1. zillu.akash@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@dailynewsbangla.com : Daily NewsBangla : Daily NewsBangla
রাজশাহীতে অবৈধ পুকুর ভরাট হলেও নিশ্চুপ প্রশাসন - dailynewsbangla
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে অবৈধ পুকুর ভরাট হলেও নিশ্চুপ প্রশাসন

ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪

রাজশাহীতে অবৈধ পুকুর ভরাট হলেও নিশ্চুপ প্রশাসন

রাজশাহী ব্যুরো : রাত যখন ঠিক ১০ টা, তখন থর থর করে কাঁপছে রাস্তা। ভঁ ভঁ শব্দ করে ছুটে আসছে দানবাকৃতির বালু ভর্তি ড্রাম ট্রাক। কখন নামবে বালু, সেই অপেক্ষা করছে পেলোডার (বালু ঠেলা) মেশিন। কারন, দ্রুত পুকুর ভরাট করতে পারলেই পকেটে আসবে মোটা টাকা। ঘটনাটি রাজশাহী মহানগরীর দায়রাপাক মোড় সংলগ্ন মেহেরচন্ডি মৌজার কলমি পুকুরের। এমন কর্মযজ্ঞে যখন কিছু মানুষ ব্যস্ত, ঠিক তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা। । সেখানে দ্বায়িত্বরত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, এই অবৈধ কাজের ঠিকা (কন্টাক্ট) নিয়েছেন লালন নামের একজন। এরপর লালন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানায়ায়, লালন রাজশাহী মহানগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডের বুধপাড়া মহল্লার মৃত: হামুর ছেলে। সে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড শাখার নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। লালন স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর কমিটির সাবেক সদস্য হিসেবে ছিলেন। তবে পুকুরটির বিষয়ে খোঁজ নিতেই বেরিয়ে আসছে ঝাঁঝাঁলো গন্ধ। সেখানে বলা বলি হচ্ছে এটি ডিসি এসপি’র পুকুর, কোন লাভ হবেনা। আপনার এসেছেন, লালন ভাইয়ের সাথে কথা বলেন সব টিক হয়ে যাবে। এরপর পুকুরের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পুকুরের মালিক নাটোর জেলার গোলাম মাওলা নামের কোন এক ব্যক্তি। কিন্তু আরএস খতিয়ানে নাম রয়েছে জজুরা বিবি। পুকুরটি প্রায় ৮ বছর যাবত লীজ চুক্তিতে মাছ চাষ করে আসছে মেহেরচন্ডির এলাকার শমসের আলীর ছেলে টুটুল। সে পূর্বের চুক্তি শেষ করে আবারও ৩ বছরের চুক্তি করেছে গোলাম মাওলার সাথে। দুই বছরের অগ্রীম টাকাও দিয়েছেন ৫ লক্ষ। কিন্তু লীজচুক্তির মেয়াদ শেষ না হতেই পুকুরটি সেই ঝাঁঝাঁলো (প্রভাবশালী) ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন, কে বা কারা এই প্রভাবশালী ব্যক্তি?? এর অনুসন্ধানে কাজ করছে মিডিয়াকর্মীরা। মাছ চাষকারি টুটুলের বাবা শমসের আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, পুকুরটি ব্রিটিশ আমলের। এই পুকুরটি আগে আমি চাষ করতাম, এখন আমার ছেলে করে। আশে পাশে আর কোন পুকুর না থাকায় এই পুকুরের পানি দিয়ে পরিবারের দৈনন্দিন কাজ সারেন এখানকার সাধারণ মানুষ। এখানে সকল বয়োবৃদ্ধরা গোসল ও পরিবারের কাজ করে থাকেন। এই পুকুরে ১০-১৫ লক্ষ টাকার মাছ রয়েছে। অথচ আমাদের কোন সুযোগ না দিয়ে একটি চক্র রাতারাতি পুকুরটি ভরাট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যারা ভরাট করছে তারা বলছে এটি নাকি ভিটা জমি! আমার ছেলে থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও তার অভিযোগ গ্রহন করেননি চদ্রিমা থানা। চক্রটি আমাদের মাছ ধ্বংস করছে, আর থানা আমাদের বলছে, আপনারা এসিল্যান্ডের কাছে দরখাস্ত দেন। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা হতাশ হয়েছি পুলিশের এমন ব্যবহারে।


