তৈয়বুর রহমান কিশোর, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ সারাদেশে একযোগে জাঁকজমকভাবে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী হলেও ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প্রদর্শনী ছিল প্রাণহীন, সাদামাটা। দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সরকারি কলেজ চত্বরে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৯টার সময় প্রদর্শনীর উদ্বোধনের কথা থাকলেও সাড়ে ১১টায় উদ্বোধন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর স্টলগুলোতে প্রদর্শনীর আয়োজনেও যেন দায়সারা ও নয়ছয় ভাব। স্টলগুলোতে ছিল হাতেগোনা কয়েকটি প্রাণি। তাছাড়া প্রদর্শনীতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন না উল্লেখযোগ্য কোনো দর্শনার্থী বা উদ্যোক্তা। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের তীব্র রোদে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জানা যায়, মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রদর্শনীর জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও গুটিকয়েক খামারিকে নিয়ে সরকারি কলেজ চত্বরে নামমাত্র এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনী উপলক্ষে ছিল না কোন প্রচারণা। যার ফলে মেলায় কাঙ্ক্ষিত দর্শকের দেখা মেলেনি। দায়সারা এ প্রদর্শনীতে কিছু খামারিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ খামারি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। সরকার খামারিদের উন্নয়নে নানামুখী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করলেও মাঠপর্যায়ে এ প্রকল্পগুলো কতটুকু সফলতা দেখাতে পেরেছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দায়সারা গোছের এ আয়োজনে হাতেগোনা কয়েকটি প্রাণী ছাড়া কাঙ্ক্ষিত প্রাণীর সমাগম চোখে পড়েনি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে, মাত্র দেড় ঘন্টা পরেই ব্যানার বদলিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যানার টানিয়ে প্রদর্শনীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অথচ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল দিনব্যাপী। এছাড়া দুপুরের খাবার নিয়েও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। খাতওয়ারি নির্দেশনার মধ্যে ছিল প্রদর্শনী স্থলে ৫০টি স্টল বাবদ বরাদ্দ ব্যয় ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু অর্থ লোপাট করতে প্রদর্শনীতে ৩০টি স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দুপুরেরর খাবার বাবদ ৬০ হাজার টাকা বরদ্দ থাকলেও স্থানীয় একটি হোটেল থেকে ১২০ প্যাকেট বিরিয়ানি ও আমন্ত্রিত ৩০জন অতিথির জন্য আলাদাভাবে সবজি, মাছ, মাংস ও মিষ্টির ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে আসা অনেকেই খাবার না পেয়ে ফিরে গেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন – সব মিলিয়ে খাবার বাবদ হাজার ৩০ টাকা খরচ হয়েছে। এবং অনুষ্ঠানটির ব্যাপক প্রচারের জন্য ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রচারের জন্য কোন মাইকিংই শোনা যায়নি। এছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারায়ন চন্দ্র সরকার এখানে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত অফিসে বিলম্বে আসা এমনকি অফিস ফাঁকি দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরও তার বিরুদ্ধে প্রদর্শনীর অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী একাধিক খামারি বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খামারীদের ঠকিয়ে বরাদ্দের সিংহভাগই আত্মসাৎ করেছেন। আগামীতে প্রদর্শনীতে তারা আসবেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী এবং বোয়ালমারী প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল সিকদার বলেন, মূলত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য হল তৃণমূল পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করে তোলা। সেখানে যদি প্রচারণা চালানো না হয় তাহলে দিনব্যাপী প্রদর্শনী বিফলে যাবে। অভিযোগের বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন – গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কোন বিষয়ে কথা বলতে হলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে। তাই এ বিষয়ে কথা বলতে আমি অপারগ। এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. একে এম আসজাদ মুঠোফোনে বলেন – গণমাধ্যমের সাথে কথা বলায় নিষেধ নেই, কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি হয়। অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো। এর আগে ২০২০ সালে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের অর্থায়নে ‘আধুনিক প্রযুক্তিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রকল্পে খামারীদের প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচির বাস্তবায়নে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারায়ণ চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।