামী মারা যায় এবং তিনি পরবর্তীতে স্কুলে ভর্তি হয়ে এসএসসি ও এইচ এসসি পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে নিয়ম মেনে চাকরি পেয়েছেন তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ ভুল থাকায় তা সংশোধনও করেছেন বলে দাবি তার। উর্ধতন মহলের দৃষ্টি ফেরাতে এবং রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা করে সরকারি চাকুরি নেওয়ায় পরিবার কল্যান সহকারী কুবিরা’র চাকুরী বাতিল ও সরকারী টাকা কোষাগারে ফেরতের জন্য জোরালো দাবি করেছেন এলাকার সচেতন মহল। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ্- জোহ্ রা জানান, জন্ম তারিখ জালিয়াতি করে সরকারি চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে এক ইউপি সদস্যের দেওয়া অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য সমাজসেবা অফিসারকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পরে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপপরিচালক ড. কস্তুরী আমিনা কুইন জানান, জন্ম তারিখ জালিয়াতি করে সরকারি চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এটা ডিসি স্যার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আমি দেখলাম। এত বড় একটা জালিয়াতি কি করে হল। এনআইডিতে বয়স চেঞ্জ করে দিয়েছে যারা এটা একটা বড় অপরাধ। তারপরও নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াতে একটা ভেজাল মনে হচ্ছে। যেহেতু ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তির বিষয়। এব্যাপারে একটা তদন্ত করা হবে। সম্ভবত ডিসি স্যার ও এবিষয়ে একটি তদন্ত দিবেন বলেও তিনি মতামত দেন।