ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
দৈনিক দিনের খবর পত্রিকার ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন রাজশাহীর মোহনপুরে ওয়ার্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ফকিরপাড়া তরুণ সংঘ চ্যাম্পিয়ন বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধানে ছত্রাক ও মাজরা পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষকরা  লালপুরে চেয়ারম্যানের ছেলে সহ ইমো হ্যাক প্রতারক চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার ঘোড়াঘাটে ফুটপাত ও ড্রেন দখল প্রশাসনিক অবহেলায় বাড়ছে ভোগান্তি ভোটের শক্তিতেই পরিবর্তন, বন্দুকের ভয় নয় — প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম কুষ্টিয়ায় বিজিবির অভিযানে ১৮ লাখ টাকার  চোরাচালানী পণ্য জব্দ দৌলতপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সৎভাইয়ের হাতে যুবক খুন, আহত ৩ মিরপুর মালিহাদে বিএনপি’র কর্মীসভা অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ব্যতীত নির্বাচন হবে না বাংলাদেশে — দৌলতপুরে আলোচনা সভায় শাহরিয়ার জামিল জুয়েল

গল্প: চরাঞ্চলের এক নক্ষত্র – আলাল ভাই – পর্ব-২

গল্প: চরাঞ্চলের এক নক্ষত্র – আলাল ভাই – পর্ব-২

 রওশন জামাল জুয়েলঃ

চরাঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় আর নদীভাঙনের সাথে প্রতিদিন লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষের এলাকা। ঠিক এই প্রান্তিক জনপদের ফিলিপনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন এক আলোকবর্তিকা – আলাল ভাই।

তাঁর চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ নেই, বরং এক নতুন যাত্রার আত্মবিশ্বাস। বয়সের ভারে শরীর ধীর হতে পারে, কিন্তু অন্তরের আগুন এখনও প্রজ্জ্বলিত। জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য তিনি তৈরি করে ফেলেছেন এক মহাপরিকল্পনা।

আলাল ভাই বিশ্বাস করেন, সমাজের সত্যিকারের মুক্তি কুসংস্কার ও অজ্ঞতা দূর করার মধ্যেই নিহিত। “জ্ঞানই আলো, ঈমানই শক্তি” – এই মন্ত্রে তিনি প্রতিটি শিশু-কিশোরকে আলোকিত করতে চান। চরাঞ্চলের প্রতিটি গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে তিনি মানুষকে বোঝাতে চান কোরআনের প্রকৃত শিক্ষার কথা, আকীদা, তাকওয়া ও ইখলাসের সত্যিকারের মর্মবাণী।

দীর্ঘ শিক্ষকজীবনে তিনি দেখেছেন কিভাবে দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষা ধীরে ধীরে এক নির্জীব কাঠামোতে পরিণত হয়েছে। ইসলামি আদর্শের নামে সেখানে চলছে একধরনের ‘মডারেট ইসলামিজম’– যা মূল আকীদার গভীরে পৌঁছায় না। এ নিয়ে তিনি হতাশ, ক্ষুব্ধ, কিন্তু কখনো হাল ছাড়েননি। তার মতে, দীনকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধুই পুঁথিগত শিক্ষায় সীমাবদ্ধ করে ফেলা এক চরম আত্মপ্রবঞ্চনা।

আলাল ভাই সেই বিরল মানুষদের একজন, যাদের আলো শহরের রঙিন বাতি নয়, চরাঞ্চলের চাঁদের আলোয়ও উজ্জ্বল। তিনি তৈলবাজি জানেন না, প্রমোশনের জন্য সেজে বসেননি কোনোদিন। তাই হয়তো মিডিয়ার হেডলাইন হননি। কিন্তু তাঁর সাবলীল উচ্চারণ, বিনম্র চাহনি আর আস্থা ভরা কণ্ঠ প্রতিটি ছাত্রের মনে সোনার হরফে লেখা হয়ে গেছে।

আজকের তারকাখ্যাত মানুষদের দেখে চারপাশ মোহগ্রস্ত হলেও, চরাঞ্চলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা জানে, একজন আলাল ভাই তাদের জীবনে কী প্রভাব রেখেছেন। তাঁর চামড়ার পোটলা বইয়ের থলেতে ছিল কেবল পাঠ্যবই নয়, ছিল তাফসীর, হাদীস, এবং ঈমান জাগানোর এক অদম্য স্পৃহা।

অবসরের পরে তিনি ভেবেছেন, নিজ বাড়ির উঠানে এক ছোট্ট ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তুলবেন, নাম দেবেন “আলোকশিখা”। প্রতিদিন বিকেলে পাড়া-প্রতিবেশীর শিশুরা আসবে, তিনি কোরআনের আলোয় তাদের হৃদয় স্নান করাবেন। এটাই তার মহাপরিকল্পনার সূচনা।

এই সমাজ হয়তো তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেবে না। কোনো টেলিভিশন ইন্টারভিউ নেবে না। কিন্তু চরাঞ্চলের মাটি জানে, এই মানুষটা বাতিঘর হয়ে থেকেছেন – ঝড়ের রাতে সাহসের মতো, আঁধারের ভিতর আলো হয়ে।

