ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বুধবার, ১১ মে, ২০২২ , আজকের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে বৃষ্টি দশমিনায় ফসলহানির আশঙ্কা

 

মোঃবেল্লাল হোসেন
দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর দশমিনায় ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ প্রভাবে তিন দিনের বৃষ্টিতে কৃষকেরা তাঁদের রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। এর আগে গত রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় অশনি দ্রুত শক্তি বাড়াচ্ছে। তাই বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হওয়ার আগেই বোরো ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মঙ্গলবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম—মধ্য বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ—পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ অশনি উত্তর—পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম—মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন অবস্থান করছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে অশনি চট্টগ্র্রাম সমদ্রবন্দর থেকে ১হাজার ১শ’ ৩০কিলোমিটার দক্ষিণ—দক্ষিণ—পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১হাজার ৮৫কিলোমিটার দক্ষিণ—পশ্চিমে, মোংলা সমদ্রবন্দর থেকে ১হাজার ৫কিলোমিটার দক্ষিণ—পশ্চিমে, পায়রা সমদ্রবন্দর থেকে ১হাজার ৫কিলোমিটার দক্ষিণ—পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর—পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হতে পারে। প্রবল ঘূর্নিঝড় কেন্দ্রের ৬৪কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বচ্চ গতি বেগ ঘন্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিপৎসংকেত বাড়লে উপজেলা প্রশাসকের দুর্যোগবিষয়ক সভা করে পরবর্তী প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই দশমিনায় বৃষ্টি হচ্ছে। গত রোববার সারা দিন ভ্যাপসা গরম থাকলেও সোমবার থেকে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কৃষকেরা রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ফসলের মাঠগুলোতে মুগ ডাল, আলু, চীনাবাদাম ও বোরো ধান রয়েছে। এর মধ্যে মাঠে থাকা ৮০ ভাগ ধান কাটার উপযোগী হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কার্যালয় জানিয়েছে, উপজেলায় ১৪৮টি স্কুলকাম আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৬৫হাজার মানুষের পাশাপাশি ২০ হাজার গবাদিপশুও রাখা যাবে।

উপজেলা উত্তর লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক মো.আকবর এবার ১ একর জমিতে চীনাবাদাম আবাদ করেছেন। তবে গত তিন দিনের বৃষ্টিতে সে চিন্তায় পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আসবে বলে শুনেছি। একই গ্রামের অণ্য চাষি বিজয় চ বলেন, আমি ৫একর জমিতে মুগডাল, ৫৩শতাংশ জমিতে বাদাম আর ১ একর জমিতে মরিচ চাষ করেছি। গত কয়েক দিন শ্রমিক সংকট ছিলো ডাল ঘরে তুলতে পারিনি। কিন্ত এ বৃষ্টিতে আমার সব শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. জাফর অহাম্মেদ বলেন, এ উপজেলার দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ফসল কাটার উপযোগী হয়েছে। বৃষ্টিপাত যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তাই কৃষকদের দ্রুত বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর এ উপজেলায় ১৩হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ হয়েছে তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বোরো ধান বা রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেল্লাল বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১৪৮ টি আশ্রয়ন কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।সিপিপি সদস্য সহ রোভার ও বয়স্কাউট মাঠে রাখা হয়েছে । উপজেলায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে এলার্টটিম গঠনসহ উপজেলায় কন্টলরুম খোলা হয়েছে।