ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ , আজকের সময় : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

ইটভাটার পেটে কৃষি জমি ফের অবৈধ ইটভাটা চালু

মো.আককাস আলী,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলে শস্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁয় ইটঁভাটার পেটে কৃষি জমি। এ’অঞ্চলে গড়ে উঠেছে কৃষি জমিতে অবৈধ ইটঁভাটা। ওইসব ভাটাগুলো উচ্ছেদ করে কৃষকরা তিন ফসলি জমি রক্ষার দাবি জানালেও আইনের তোয়াক্কা না করেই বিগত বছরের ন্যায় এবারও ইট তৈরি শুরু করেছে ভাটা মালিকরা।

ওইসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই অধিকংশের। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও নিবন্ধনহীন ভাটাগুলো উৎপাদনে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ইট তৈরির শেষ মহুর্তের প্রস্তুতি চলছে।

ইটভাটা মালিকরা বলছেন, নিবন্ধন না থাকলেও তারা মূল্য সংযোজন কর, আয়কর দেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন। প্রশাসন বলছেন, যে কোনো অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে তারা তৎপর। এ ছাড়া ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসটিআইসহ সরকারি কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। কাগজে-কলমে এমন নিয়ম থাকলেও তা মানতে নারাজ ইটভাটা মালিকরা।

প্রশাসনের কঠোরতার অভাবকে পুঁজি করে অবৈধ ইটভাটা চলছে বছরের পর বছর। বেসরকারী এক হিসেব মতে, একটি ইটভাটা প্রতি মৌসুমে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে থাকে। গড়ে এক ফুট গভীরতায় মাটি কাটা হলে একটি ভাটার জন্য বছরে মাটির প্রয়োজন হয় ১৫-১২ একর জমির। সেই হিসেব অনুযায়ী উপজেলার ২০টি ইটভাটার জন্য বছরে ৩০০ একর জমির মাটি কাটা হয়। ইট উৎপাদন শুরুর আগেই অবৈধ ভাটাগুলো উচ্ছেদ করে কৃষিজমি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্টরা দৃশ্যমান কোনই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাদের রহস্যজনক নীরব ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাইসেন্স ছাড়াই উপজেলা সদর, নাটশাল, খাজুর, লক্ষণপুর, বাগডোব, হাট চকগৌরীসহ বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠেছে প্রায় ২০টি ইটভাটা। ইট তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি।

এসব ভাটার কারণে শুধু পরিবেশের বির্পযয় ও ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে তাই নয়, ধুলাবালুতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়া আত্রাই নদীর বাধও যাচ্ছে ওইসব ভাটার পেটে। আবার কয়েকটি ভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানো হয়। ইট ও মাটি পরিবহনের কাজে কাজে প্রায় ২০০টি অবৈধ ট্রাক্টর ব্যবহার করছেন ভাটা মালিকরা।

ট্রাক্টরের বিশাল চাকার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও মহাসড়ক। এব্যাপারে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম সরকার জানান, সমিতির সদস্যদের লাসসেন্স নবায়ন নেই। মালিকদের আইন মেনে ইট বানাতে বলেছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপন ও জমির উপরিভাগের মাটি কাটার ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এটি বন্ধে তাদের হাতে কোনোই ক্ষমতা নেই। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে অবৈধ ভাটা পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেন।

তিনি জানান, মহাদেবপুরের কোনো ইটভাটারই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। তাদের বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসককে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র দিয়েছেন। ইউএনও মিজানুর রহমান মিলন জানান, অভিযোগ পেয়েছেন দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ কমিটির সভাপতি হারুন-অর-রশিদ জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।