ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ , আজকের সময় : শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

রাজশাহী গোদাগাড়ীতে পদ্মা পাড়ের ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়

রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহীর গোদাগাড়িতে পদ্মা নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ ও নিয়মবহির্ভূত ভাবে চলছে বালুর পরিবর্তে মাটি উত্তোলনের কাজ। বালুমহালটি উপজেলার ভাটোপাড়া, উজানপাড়া, মাটিকাটা, মাদারপুর, বারইপাড়া, কেল্লাবারইপাড়া মৌজায়। তবে এই বালুমহালটি ফুলতলা ঘাট নামে পরিচিত। এই এলাকায় নদীর বুকে ট্রাক চলাচলের রাস্তা করা হলেও বালুর পরিবর্তে মাটি তোলা হচ্ছে তীর থেকেই যা সম্পন্ন নিয়মবহির্ভূত । এতে ভরা মৌসুমে ঐ এলাকায় নদীভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে বলছে ঐ এলাকার ভুক্তভোগী অসহায় মানুষ । বালুমহালটির কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসি। কিন্তু প্রভাবশালী ইজারাদার বা ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না এলাকার অসহায় সাধারন মানুয়।

সরেজমিনে বালুমহালটি ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে ফুলতলা মোড় (ভাটোপাড়া) ও আঁকাবাঁকা পাকা রাস্তা। কিন্তু নদীর পাড় অর্থাৎ পাকা রাস্তা থেকে মাত্র ৩০০-৪০০ মিটার দুরত্বে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। আর ট্রাক চলাচলের জন্য নদীর বুকে করা হয়েছে রাস্তা। এই মাটি উত্তোলনের কারনে কৃষকের শত শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়াও নদীর পাড় থেকে মাটি তোলার কারণে নদীভাঙ্গনের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এই বালুটি মেসার্স উম্মে রোমান এন্টারপ্রাইজের নামে লীজচুক্তি রয়েছে। যার সত্ত্বাধিকারী মোঃ আনোয়ার হোসেন। তবে রোমান এন্টারপ্রাইজের নামে থাকলেও এই বালু মহালটির পার্টনার রয়েছে কয়েক জন। বালু মহালটির ইজারাদাররা সরকারের দেওয়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালুর পরিবর্তে মাটি উত্তোলন করছে। শুধু তাই নয়, মাটি কেটে ইট ভাটাতে বিক্রি করছেন। অথচ বালুমহালের টেন্ডারে মাটি কাটার কথা কোথাও উল্লেখ নেই । স্থানীয়রা জানান, মূল নদী দূরে সরে যাওয়ায় তীরে নদীর একটা অংশে এলাকার নারী পুরুষ গোসলের কাজসহ পরিবারের অনেক কাজ সারেন। কিন্তু বালুঘাটের জন্য বসানো টং ঘরের কারণে এলাকার নারীরা নদীতে নামতে পারেন না। ওই টং ঘরে মাদক সেবন চলে বলেও অভিযোগ গ্রামবাসীর। এছাড়াও সারারাত দানবী)য় বালুর ট্রাক চলার কারণে তাদের ঘুম হয় না। স্থানীয়রা বলছেন, রাতে বিকট শব্দে পদ্মার তলদেশ থেকে বালুভর্তি দানবের মত ট্রাক সড়কে উঠে আসে। এতে রাস্তা পর্যন্ত কাঁপতে থাকে। এই শব্দে তাদের ঘুম হয় না। ট্রাকে বালু পরিবহনের সময় ত্রিপল দিয়েও ঢাকা হয় না।

স্থানীয় সাংবাদিকদের দাবি, সেখানে বালুঘাটের লোকজনের সাথে কথা বললে তারা সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এবং সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেন হরহামেশাই।

অভিযোগ গুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমরা ঠিক জায়গা থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করছি। নিচে ট্রাক না নামলে বালু উত্তোলন করবো কিভাবে? পার্টনারের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে ৫শত থেকে ৬শত পার্টনার রয়েছে। তবে মুল নেতৃত্বে আমি, রজব ভাই, বেন্টু ভাই রয়েছি। পরে বালু মহালের আরেক পার্টনার মালিক ও রাসিকের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন তিনি জানান, এখানে অনিয়মের কিছু নেই। নিয়ম অনুযায়ী মাটি কাটা হচ্ছে। আর দুরত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার যে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই অনুযায়ী উত্তোলন করা হচ্ছে। মাটি উত্তোলনের নিয়ম বা নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, মাটি কাটা যাবে না, কোথাও এরকম লিখা নাই।

গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান জানান, পদ্মা নদীর তীর থেকে পনের শত থেকে দুই হাজার মিটার দূরত্বে বালু উত্তোলন করতে হবে। এই নিয়ম এখনও বলবৎ রয়েছে। এর ব্যতয় হলে সেটা অবৈধ ও বেআইনি হবে। তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম এর মুঠোফোনে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি, তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, বালু মহালটির লীজ চুক্তি রয়েছে ১ বছর (পহেলা বৈশাখ ১৪২৯ থেকে ৩০ চৈত্র ১৪২৯ সন, বাংলা ) পর্যন্ত। লীজের চুক্তি মুল্য দুই কোটি নব্বই লাক্ষ টাকা। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে নদীর তীর থেকে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার মিটার বা দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নদীর তলদেশ থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করতে হবে।