ফরিদ আহমেদঃ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের সৈয়দ আলতাফ হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আফিল উদ্দিন। অপহরণ ও অসুস্থতার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার সুযোগে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম এই শিক্ষকের চেয়ার দখল করে বনে গেছেন প্রধান শিক্ষক। এই অবস্থায় নিজ দায়িত্ব বুঝে পেতে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক আফিল উদ্দিন। গতকাল সকালে এই আবেদন জমা দেন আফিল উদ্দিন।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করতে এবং প্রধান শিক্ষক পদ হাতিয়ে নিতে অপহরণের শিকার হতে হয় আফিল উদ্দিনকে। অপহরণের পর স্থানীয় বেশ কয়েকজন হৃদয়বান ব্যক্তির সহযোগিতায় মুক্তি মেলে তার। মুক্তি মিললেও শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বিদ্যালয়ে ফিরলেও দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে উল্টো এই শিক্ষককে ক্ষমতার জোরে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও দায়িত্ব বুঝে না পেয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের দারস্থ হয়েছে আফিল উদ্দিন। দায়িত্ব বুঝে পেতে দিয়েছেন আবেদন।
আবেদনের বরাত দিয়ে জানা যায়, ১ জানুয়ারী ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে এলাকার মানুষ হিসাবে জড়িত থাকেন তিনি। এরপর ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালে দৈনিক বজ্রপাত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেন তিনি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়োগ বিধি মোতাবেক গত ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালে নিয়োগ পান তিনি এবং পরদিন বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি সোহরাব আলী সাহেবের নিকট বিদ্যালয় চলাকালিন সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। যোগদান পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টির প্রাথমিক অনুমতি ও রেজিস্ট্রেশন পাবার জন্য বিদ্যালয়ের সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- জমির দলিল, খারিজ, দূরত্ব সনদ, জনসংখ্যা সনদ, নামকরণের শর্ত সহ সকল শর্ত পূরণ স্বাপেক্ষে গত ১৮ মার্চ ২০০৩ইং তারিখে উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চল, খুলনা বরাবর প্রধান শিক্ষক হিসাবে আবেদন করেন আফিল উদ্দিন। শর্ত স্বাপেক্ষে ০১ জানুয়ারী ২০০৫ ইং তারিখ থেকে তৎকালীন উপ-পরিচালক বিদ্যালয়টিকে নিম্ন মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয় হিসাবে ০৫ বছরের জন্য অস্থায়ী স্বীকৃতি প্রদান করেন। বিদ্যালয়টি স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে আফিল উদ্দিন বিদ্যালয়টিকে সুষ্ঠ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন। একপর্যায়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় মাটি ভরাটের জন্য ০৭ মেট্রিক টন গম প্রদান করেন। গম বিক্রয়ের টাকা দিয়ে যাতে মাটি ভরাটের কাজ না করা যায় সেজন্য বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম আলামপুর গ্রামের কিছু আন্ডার ওয়ার্ল্ডের লোকদের সাথে হাত মিলিয়ে আফিল উদ্দিনকে অপহরণ করান। অপহরণের পর স্থানীয় বেশ কয়েকজন হৃদয়বান ব্যক্তির সহযোগিতায় অপহরণকারী হাত থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। তবে শারিরীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন আফিল উদ্দিন। চিকিৎসার কারণে বাধ্যতামূলক বাড়িতে অবস্থান করতে হয় তাকে। ঠিক সেই সময়টাতেই তার অনুপস্থিতির কারণে রাশিদুল ইসলাম কথিত প্রধান শিক্ষক বনে যান। অসাধু উপায় অবলম্বন করে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও ভুয়া স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র বানিয়ে আফিল উদ্দিনের নিয়োগের তারিখ থেকে প্রধান শিক্ষক হয়ে যান রাশিদুল।
আরো জানা যায়, প্রকৃত পক্ষে রাশিদুল ইসলাম সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে ২২ অক্টোবর ১৯৯৭ ইং তারিখে ঐ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তাছাড়া ১৮ জানুয়ারি ২০১০ইং তারিখে তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমীন বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে রাশিদুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন বলে পরির্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এরপরও নিজেকে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক দাবি করেন রাশিদুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী শিক্ষক আফিল উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, রাশিদুল ইসলাম কিভাবে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৮ ইং তারিখ থেকে নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দাবি করেন এটা আমার বোধগম্য নয়। রাশিদুল ভুয়াভাবে নিয়োগপত্র তৈরী করেছেন এবং পি.ডি.এস ফাইল অনলাইন করার সময় প্রধান শিক্ষক ও শরীর চর্চা শিক্ষক উভয় জায়গায় নিজ নাম ব্যবহার করেছেন। আমি আমার স্বপদ ফিরে পেতে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেছি। জেলা শিক্ষা অফিসার স্যার ঘটনার সঠিক তদন্ত করে আমাকে আমার দায?িত্ব বুঝিয়ে দেবেন বলে আশা রাখি।
আবেদনের বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিষয়টির তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।