রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: করোনা পরিস্তিতিতেও বিভিন্ন বয়সের একঝাক নারী ব্যস্ত কর্মযজ্ঞে। এদের মধ্যে একদল করছে কাটিং, আরেক দল করছে প্রিন্ট আবার আরেকদল করছে সেলাই। আর এভাবেই নীলফামারীর সৈয়দপুরে নারীদের হাতের ছোঁয়ায় পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে শপিং ব্যাগ, টিফিন ক্যারিয়ার ব্যাগ, স্কুলব্যাগ, ডলব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগ, লন্ড্রি ব্যাগ, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্টসসহ বিভিন্ন দ্রব্য।
নারী শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের গড়ে তোলা সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি পাটজাত এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। তবে রপ্তানি নির্রভশীল হওয়ায় অর্ডার না থাকাকালীন তাদের কর্মহীন অসহায় জীবন-যাপন করতে হয়। তাই অভ্যন্তরীন বাজার সৃষ্টি হলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এ সমস্যা সমাধান হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে কানাডা ও ইউএসএ ভিত্তিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ম্যানোনাইট সেন্ট্রাল কমিটির (এমসিসি) অধীনে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চটের ব্যাগ ও কার্ড তৈরির কাজ শুরু করেন এ অঞ্চলের অসহায় নারীরা।
তারা ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের শুধু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে মজুরি পেতেন। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে নারীরা বেকার হয়ে পড়েন। পরে ১৯৯৫ সালে তাঁরা সবাই মিলে সঞ্চয়ের টাকায় গড়ে তোলেন সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ নামের ওই সংস্থা। ১৬ শতক জমিতে ছয়তলার ভিত্তি দিয়ে পাঁচতলার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখানে শতাধিক নারী উদ্যোক্তা শ্রমিক নিরলসভাবে তৈরি করছেন চটের রকমারি ব্যাগ। ভারী কাজের জন্য রয়েছে স্বল্প সংখ্যক পুরুষ শ্রমিকও রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। এখানে কাজ করে নারীরা সংসারে অভাব-অনটন দূর করে এনেছেন সচ্ছলতা।
ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আসলিমা বেগম (৪৭)। তাঁর স্বামী আরমান হোসেন অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন গত ৫ বছর আগে। থাকেন গোলাহাটের অবাঙালি ক্যাম্পে। তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম ছোট ছোট চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে।
এখানে কাজ করার পর থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পেয়ে থাকি। সেই টাকায় সংসার চালাচ্ছি। শহরের সাহেবপাড়ার আমিন মোড় এলাকার নাছিমা খাতুন (৪০) কাজ করেন এই ব্যাগ তৈরির কারখানায়। তাঁর আরিফুল ইসলাম লন্ড্রির কাজ করেন। তিনি বলেন, তাঁর সংসারে অভাব বলে বর্তমানে কিছু নেই। এখানে কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছেন ও আয়ের টাকায় বসতভিটাও কিনেছেন তিনি। সরকারের সহযোগিতায় ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত পাটপন্য প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে ভিন দেশীদের দৃস্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাটপণ্য প্রদর্শনী ২০১৬-এ অংশ নিয়ে ‘সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ’ জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা স্মারক লাভ করে। সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন গিয়াসউদ্দিন (৫৫)। স¤প্রতি তিনি এই প্রতিষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক পদ
হতে অবসর গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ক্রেতাই বিদেশি, সে কারণে তাদের ইচ্ছানুযায়ী চটের ব্যাগ তৈরি করে সরবরাহ করে থাকি। মহাব্যবস্থাপক মাসুম ইবনুল হক খান বলেন, এখানে যাঁরা কাজ করেন, সব নারীই উদ্যোক্তা ও শ্রমিক। এখানকার সব পন্য বিদেশী ক্রেতাদের দেওয়া চাহিদা ও ডিজাইন অনুসারে তৈরি করা হয়। বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা না থাকলে ওই সময় অসহায় দরিদ্র নারীদের আয়-উপার্জন বন্ধ থাকে। এ ক্ষেত্রে তিনি পাটপন্যে বাংলাদেশী ক্রেতাদের বিনিয়োগের আহবান জানান।