
কাজী মোস্তফা রুমি, স্টাফ রিপোর্টার: ১৬ জুলাই আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস। দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের এ দিনে তাকে গ্রেফতার করে।
১৬ জুলাই ২০০৭ ভোরে সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলাকালে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগে ধানমন্ডির বাসভবন সুধা সদন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর তনয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়।
কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেখান থেকে শেখ হাসিনাকে সরাসরি জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে স্থাপিত সাব জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বছরই ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
এ সময় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের শাসন ভার গ্রহণ করে। এর কিছুদিন পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়। তিনি বিদেশে অবস্থানকালে তার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এক পর্যায়ে সরকার তার দেশে ফেরার অনুমতি দেয়। দেশে ফেরার কিছু দিন পর শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে কারাবন্দি অবস্থায় শেখ হাসিনা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন কারাগারের মধ্যেই তার চোখ কানসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা চলতে থাকে।
গ্রেপ্তার হওয়ার প্রাক্কালে আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে দলের নেতা কর্মীরা শেখ হাসিনার মুক্তি এবং নির্বাচনের দাবিতে সংঘটিত হতে থাকে।
সরকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়ে প্রতিবাদ ও ধীরে ধীরে আন্দোলন গড়ে তোলে।
দলের সভাপতির অনুপস্থিতি ও প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখেন এবং নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান।
আবার কারাবন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজেও বারবার দলের নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তার আইনজীবী ও চিকিৎসকেরা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের মাধ্যমে তিনি দলকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে নেতাদের কাছে বার্তা পাঠান।
অনেক ক্ষেত্রে বন্দি সভাপতি শেখ হাসিনার পরামর্শ নিয়েই দল পরিচালনা ও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সময় কারা অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেন। জরুরি অবস্থার মধ্যে দেশজুড়ে আওয়ামীলীগের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জামিনে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। প্রায় ১১ মাস কারাবন্দি থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন জামিনে মুক্তি পেয়ে শেখ হাসিনা পরদিন চিকিৎসার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র যান।
চিকিৎসা শেষে ৬ নভেম্বর দেশে ফেরেন তিনি। প্রথমে তাকে ৮ সপ্তাহের জামিন দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফায় জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। দেশে ফিরে শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় পায়।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করা হয়। ওই সরকারের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় বার সরকার গঠন করে এবং বর্তমানে শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
Print [1]