কাজী মোস্তফা রুমি, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধুবড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বলারামপুর ডিজিটাল বাজার এলাকার অস্তিত্ব প্রায় হুমকির মুখে দাড়িয়েছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত-বাড়ি, ফসলি জমি সহ বিস্তির্ণ এলাকা। নদীর এমন ক্রমাগত ভাঙনে চরম দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে বলারামপুর এলাকাবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধুবড়িয়া ইউনিয়ন সদর এলাকা থেকে বলারামপুর এলাকা খুব বেশি দূরত্ব না হলেও যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজেহাল। মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত উপযোগী সড়ক নেই সেখানে। পায়ে হেটে বলারামপুর ডিজিটাল বাজারে গিয়ে দেখা যায় বাজার থেকে মাত্র ৫ মিনিট পথের দূরত্বেই যমুনা নদী। অশ্রুসিক্ত মানুষগুলো কেউ ভিটে-বাড়ি সরানোর কাজে ব্যস্ত, কেউ তাকিয়ে আছে নদীর দিকে ! নদী প্রস্থে বাড়ার ফলে বলারামপুর বিদ্যালয় নিকটে চলে আসার উপক্রম। ভাঙন থেকে বাঁচতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এবারের বন্যায় প্রায় শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যদি এই কষ্ট ও দুর্দশা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপলব্ধি করতেন, তাহলে তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। তারা নদী ভাঙনের কষ্টের বাস্তবতা থেকে যোজন যোজন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। আরো কত ঘর-বাড়ি এবার নদীগর্ভে বিলীন হবে তা অনুমান করা যাচ্ছে না। এছাড়াও প্রতিবছর বন্যার মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলার মতো সান্তনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে স্থায়ী ভাঙন বন্ধ করা সম্ভব নয়। এখানে এক স্থানে ভাঙন বন্ধ হলে আরেক স্থানে ভাঙন শুরু হয়। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, বস্তায় উপকার হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে শুধু টাকাই নষ্ট। ভাঙন যা হওয়ার তাই চলমান থাকে। দুই পাড় উজাড় করে যমুনা নদী ক্রমাগত প্রস্থে বেড়েই চলছে।
স্থানীয় বৃদ্ধ লতিফ মিয়া ক্ষোভ নিয়ে বলেন, দপ্তিয়র নিশ্চিন্তপুরে কিছু এলাকায় বালু ভরা বস্তা ফালানো হলেও আমাদের বলারামপুর এলাকার এই দিকে কিছুই করে নাই। আজকে বিকেলে এক কবর থেকে লাশ বের হয়ে গেছে মাটি নদীতে সরে গিয়ে। সবাই ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে।
আরেক বাসিন্দা কবির জানায়, নদী প্রায় বলারামপুর বাজারের কাছেই চলে আসছে। আজ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিরা কেউ কোনো বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। এই নদী কখন কী করে, বলা কঠিন। কোনো অনুমানই খাটে না।
ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শাকিল বলেন, আমি কয়েকদিন আগেই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বর্তমানে পরিষদে কোনো বাজেট নেই। আমি উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি তারা ঈদের পর ব্যবস্থা নিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান মুঠোফোনে জানায়, ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে লিখিত ভাবে ভাঙন সমস্যা সম্পর্কিত কিছু অবহিত করে নাই। চেয়ারম্যান মৌখিক ভাবে বলেছে বন্যায় ভাঙন হতে পারে। এখন বিষয়টি জানলাম, আমরা অচিরেই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবো। এরপর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়ে দিবো। তারা যা পদক্ষেপ নেওয়ার নিবে।
উল্লেখ্য, ব-দ্বীপ খ্যাত এই নাগরপুর উপজেলায় একপাশে যমুনা নদী অন্যপাশে ধলেশ্বরী নদী বিদ্যমান। প্রতিবারের ন্যায় এবারও যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে সলিমাবাদ ইউনিয়নের চর সলিমাবাদ,পাইকশা, মাইঝাইল,ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলারামপুর, ডিজিটাল বাজার, দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
Print [1]