নুরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধি: মণিরামপুরের দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কে অসামাজিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী আতাউর রহমান নারীসহ জনতার হাতে আটক। আটকের পর তাকে মারপিট করে স্কুল কক্ষে আটকিয়ে রাখা হয়।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ন’টার দিকে পুলিশ সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় আতাউরসহ ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আতাউরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা করানো হয়। রাতেই ওই নারী বাদি হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় আতাউরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ দিকে চাকুরি থেকে আতাউরকে বহিষ্কারের দাবিতে এলাকাবাসী মঙ্গলবার স্কুল ঘেরাওয়ের পর বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আতাউর শ্যামনগর গ্রামের আলী মুনছুরের ছেলে।
জানাযায়, পিয়ন কাম নৈশ প্রহরী আতাউর রহমান সোমবার রাত ৭টার দিকে এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীকে নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে অসামাজিক কার্মকান্ড করছিল। এ সময় স্কুলের পাশেই শ্যামনগর বাজারে চলছিল নির্বাচনী সভা। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখান থেকে উত্তেজিত জনতা গিয়ে নারীসহ আতাউরকে আটক করে। পরে আতাউরকে বেধড়ক মারপিট করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে।
এসময় ওই নারীসহ তাকে একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে স্কুল মাঠে হাজরো জনতা বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ন’টার দিকে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে নারীসহ আতাউরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ পরে আতাউরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা করান। রাতেই ওই নারী বাদি হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে আতাউরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই নারীর অভিযোগ করেন সোমবার বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে রওনা হন মণিরামপুরে যাওয়ার জন্য। স্কুলের কাছে পৌছলে আতাউর তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে বিদ্যালয়ের কক্ষে ধর্ষণ করে।
ওসি (তদন্ত) গাজী মোঃ মাহাবুবুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার সকালে ওই নারীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ ইতোমধ্যে আতাউরকে আদালতে চালান দিয়েছে। এ দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন ওই নারীর সাথে আতাউরের দীর্ঘদিন পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ওই নারীর বিভিন্ন এলাকায় তিনটি বিয়ে হয়েছিল।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম এবং প্রধান শিক্ষক রুবিনা ইয়াসমিন জানান, ২০১৬ সালে আতাউর রহমানকে চুক্তিভিত্তিক পিয়ন কাম নৈশ্য প্রহরীর পদে চাকুরি দেওয়া হয়। কিন্তু ইতোপূর্বে বিদ্যালয়ে অনুরূপভাবে নারী কেলেংকারির অভিযোগে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে সে পুনরায় চাকুরি ফিরে পায়।
এলাকাবাসী জানান, আতাউরের অত্যাচারে কয়েক গ্রামের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আতাউর নিজেকে পুলিশের কথিত সোর্স পরিচয় দিয়ে বহু নিরীহ মানুষকে হয়রানি করেছে। এছাড়া সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তিনি অনেকের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে অর্থ হাতিয়েছেন।
এ দিকে আতাউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার বাবলুর রহমান। এ সময় আতাউরকে চাকুরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে অভিভাবকসহ এলাকাবাসী স্কুল ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে সহকারি শিক্ষা অফিসার বাবলুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক রুবিনা ইয়াসমিন উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেহেলী ফেরদৌস জানান, আতাউরকে চাকুরি থেকে বহিষ্কারের জন্য অফিসিয়ালী প্রক্রীয়া শুরু হয়েছে।