ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ , আজকের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫

টিসিবির পণ্য দফাদারের ব্যাগে, কার্ডধারীর ব্যাগ ফাঁকা

এটা কি মেম্বারের বাপের মাল যে দিতি হবি: দফাদার দিদার

ফরিদ আহমেদ ॥ কুষ্টিয়ার বটতৈল ইউনিয়নের দফাদার দিদারের বিরুদ্ধে টিসিবির তেল নিজ ব্যাগে ঢোকানোর অভিযোগ উঠেছে। গত ২৩ মার্চ বটতৈল ইউনিয়নের বড়ীয়া এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করার সময় এসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দিদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা গ্রহণে নেই কোন উদ্যোগ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টিসিবির পণ্য না দিয়ে বিতরণকারীদের সহযোগিতায় দফাদার দিদার পণ্য সরিয়ে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাছাড়া তেল সহ দিদারকে আটক করার বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যে ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, গত ২৩ মার্চ বড়ীয়া এলাকার সার ডিলারের দোকানের সামনে টিসিবির কার্ডধারী অসহায় মানুষের মাঝে নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল। সেসময় ইউনিয়নের কার্ডধারী বেশ কয়েকজন মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত পণ্য আনতে গেলে তাদেরকে পণ্য শেষ হয়ে গেছে বলে ফিরিয়ে দেন স্থানীয় বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার দিদার। তাছাড়া পণ্য আনতে গেলে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীকে দিদার বলেছেন- “এটা কি মেম্বারের বাপের মাল যে দিয়া লাগবি”। এছাড়া টিসিবির পণ্য দেওয়ায় দায়িত্ব যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদের কাছে গিয়েও কোন লাভ হয়নি। এমনকি স্থানীয় মেম্বার এসে উপস্থিত হয়ে পণ্য দেওয়ায় জন্য বললেও কাজ হয়নি। সবশেষ অধিকাংশ কার্ডধারীরা পণ্য না পেয়ে খালি ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এদিকে এ অভিযোগ নতুন নয় বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে আব্দুল পান্না, সজিব মন্ডল, তারিখ শেখ, জেহের আলী ও সজোনী খাতুন জানান, টিসিবির পণ্য বিক্রির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এবং অভিযুক্ত দিদার ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার তাদের টিসিবির কার্ড জমা নিয়ে পণ্য না দিয়ে শুধুমাত্র স্বাক্ষর করে কার্ড ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। দিদাদের অকথ্য ব্যবহারের কারণে পণ্য না নিয়ে বাধ্য হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন তারা। এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে তাদের নামে ইস্যুকৃত টিসিবির কার্ডে। যেই কার্ডগুলোতে দেখা যায়, ২০২২ ইং সালের ২ আগষ্ট, ১১ সেপ্টেম্বর, ৪ নভেম্বর, ১০ নভেম্বর, ২১ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী কার্ডগুলোতে স্বাক্ষর করা হয়েছে। তবে সেখানে পণ্যের নাম ও পরিমাণ কিছুই উল্লেখ নেই।
অন্যদিকে পণ্য না পাওয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগী নাসিমা জানান, আমরা কেন মাল পাইনি এ বিষয়ে দিদার ভালো জানে। সে বলেছে- তোমার মেম্বার না আলি আমরা মাল দেব না। সাথে সাথে মুঠোফোনে মেম্বারকে বিষয়টি জানালে দিদার সে সময় আরো বলেন- “এটা কি তোমার মেম্বারের বাপের মাল নাকি যে দিতি হবি।”
আরেক ভুক্তভোগী ফাহিমা বলেন, আমরা মাল আনতে গিয়ে দেখি মালের গাড়ির উপরে দিদার দাঁড়িয়ে আছে। সেসময় আমরা মাল চাইলে দিদার বলে- মেম্বার আসেনি মাল দেবোনা। কেন দিবানা? এমন প্রশ্নের উত্তরে দিদার আরো বলেন- “এই মাল মেম্বারের বাপের তা না, এই মাল দেবো না। এরপর ঘটনাস্থলে স্থানীয় মেম্বার উপস্থিত হওয়ার পর দিদারের সাথে তার তর্কাতর্কি শুরু হয়। তারপরও দিদার মাল দেয়নি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে দিদার তাকে বলেছেন- “কোন মেম্বারের খাওয়া নেই এখানে। আমাকে ডিসি ও ইউএনও পাওয়ার দেছে।
বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির বলেন- আমি ছুটিতে আছি। এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই দোষীদের শাস্তি দাবি করি।
এই ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার বিশ্বাস প্রতিবেদককে বলেন, এমন বিষয় আমার জানা নেই। তবে এখন এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।