রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীতে উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এই দুর্ভোগ যেন কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর। উন্নয়নের ফেরিওয়ালা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর দ্বিতীয়বার মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহনের পর ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২৯৩১.৬২ কোটি টাকার রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পায়। যা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে একক সর্ববৃহৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে নগরীতে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে রাস্তা ও ফুটপাত। নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ও সড়কের সাথে ৪২ কিলোমিটার ফুটপাত ও ৬২.০৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে সিটি কর্পোরেশন। অথচ সেই উন্নয়নকে ধুলিসাৎ করে প্রতিটি ফুটপাত ও রাস্তা দখলে করে বসানো হয়েছে দোকান, গাড়ির গ্যারেজ, বিভিন্ন সংগঠনের অফিস বা ক্লাব। যার কারনে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে নগীরর জনজীবন।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হচ্ছে, দড়িখড়বোনা মোড় হতে নিউমার্কেট, কাদিরগঞ্জ চাউলপট্টি হতে মালোপাড়া, বাটার মোড় হতে সদর হাসপাতাল মোড়, তালাইমারি থেকে ভদ্রা, রেলগেট হয়ে লক্ষিপুর, ঘোষপাড়া মোড় থেকে ঝাউতলা মোড়, তালাইমারি থেকে কোর্ট বাজার, সিএন্ডবি মোড় থেকে শিশু একাডেমি, বাসটার্মিনাল থেকে আলুপট্টি, সিটি বাইপাস থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড়। প্রতিটি ফুটপাত পাঁয়ে হাটার আর অবস্থা নাই। তবে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ছে সাহেব বাজার এলাকা, কাদিরগঞ্জ চাউলপট্টি থেকে নিউমার্কেটের দুই পাস, উপশহর নিউমার্কেট থেকে উপশহর মোড়, সিএন্ডবি মোড়। এই ফুটপাতে বসেই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করছে খুদে ব্যবসায়ীরা। যাদের দিতে হয়না সরকারি কোন ট্যাক্স, কিন্তু গুনতে হয় দৈনিক চাঁদা বা মাশোহারা। এতে লাভবান হচ্ছে স্থানীয় নেতাকর্মী ও কিছু অসাধু পুলিশ অফিসার। আবার ফুটপাত দখল নিয়ে পথচারিরা কিছু বলতে গেলও লাঞ্চিত হতে হয় হরহামেশাই। তবে এই দখলদারিত্বের পিছনে সর্বোচ্চ শক্তির অন্তরালে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মী। শুধু তাই নয়, নগরী যে কয়টি কাঁচাবাজার রয়েছে, তার সবগুলো বসে ফুটপাত ও রাস্তার উপরে। সেই ফুটপাত ও রাস্তা বিক্রি করে মোটা ফাইদা লুটছে সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এসকল ব্যক্তির স্বার্থের কাছে বলি হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন, হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তবে এই দুর্ভোগের জন্য শুধু নেতাকর্মী ও পুলিশি দায়ী নয়, চরম উদাসিনতা রয়েছে রাসিকের। এই দুর্ভোগ নিরসনে কোন ভূমিকা নেই রাসিক কর্তৃপক্ষের। এদিকে নগরবাসির সাথে কথা বললে তারা বলছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত বিশ্বে রাজশাহী সিটি একটি রোলমডেল। তাই সকলের দাবী উন্নত বিশ্বের মত দখলমুক্ত ও নিরাপদ ফুটপাত প্রয়োজন। ফুটপাত দখল নিয়ে রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাদিয়া আফরিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, রাসিকের মাননীয় মেয়র মহোদয় সবেমাত্র দ্বায়িত্ব বুঝে নিলেন। ফুটপাতের বিষয়টি তার নলেজে আছে। এবার প্রথম সভায় ফুটপাতের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। এর আগেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়না। তরা আবার ফুটপাত ঘিরে ব্যবসা শুরু করে। আশা করছি খুব দ্রুত অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।