প্রিয় আলাল ভাই, ক্ষমা করবেন আমাদের। তৈলবাজি সমাজ আপনাকে হয়তো মূল্য দিতে পারেনি, কিন্তু ইতিহাস আপনার মত মানুষদের স্মরণ করে আপন মহিমায়।

আল্লাহ আপনার এই উদ্যোগকে কবুল করুন, আপনার সম্মানকে সমুন্নত করুন।আপনি সত্যিকারের একজন নক্ষত্র – চরাঞ্চলের দীপ্তিমান নক্ষত্র।

Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

দৈনিক দিনের খবর পত্রিকার ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

গল্প: চরাঞ্চলের এক নক্ষত্র – আলাল ভাই – পর্ব-২

আপডেট টাইম : ১১:৩২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

গল্প: চরাঞ্চলের এক নক্ষত্র – আলাল ভাই – পর্ব-২

 রওশন জামাল জুয়েলঃ

চরাঞ্চল। ঘূর্ণিঝড় আর নদীভাঙনের সাথে প্রতিদিন লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষের এলাকা। ঠিক এই প্রান্তিক জনপদের ফিলিপনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন এক আলোকবর্তিকা – আলাল ভাই।

তাঁর চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ নেই, বরং এক নতুন যাত্রার আত্মবিশ্বাস। বয়সের ভারে শরীর ধীর হতে পারে, কিন্তু অন্তরের আগুন এখনও প্রজ্জ্বলিত। জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য তিনি তৈরি করে ফেলেছেন এক মহাপরিকল্পনা।

আলাল ভাই বিশ্বাস করেন, সমাজের সত্যিকারের মুক্তি কুসংস্কার ও অজ্ঞতা দূর করার মধ্যেই নিহিত। “জ্ঞানই আলো, ঈমানই শক্তি” – এই মন্ত্রে তিনি প্রতিটি শিশু-কিশোরকে আলোকিত করতে চান। চরাঞ্চলের প্রতিটি গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে তিনি মানুষকে বোঝাতে চান কোরআনের প্রকৃত শিক্ষার কথা, আকীদা, তাকওয়া ও ইখলাসের সত্যিকারের মর্মবাণী।

দীর্ঘ শিক্ষকজীবনে তিনি দেখেছেন কিভাবে দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষা ধীরে ধীরে এক নির্জীব কাঠামোতে পরিণত হয়েছে। ইসলামি আদর্শের নামে সেখানে চলছে একধরনের ‘মডারেট ইসলামিজম’– যা মূল আকীদার গভীরে পৌঁছায় না। এ নিয়ে তিনি হতাশ, ক্ষুব্ধ, কিন্তু কখনো হাল ছাড়েননি। তার মতে, দীনকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধুই পুঁথিগত শিক্ষায় সীমাবদ্ধ করে ফেলা এক চরম আত্মপ্রবঞ্চনা।

আলাল ভাই সেই বিরল মানুষদের একজন, যাদের আলো শহরের রঙিন বাতি নয়, চরাঞ্চলের চাঁদের আলোয়ও উজ্জ্বল। তিনি তৈলবাজি জানেন না, প্রমোশনের জন্য সেজে বসেননি কোনোদিন। তাই হয়তো মিডিয়ার হেডলাইন হননি। কিন্তু তাঁর সাবলীল উচ্চারণ, বিনম্র চাহনি আর আস্থা ভরা কণ্ঠ প্রতিটি ছাত্রের মনে সোনার হরফে লেখা হয়ে গেছে।

আজকের তারকাখ্যাত মানুষদের দেখে চারপাশ মোহগ্রস্ত হলেও, চরাঞ্চলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা জানে, একজন আলাল ভাই তাদের জীবনে কী প্রভাব রেখেছেন। তাঁর চামড়ার পোটলা বইয়ের থলেতে ছিল কেবল পাঠ্যবই নয়, ছিল তাফসীর, হাদীস, এবং ঈমান জাগানোর এক অদম্য স্পৃহা।

অবসরের পরে তিনি ভেবেছেন, নিজ বাড়ির উঠানে এক ছোট্ট ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তুলবেন, নাম দেবেন “আলোকশিখা”। প্রতিদিন বিকেলে পাড়া-প্রতিবেশীর শিশুরা আসবে, তিনি কোরআনের আলোয় তাদের হৃদয় স্নান করাবেন। এটাই তার মহাপরিকল্পনার সূচনা।

এই সমাজ হয়তো তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেবে না। কোনো টেলিভিশন ইন্টারভিউ নেবে না। কিন্তু চরাঞ্চলের মাটি জানে, এই মানুষটা বাতিঘর হয়ে থেকেছেন – ঝড়ের রাতে সাহসের মতো, আঁধারের ভিতর আলো হয়ে।

প্রিয় আলাল ভাই, ক্ষমা করবেন আমাদের। তৈলবাজি সমাজ আপনাকে হয়তো মূল্য দিতে পারেনি, কিন্তু ইতিহাস আপনার মত মানুষদের স্মরণ করে আপন মহিমায়।

আল্লাহ আপনার এই উদ্যোগকে কবুল করুন, আপনার সম্মানকে সমুন্নত করুন।আপনি সত্যিকারের একজন নক্ষত্র – চরাঞ্চলের দীপ্তিমান নক্ষত্র।