রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে একটি পরিকল্পিত মার্ডারকে আত্মহত্যা বলে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এমনটায় অভিযোগ বন্যা’র পরিবারের। গত ১৪ নভেম্বর রাত্রিতে মারা যায় পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আবুর ছেলে নিজামের স্ত্রী মোসাঃ বন্যা খাতুন (২২)। তবে মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হয় পরের দিন সকালে। এরপর নিজামের পরিবার থেকে বলা হয় বন্যা আত্মহত্যা করেছে। এদিকে বন্যার মৃত্যুকালীন পজিশন / দেহ বিবরণ দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে এটি আত্মহত্যা নয়। কিন্তু পুলিশ সঠিক তদন্ত না করেই এটিকে আত্মহত্যা বলে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন চাপে হত্যা মামলা নিতে বাধ্য হয় থানা কর্তৃপক্ষের। যার মামলা নং ১০/২২। যার বাদী হয় বন্যা’র ছোট ভাই রানা হামিদ। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ রানা’র আর্জিকে আমলে না নিয়ে ইচ্ছেমত হত্যা সন্দেহে তিন জনের নাম উল্লেখ করে মামলা সাজিয়ে রানাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন এজাহার পড়ে জানতে পারে এই মামলায় আত্মহত্যার ইঙ্গিত বেশি দেওয়া হয়েছে। যা পরের দিন আসামী পক্ষের তিন জনের মধ্যে দুই জনকে জামিন দেয় আদালত। এরপর এজাহারের বিষয় জানাজানি হলে চরম অসন্তোস প্রকাশ করে আত্মীয় স্বজন ও ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ। অবশেষে বন্যা’র পরিবার আদালতের দারস্থ হয়ে এজাহার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সেই মোতাবেক ২০ নভেম্বর ২২ (রবিবার) তারিখে জেলা জজ আদালতের আইনজীবী এ্যাডঃ ফিরোজ আহমেদ রনজু’র মাধ্যমে এজাহার পরিবর্তনের সকল প্রস্তুতি সম্পুর্ন করেছে ভুক্তভোগী বন্যা’র পরিবার। পরবর্তী এজাহারের বরাতে জানাযায়, মৃত্যুর সময়, সুরতহালের বর্ণনা, ভিক্টিমের অস্বাভাবিক দেহ পজিশন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বক্তব্যের সাথে আগের এজাহারের তেমন মিল নেই। সুরতহাল রিপোর্টে পুলিশের অবহেলা, প্রভাবিত ও প্রলোভিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ধারনা করা হয়েছে। তবে নতুন এজাহারে মৃত্যুর কারন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে পক্ষাঘাত ও শ্বাসরোধ।
এবিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী ফিরোজ আহমেদ রনজুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই মামলায় বাদীর সাথে অন্যায় করা হয়েছে। পুঠিয়ার থানার এজাহারে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা সম্পুর্ণ ভুল তথ্য । ঐ মামলায় বন্যার ছোট ভাই রানাকে বাদী করা হয়েছিল। রানা ছোট মানুষ, কিছু না বুঝে এজাহারে সাক্ষর করে। বর্তমানে এই মামলার নতুন ভাবে বাদী করা হয়েছে বন্যার মা মোসাঃ মাসুদা খাতুনকে (৫০)। এই হত্যা মামলায় নতুন দুইজনের নাম যুক্ত করে মোট ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং মামলায় মৃত্যুর কারন হিসেবে পক্ষাঘাত ও শ্বাসরোধের উল্লেখ করা হয়েছে । ২১ নভেম্বর মামলার নতুন আর্জি আদালতে পেশ করবো এবং আর্জির ব্যাখা দিয়ে এফআইআর এর আবেদন করবো। আশাকরি বাদীর আর্জি আদালত গ্রহন করবে এবং ন্যায় বিচার পেতে সাহায্য করবে।
পরে মামলার বাদী মোসাঃ মাসুদা খাতুনের সাথে কথা বললে, আবেগাপ্লুত হয়ে প্রতিবেদককে বলেন, সন্তান না হওয়ার কারণে বন্যাকে বিয়ের এক বছর পর থেকে স্বামী ও শাশুড়ি নির্যাতন করত। মাঝে মাঝে টাকার জন্য চাপ দিত নিজামের পরিবার। মেয়ের সুখের জন্য কয়েক বছর আগে জমি বিক্রয় করে ৮০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে নিজামকে। আমার মেয়ে বন্যা অনেক ধৈর্যশীল মেয়ে। সে কোনভাবেই আত্মহত্যা করতে পারেনা। মৃত্যুর সময় বন্যা বসা অবস্থায় ছিল। তাছাড়া বন্যা’র কানে ও গলায় স্বর্ণালংকার ছিল। কিন্তু মৃত্যুর সময় কান গলায় কিছুই ছিলনা। তারপর মৃত্যুর সময় কানে রক্ত দেখা গেছে এবং গোসলের সময় শরীরে কালশীরা দাগ দেখেছে সবাই। আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। এরপর মামলার ইনভেস্টিগেশন অফিসার (আইও) উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে সার্কেল এসপি স্যার ছিলনে তিনিও দেখেছেন গলাই অর্ধচন্দ্রাকৃতি কালো দাগ ছিল। মুখে লালা ছিল। তারপরও পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট আসলেই পরিষ্কার বোঝাযাবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা।
Print [1]