এরপর পুকুরের কাগজপত্র খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুকুরটির সিএস খতিয়ান নাম্বার ৬৪৬। সেখানে উল্লেখ রয়েছে জমিটির ধরন পুকুর। যার জে, এল, নং ১২০, দাগ নাম্বার ১৫৩০। এরপর এসএ ও আরএস খতিয়ানেও জমির ধরন রয়েছে পুকুর। আরএস খতিয়ান নাম্বার ৪৮৮। যার জে, এল নং ১৩৭, দাগ নাম্বার ২৪৭৮। প্রশ্ন হলো, তাহলে ভিটা হলো কিভাবে?
এদিকে, ২০০০ সালের জলাশয় সংরক্ষণ আইনের এর ২ (চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাশয়ের সংজ্ঞাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত মামলার রায় পাওয়ার এক বছরের মধ্যে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিবকে এ আদেশটি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। গেজেট প্রকাশের পর ব্যক্তি মালিকানার পুকুরও চাইলেই ভরাট করে ফেলা যাবে না স্পষ্ট উল্লেখ করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত রায়ে বলা হয়, পরিবেশ আইন-১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর বিধান অনুসারে যে কোনও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পুকুর হলেও তা জলাধারের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা ভরাট করা যাবে না।

কিন্তু এই নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ঝাঁঝাঁলো গন্ধে স্বীক্ত হয়ে মধ্যরাতে ছুটে যাচ্ছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটনের চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাত একটা থেকে দেড়টার দিকে ওসি গিয়ে নির্দেশ দিচ্ছে পুকুর ভরাটের জন্য। যত যাই হোক তিনি দেখে নিবেন বলে ভরাটকারিদের আশ্বস্ত করছেন!! ওসি’র এহেন কার্যক্রমে প্রশ্ন থেকেই যায়, কোন স্বার্থে আর কাকে তুষ্ট করতে ওসি এমন দ্বায়িত্ব নিচ্ছেন? সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রতি রাত মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই কাজে সহযোগিতা করছেন ওসি সাহেব। শুধু এই পুকুর নয়, বুধপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন আরেক পুকুর ভারাটের কন্টাক্ট করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ইতমধ্য অর্ধেক টাকা নিয়েছেন, বাঁকি টাকাও পর্যায়ক্রমে দিবে পুকুর ভরাটকারি সাদ আলী। সাদ আলী বিএনপি সমর্থক হওয়ায় কারো কাছে মুখ খুলছেন না।
তবে চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি তাদের নিষেধ করতে করতে হাফিয়ে গেছি, আপনারা ইউএনও, এসিল্যান্ড, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমান করান। আমার কথা তারা শুনছেনা।
পরে বোয়ালিয়া থানার সহকারি কমিশনার (ভূমি) জুয়েল আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি সবেমাত্র এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ খবর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুকুর ভরাট বন্ধে সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন এর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, জমির কাগজপত্র দেখতে হবে। সরকারি বা মালিকানা পুকুরও ভরাটে হাইকোর্টের নিষেধ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনের বাইরে কাজ করার সুযোগ নাই। আমি ছুটিতে আছি ঈদের পরে বিষয়টি দেখা হবে। তবে জেলা প্রশাসক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, ভরাটের বিষয়ে তিনি জানেন না।
বি:দ্র: তাহলে কি এভাবে রাতারাতি জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে সকল পুকুর ভরাট করা হবে

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