ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩ , আজকের সময় : রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

সাইকেল চালিয়ে বিশ্ব সফরে ভারতীয় তরুন এখন বাংলাদেশে

মাজহারুল ইসলাম চপল, ব্যুরোচীফঃ সাইকেল চালিয়ে বিশ্ব ভ্রমন ও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নিজের নাম লেখানো সেই ভারতীয় তরুন এবার বাংলাদেশ ভ্রমনের উদ্দেশ্যে পাঁ রেখেছেন। এছাড়াও সাইকেল চালিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচু মটর চালিত মহাসড়ক ভারতের উমলিংলা পাসে উঠে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। পরিবেশ রক্ষা ও নতুন প্রজন্মের জন্য নির্মল বাতাসের সুন্দর পৃথিবী গড়তে গাছ লাগানোর বার্তা নিয়ে মাত্র ২০০০ টাকা হাতে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে বিশ্ব সফরের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তরুন,অক্ষয় ভগত। সেই সফরের অংশ হিসেবে অক্ষয় ভগত এখন বাংলাদেশের রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। কতদিনে পুরো বাংলাদেশ সফর শেষ করতে পারবেন, তা নিশ্চিত করতে না পারলেও ২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকাস্থ জাতীয় শহিদ মিনারে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার ইচ্ছা নিয়ে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বেনাপোল বর্ডারক্রস করে বাংলাদেশের মাটিতে পাঁ রেখেছেন অক্ষয় ভগত। অক্ষয় ভগতের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বাগমুন্ডি থানার বুড়দা গ্রামে। তিনি বুড়দা গ্রামের ভুবনেশ্বর ভগতের ছেলে। তার বয়স ২৪ বছর। কৃষক বাবার একমাত্র ছেলে হলেও বিশ্ব ভ্রমনের স্বপ্নজালে বাস্তব অভিজ্ঞতার অদম্য আগ্রহের বাঁধ ভেঙ্গেছে অক্ষয় ভগতের। কাঙ্খিত অভিজ্ঞতাকে বাস্তব করতেই ২০১৮ সালের ৫ মার্চ ভারতবর্ষ সফরের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়েন তিনি। পুরো ভারতবর্ষ সফর করতে অক্ষয় ভগতের সময় লেগে যায় ১ বছর ১ মাস ৬ দিন। আর এর মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ সাইকেল চালনোর জন্য গিনেস বুকে নিজের নামটা রেকর্ড করে নেন। গিনেস বুকে তার নাম লিপিবদ্ধ হয় ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি।

এরপর তার সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে যায় চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া মরনঘাতি করোনা ভাইরাস। পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলে ২১ সালের ১৫ সেপ্টেস্বর পৃথিবীর সর্বোচ্চ মটর চালিত মহাসড়ক উমলিংলা পাসে সাইকেল চালিয়ে উঠে রেকর্ড করেন (উচ্চতা ১৯ হাজার ৩০০ ফিট) তিনি। এরপর ২২ সালের ১৫ মে আবারও বের হন আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার উদ্দেশ্যে। কেনিয়ার পরে উগান্ডা, রুয়ান্ডা ও তানজানিয়া দেশে গিয়ে সফর স্থগিত করতে হয়। কারন সাপের দংশনের কারনে অক্ষয়ের বড় বোনের মৃত্যু হয়। এরপর সকল চরাই উতরাই পার করে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসেন। বাংলাদেশ সফরের আসা সেই অক্ষয় ভগতের সাথে সাক্ষৎ করলে তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন, শেয়ার করেছেন নতুন নতুন অভিজ্ঞতার কথা। কোন দেশের কালচার ও অতিথি পরায়নতা কেমন তা জানতে চাইতেই বুকভরা অনন্দ নিয়ে বললেন বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষের অতিথি পরায়নতার কথা। ভুলবোনা এদেশের মানুষের কথা বাংলাদেশের মানুষ যে এত ভালো হয় তা জানা ছিল না। সেই সাথে মুগ্ধ হয়েছি রাজশাহীর সৌন্দর্য দেখে। আমার চোখে দেখা সবচেয়ে সেরা শহর। কত সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর। এই শহরে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখলাম। দেখে খুব ভাল লাগলো। বিশেষ করে রাত্রে খুব মজা লেগেছে। ঝকঝকে আলো, যানযট মুক্ত শহর সব, মিলিয়ে দারুন উপভোগ করেছি। ভাল লাগতো যদি এই শহরটিকে যিনি এত সুন্দর করে সাজিয়েছেন তার সাথে দেখা করতে পারলে। আমি বইয়ে পড়েছি, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তার ঘনিষ্ট সহচর জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামরুজ্জামানের সন্তান এই শহরের মেয়র। আমি শুনেছি সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নাকি খুব ভালো মানুষ। যাই হোক যদি সুযোগ থাকে তাহলে দেখা করে যাব। পরে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কার অনুপেরনায় এই সফর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ছোট থেকে বই পড়তে ভালবাসি। বই পড়া থেকে জানতে পারি ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য স্বামি বিবেকানন্দ’র কথা। তিনি একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ মানুষ ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তার থেকে আমার এই অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমিও তার মত শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে দিব। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার কাঙ্খিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারি।