সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের সালথায় পাটের বাম্পার ফলন পানির অভাবে জাগ নিয়ে শঙ্কায় পাটচাষিরা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি জমি অকৃষিতে পরিনত হওয়া, স্বল্প সময়ে জমিতে অধিক ফসল ফলানোর প্রবনতা, পাট পঁচনের পানি সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সোনালি আঁশ পাট চাষ যেন এখন কৃষকের অনিহা আর অবহেলার একটি অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু পাটের সঠিক দাম না থাকায় বিপাকে পড়েছে পাট চাষীরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাটচাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পাট ছড়ানো পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ১ বিঘা জমিতে গড়ে ৮ থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫ শত টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে বাজার মূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ১৩ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ-আবাদ এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১২ হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হলেও এবার ১৩ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে গত বছরের লক্ষ্যমাত্রায় এবার বেশি অর্জিত হয়েছে।
এদিকে অল্পসংখ্যক কৃষক যারা পাট চাষ করছেন, জৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ও এলাকার বেশিরভাগ খাল, বিল শুকিয়ে যাওয়ায় চিন্তিত কৃষক। পানি না থাকায় পাট পচানো নিয়ে শঙ্কায় কৃষক, এতে পাটের গুনগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের পুরুরা গ্রামের কৃষক পলাশ জানান, বর্তমানে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা ৫ শত টাকা থেকে ৬ শত টাকা। এক বিঘা জমির পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে যে পরিমাণ দিনমজুর লাগে তাতে পুর্বের খরচ মিটিয়ে মণপ্রতি পাটের দাম পড়ে ২ হাজার টাকার উর্দ্ধে। আবার পাট পচনের খালবিল গুলোর মধ্যে প্রায় সব খালেই অধিকাংশ সময় পানি থাকেনা, আবার কোনো কোনো খালগুলোতে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশংকায় পাট জাগ দেয়া ও আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হয় তাই পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই তাদের। প্রতিবছর মনপ্রতি পাটের বাজার মূল্য ২ হাজার থকে ২ হাজার ৫ শত টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
রামকান্তপুর ইউনিয়নের হাবেলি গ্রামের কৃষক আজিজ বলেন, গত দু,বছর থেকে ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে পাট জাগ দেয়া ও পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাই এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাকসবজি ও মরিচের চাষ করি এতে পরিশ্রম কম লাভ বেশি।
এ ব্যাপারে উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারি বলেন, সব মিলে উপজেলায় বিজেআরআই-৮ ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এ বছর সালথা উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে তারমধ্যে ৫০০ হেক্টর জমিতে রবি-১ আছে যা আমাদের লক্ষ মাত্রার অনেক বেশী। তাছাড়াও রবি ১ বীজের জন্য কৃষকের এখন দিন দিন আগ্রহ বাড়াচ্ছে আশাকরি আগামী বছর রবি ১হাজার হেক্টর বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, উপজেলায় মোট আবাদি জমির ৯২ শতাংশ। লক্ষমাত্রার চেয়েও আবাদ বেশি হচ্ছে অর্থকরী ফসলটির। মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। রোগ ও পোকা-মাড়ক দমন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আন্ত:পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে মাঠ পর্যায় কাজ করছেন উপ-সহকারী কর্মকর্তাবৃন্দ। আশা করছি আশানুরূপ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
Print [1]