জিল্লুর রহমান, ডেইলি নিউজ বাংলা ডেক্স: তৃতীয় দফায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু শান্তিপুর্ন ভাবে ভোট গ্রহন হয়। ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। রবিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন পরিষদে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতেই নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হন। চারটিতে আওয়ামী লীগ, ৯টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) এবং একটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন, মেম্বার পদে ৬২৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ১৭৪ জন প্রার্থী অংশ নেন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৭ জন। শেষ মুহূর্তে এসে অনেকটাই বদলে যায় আলোচিত এই নির্বাচনের হিসাব নিকাষ।
উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র হোগলবাড়িয়া ও আড়িয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা গেলেও অন্য ইউনিয়নগুলোয় স্বাভাবিকভাবে ভোটগ্রহণ চলে। আড়িয়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদ আনছারী বিপ্লবের লোকজন ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। সেখানকার একটি কেন্দ্রে নৌকায় জাল ভোট দিতে গিয়ে এক যুবক আটক হন। প্রাগপুর মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুলের পক্ষে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটে।
অনেকে বলছেন, চৌধুরী পরিবারের রাজনৈতিক ইজ্জত রক্ষার জন্যই শেষমেষ কেন্দ্র দখলের পথ বেছে নেন সেলিম চৌধুরী। তবে নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। শঙ্কার পরিবর্তে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসবমুখরতা লক্ষ্য করা যায়।
সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। তাদের মধ্যে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেল ৪টার নির্ধারিত সময়ের পরেও কর্মজীবীদের অনেকে ভোট দিতে গিয়ে ফিরে আসেন। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এ রকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে অন্য রকমের উৎফুল্লভাব প্রকাশ করেন ভোটাররা।
সবাই বলছেন, সার্বিকভাবে অনেকদিন পর অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন উপহার দিল প্রশাসন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ১৯ হাজার ৫৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অটোরিকশা প্রতীকে স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নেয়া বিএনপি নেতা বিল্লাল হোসেন নির্বাচন বর্জন করে ৪ হাজার ৬৭৭ ভোট পান। দৌলতপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যার মহিউল ইসলাম ৮ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী জহুরুল আলম মোটরসাইকেল প্রতীকে ৭ হাজার ৪৫৭ ভোট পান।
প্রাগপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ৯ হাজার ১৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী শহিদুল ইসলাম আনারস প্রতীকে ৮ হাজার ৭৪৫ ভোট পান। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল ৭ হাজার ৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদের আজিজুল হক মশাল প্রতীকে পান ৬ হাজার ৮২৬ ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মথুরাপুর ইউনিয়নে মনোয়ার কবীর মিন্টু আনারস প্রতীকে ৮ হাজার ৫৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার হাসিম উদ্দিন নৌকা প্রতীকে ৩ হাজার ৫৬২ ভোট পান। ফিলিপনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু চশমা প্রতীকে ৭ হাজার ১৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম ফজলুল হক নৌকা প্রতীকে ৪ হাজার ৫৯৩ ভোট পান। মরিচা ইউনিয়নে জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ৩ হাজার ৬৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী জোয়াদুর রহমান চশমা প্রতীকে ৩ হাজার ১৩৭ ভোট পান। এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৮৬৯ ভোট। চিলমারী ইউনিয়নে আব্দুল মান্নান মোটরসাইকেল প্রতীকে ৭ হাজার ৮৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ আহম্মেদ পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৬১ ভোট। পিয়ারপুর ইউনিয়নে সোহেল রানা চশমা প্রতীকে ৯ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
এখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র হয়ে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীকে ৯ হাজার ৫২১ ভোট পান। এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ লালু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৩৩৭ ভোট। রিফায়েতপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোটরসাইকেল প্রতীকে ৬ হাজার ৬৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু নৌকা প্রতীকে পান ৫ হাজার ৬৩০ ভোট। আদাবড়িয়া ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের আব্দুল বাকী ১০ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন নৌকা প্রতীকে পান ৫ হাজার ৭৪৯ ভোট। খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নে জুলমত হোসেন ৫ হাজার ৬৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বিশ্বাস নৌকা প্রতীকে পান ৩ হাজার ৫৮৬ ভোট। আড়িয়া ইউনিয়নে হেলাল উদ্দীন ১০ হাজার ২৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদ আনছারী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৬১ ভোট। এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের এই ভরাডুবির জন্য দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করছেন। তারা বলছেন, বর্তমান চেয়ারম্যানদের কর্মকান্ড নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন থাকা সত্বেও পুনরায় এই নির্বাচনে তাদের সবাইকে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করার খেসারত দিতে হলো এমন লজ্জাজনক পরাজয়ের মাধ্যমে। নতুনদের হয়ে ভোটাররা তাদের প্রত্যাখ্যান করে সমুচিত জবাব দিয়েছেন।