ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ , আজকের সময় : বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

কানাডা থেকে আমদানি করা ৪ লাখ ২০ হাজার বস্তা এমওপি সার কালোবাজারে বিক্রি

আশিকুর রহমান রনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ( আশুগঞ্জ) প্রতিনিধি  বিদেশ থেকে বিএডিসির আমদানি করা ৪ লাখ ২০ হাজার বস্তা এমওপি সার দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ ফেরিঘাটে কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।যার মূল্য ৩২ কোটি টাকা ।

জানা যায়, বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কানাডা থেকে আমদানি করা ২১ হাজার টন এমওপি সার যার পরিমান ৪ লাখ ২০ হাজার বস্তা দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ ফেরিঘাটের বিএডিসির কাছে বুঝিয়ে না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে ৩২ কোটি টাকা সার আত্মসাৎ করেছে। আমদানিকৃত এই সার চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পোটন ট্রেডার্সের মাধ্যমে ১১হাজার টন ও কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের মাধ্যমে ১০হাজার টন এমওপি সার আশুগঞ্জ ঘাটে পাঠানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৯মাস পরও এই সার আশুগঞ্জ ঘাটে পৌঁছেনি এবং বিএডিসির গুদামে দেওয়া হয়নি। ফলে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বারবার তাগাদা দিলেও পরিবহণ সংকটের কথা বলে গুদামে সার পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি। এমনকি আশুগঞ্জের কোনো গুদামে এমওপি সারের মজুত নেই বলেও জানা যায়।এতে করে আশুগঞ্জে এমওপি সার সংকট দেখা দিয়েছে ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানায় অধিক মুনাফা লাভের আসায় এই সার বিক্রি করেছে দুটি প্রতিষ্ঠান। এই সকল অসাধু ব্যবসায়িরা প্রতিনিয়ত অবৈধ ব্যবসা করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। পাশাপাশি বিএডিসি কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজস রয়েছে বলেও জানা যায়।

সরকার বিদেশ থেকে ২১ হাজার টন এমওপি সার ২০০ কোটি টাকায় আমদানি করলেও সরকারের ভর্তুকি দেয়ার কারণে বিক্রয় মূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরে দায়িত্বে থাকা বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, আমদানি করা সব ধরনের সার দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশুগঞ্জ ঘাটেও এমওপি, ডিএপি, টিএসপি সার পাঠানো হয়েছে। এমওপি সার ছাড়া ডিএপি, টিএসপি সারের মজুত নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

এ বিষয়ে পোটন ট্রেডার্সের প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ জানান, পরিবহণ সংকটে যথাসময়ে বিএডিসির গুদামে এমওপি সার পৌঁছানো যায়নি এবং বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি-মার্চের আমদানি সার এখনও কেন গুদামে যায়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে সঠিক কোনো উওর দিতে পারেননি তিনি।

পোটন ট্রেডার্সের আশুগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ সাজু বলছেন উল্টো কথা। তিনি জানান, আমাদেরকে এমওপি সার যা দেয়া হয়েছিল তা যথাসময়ে বিএডিসির গুদামে পৌঁছানো হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। এই ধরনের তথ্য ভুল এবং আমরা কোনো এমওপি সার কালোবাজারে বিক্রিও করিনি।

কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের মালিক মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে আশুগঞ্জে কুষ্টিয়া ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মোঃ রাসেল এর সাথে দেখা করার জন্য অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করেনি ।

বিএডিসির জেনারেল ম্যানেজার (সার ব্যবস্থাপনা) মো. ইব্রাহিম চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো এমওপি সারের মজুতে গড়মিল থাকার কথা স্বীকার তিনি জানান, এ ঘটনার জন্য দায়ী পোটন ট্রেডার্স ও কুষ্টিয়া ট্রেডার্স । আগের সার বুঝিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তাদেরকে আর কোনো নতুন করে সার দেয়া হবে না । এতদিন পরেও কেন সময়মত আশুগঞ্জে ২১ হাজার টন এমওপি সার পৌছায়নি সেজন্য জুলাই মাসে আশুগঞ্জ তদন্ত টিমও পাঠানো হয়েছিল । কিন্তু তারা কোনো সঠিক সদোত্তর দিতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, আশুগঞ্জ ফেরিঘাটে এমওপি সারের মজুত নিয়ে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তদন্ত করলেও কর্মকর্তারা মুখ খুলছেন না বলে জানান। সার কেলেংকারি বিষয়টি সুষ্ঠুতদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সচেতন মহল দাবী জানান।