বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রেমিকের উপর অভিমান করে শনিবার (২২ অক্টোবর) এক কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিয়ের প্রলোভনে এক প্রবাসীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর পর ওই প্রবাসী বিয়ে করতে না চাওয়ায় এ আত্মহত্যার ঘটনা বলে দাবি নিহতের পরিবারের। নিহত কলেজ ছাত্রীর নাম মোসা. মরিয়ম পারভীন (১৯)। সে উপজেলার ময়না ইউনিয়নের হাঁটুভাঙ্গা গ্রামের আবুল হাসেম মোল্যার মেয়ে। মরিয়ম পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল। মরিয়ম এ বছর এইচএসসি পাস করেছে।
নিহতের চাচাতো ভাই আকিদ মোল্যা বলেন, মরিয়মের সাথে একই উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ধোপাপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেনের ছেলে জুবায়ের হোসেনের (২৫) কয়েক বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জুবায়ের সাড়ে ৪বছর যাবত মালয়েশিয়া প্রবাসী। জুবায়েরের মামা নজরুল বিশ্বাসের বাড়ি মরিয়মদের বাড়ির পাশে হওয়ার সুবাদে জুবায়ের মামার বাড়ি নিয়মিত যাতায়াত করতো। এ কারণে মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে থেকেই জুবায়ের সাথে মরিয়মের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মালয়েশিয়া যাওয়ার পরেও ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক অটুট ছিল। গত ১৭ অক্টোবর জুবায়ের মালয়েশিয়া থেকে গ্রামের বাড়ি আসে। এরপর শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জুবায়ের ও মরিয়ম একসাথে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যায় মরিয়মদের বাড়ির সামনে মরিয়মকে রেখে জুবায়ের চলে যায়। এসময় মরিয়ম জুবায়েরকে ডাকতে ডাকতে জুবায়েরের পিছ পিছ দৌঁড়াতে থাকে। কিন্তু জুবায়ের দৌড়ে দ্রুত স্থানত্যাগ করে।
আকিদ মোল্যা আরো বলেন, রাতে মরিয়ম আমাকে বলেছে শুক্রবার দুপুরে বোয়ালমারীর একটি স্থানে নিয়ে তাকে বিয়ের প্রলোভনে জুবায়ের ধর্ষণ করেছে। কিন্তু পরে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় শনিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে অভিমান করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে সাথে সাথে তাকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মরিয়মকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শারমিন জাহান টুম্পা বলেন, মেয়েটিকে আনার পর আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। ঘটনাটি থানা পুলিশকে জানালে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে জুবায়েরের বক্তব্য জানার জন্য শনিবার দুপুরে তার বাড়িতে গেলে জুবায়েরকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এ সময় বাড়িতে তার বাবা-মাও ছিলেন না। জুবায়েরের ভাবি লতা খানম বলেন, জুবায়ের বিদেশ থেকে আসার পর বিভিন্ন জনের বাড়ি বেড়াতে গেছে। গত ২/৩ দিন সে বাড়িতে নাই।
ময়না ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বাচ্চু বলেন, মেয়েটির সাথে ছেলেটির দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছে। ছেলেটি বিদেশ থেকে বাড়িতে এসে গত শুক্রবার বেড়ানোর কথা বলে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় মেয়েটিকে বিয়ে করার কথা বলে তার সাথে শারিরীক মেলা মেশা করে। পরে বিয়ে করার কথা বললে ছেলেটি বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটি শনিবার আত্মহত্যা করে।
ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক বলেন, আমি জানতে পারছি মেয়ের সাথে গুনবহা ইউনিয়নের একটি ছেলের সম্পর্ক আছে। সেই ছেলে বিদেশ থেকে তিন চারদিন আগে বাড়িতে এসেছে। গত শক্রবার সারাদিন ওই ছেলে মেয়েটিকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায় এবং প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করে। সন্ধ্যায় মেয়ের বাড়িতে দিয়ে যায়। এর পর মেয়েটি তাকে বিয়ের কথা বললে ছেলেটি বিয়ে করবে না বলে জানায়। রাগে ক্ষোভে অভিমানে মেয়েটি গলায় ফাস নিয়ে আত্মহত্যা করে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
Print [1]