ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বুধবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২২ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

দৌলতপুরে ৬ মাসেও সন্ধান মেলেনি ভাতাভোগীর কোটি টাকা

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকা গায়েবের ৬ মাসেও কোন সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের প্রেরিত অভিযোগ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবার পর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সমাধানের আশ্বাস দিলেও শুধুমাত্র অভিযোগকারী কিছু ভাতাভোগী ২/১ জনকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার স্থলে ১ হাজার করে টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।

কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে সিংহভাগ ভাতাভোগীদের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর এনফোর্সমেন্ট কমিটি কর্তৃক গৃহীত অভিযোগ তদন্ত কালে এই দুর্নীতির হোতা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান কে সতর্ক করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। ফলে, দৌলতপুরের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকা গায়েবের ঘটনা অধরাই থেকে গেল।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২০/২০২১ অর্থবছরে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নতুন করে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ও দলিত হরিজন ভাতা প্রাপ্ত হিসাবে নিবন্ধিত হন। এজন্য ২০২১ সালের জুন মাসে তাদের মোবাইল ব্যাংকে সরাসরি টাকা প্রেরণের জন্য এম,আই,এস সম্পন্ন হয়। কিন্তু অদ্যবধি তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে কোন টাকা আসেনি।

এ ব্যাপারে তারা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিলে জানানো হয় তাদের টাকা অন্য নাম্বারে টাকা চলে গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন ভাতা ভোগীদের এম,আই,এস সম্পন্ন করেছিল সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার তরিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান এবং সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজ।

ভাতাভোগীরা জানিয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজ এর যোগ সাজসে আমাদের মোবাইল নাম্বার আপলোড না করে তাদের নিয়ন্ত্রিত মোবাইল নাম্বার আপলোড করে সমুদয় টাকা তুলে নিয়েছেন।

ফলে, তাদের মোবাইলে কোন টাকা আসেনি। হোগলবাড়িয়া ইউপির চরদিয়াড় গ্রামের ভাতাভোগী ৮০ বছরের বৃদ্ধ হোসেন মন্ডল, ইন্তাদুল, মাজু ও রাহেদ ঘোষ, প্রতিবন্ধী শাকিল ও মাহাতাব বলেন, এম,আই,এস সিস্টেম হবার পর তারা সহ এই ইউনিয়নের প্রায় ৭ শতাধিক ভাতাভোগী কোন টাকা পাননি।

উল্লেখ্য যে, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান একই উপজেলার প্রাগপুর ইউপির ময়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৯/২০২০ অর্থবছরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থাকাকালে তার বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগ উঠে এবং সে সময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে তা প্রকাশিত হয়।

দৌলতপুর আসনের সাংসদ সরওয়ার জাহান বাদশা‘র প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের আত্মীয় হিসাবে এমপি সাহেবের তদ্বিরে তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের গত ৭ জানুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে ৪১,০১, ০০০০, ০০৮, ১৯, ০০৫, ১২, ১৫ আদেশে দৌলতপুরে বদলী হয়ে আসেন। একাধিক সুত্র জানায়, নানা ধরণের দুর্নীতি অনিয়মের উদ্দেশ্যেই আতাউর রহমান কে দৌলতপুরে বদলী করে আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশা‘র সেল ফোনে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের নিকট জানতে চাওয়া হলে সমাজসেবা কর্মকর্তা তার আত্বীয় নন বলে দাবী করেন।

তিনি আরো জানান, তিনি এমপি সাহেবের প্রতিনিধি হিসাবে ভাতাভোগীদের সহায়তা করেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন জানান, আমরা শুনেছি দুদক বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে দুদক যে প্রতিবেদন দিবে তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।