ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ , আজকের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

বোয়ালমারীতে কলেজ শিক্ষার্থীকে ছাদে ডেকে নিয়ে জিম্পি করে টাকা দাবি

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কিশোর গ্যাংয়ের কায়দায় প্রনব কর্মকার (১৯) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীকে জোর পূর্বক ডেকে নিয়ে ইয়াবা বড়ি দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় ওই শিক্ষার্থীকে ইয়াবা বড়ি পকেটে ঢুকিয়ে চাদা দাবি করে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগীর বাবা জানিয়েছেন। ওই শিক্ষার্থী পাশের মুজুরদিয়া বাজারের জুয়েলারী দোকানীর কারিগর গুরুদাস কর্মকারের ছেলে ও স্থানীয় কাদিরদী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী বাজারের জগলু মিয়া মার্কেটের ছাদে ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় আগামী মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়িতে এক শালিশ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী কাদিরদী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র প্রনব কর্মকারের (১৯) বাবা গুরুদাস কর্মকার জানান, বৃহস্পতিবার ইফতারের সময় মুজুরিদিয়া বাজারের দোকানে বসে আমি মোবাইলে ঢাকার বঙ্গবাজারে আগুন লাগা দেখতেছিলাম। ঠিক এরই মধ্যে আমার ছেলের নাম্বার থেকে ফোন আসে। ফোনে চিল্লাচিল্লা করার শব্দ পাই। কিছুক্ষণ পরেই ছেলের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাথে সাথেই বাড়িতে ফোন দিয়ে মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম কারা যেন ছেলেকে ডেকে নিয়ে গেছে। দ্রুত কাদিরদী বাজারের কয়েকজনের কাছে বিষয়টি জানালাম যে, ছেলেকে খুজে পাচ্ছি না। প্রায় ঘন্টাখানেক পর জগলু মিয়ার মার্কেটের নিচে গেলে ছেলে আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাপতে থাকে। বললাম তোর ফোন বন্ধ কেন? ছেলে বললো আমাকে ইমন ও রাব্বিসহ কয়েকজন বিøডিংয়ের ছাদে নিয়ে ইয়াবা দিয়ে ছবি তুলে টাকা দাবি করে। সেই মুহুত্বে ইমনের কাছ থেকে ছেলের ফোনটি উদ্ধার করে ঘটনাটি বাজার কমিটির সভাপতি শাজাহান মোল্যা ও গন্যমান্য ব্যক্তি আজগর আলী ও চেয়ারম্যানকে জানাই। তারাসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা এ নিয়ে শুক্রবার শালিশ-বৈঠকে বসার কথা বলছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বৈঠকে বসা হয় নাই। আগামী মঙ্গলবার আমাদের চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টুর বাড়িতে দুইপক্ষকে নিয়ে বসার কথা হয়েছে। ওই শালিশে বাজার কমিটির সভাপতি শাহজাহান মোল্যা ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি আজগর আলী বিশ্বাসও থাকবেন। থানায় অভিযোগ করার বিষয়টি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, যেহেতু এলাকায় একসাথে বসবাস করি তাই গন্যমান্য ব্যক্তিদের দিকে তাকিযে অভিযোগ করা হয়নি।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগেও পাশের মধুখালীর জাহাপুর ইউনিয়নের দস্তরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা কাদিরদী বাজারের ফল ও মিষ্টি ব্যবসায়ী সিদ্দিক শেখের ছেলে জসিমের সাথেও ঠিক একই ঘটনা ঘটায় কাদিরদীর কিশোর গ্যাং চক্রের ইমন ও রাব্বি নামে দুই যুবক। ওই কিশোর গ্যাং খ্যাত যুবকরা হলেন, কাদিরদী গ্রামের ব্যাপারীপাড়া মহল্লার নাসির বিশ্বাসের ছেলে ইমন বিশ্বাস (২১) ও তার সহযোগী একই পাড়ার বকু বিশ্বাসের ছেলে রাব্বি বিশ্বাস (২০)।
ঘটনাটি নিয়ে ‘আমাদের কাদিরদী’ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি হৃদয় বিদারক পোষ্ট আপলোড করা হয়। সেখানে লেখা হয়, এই কিশোর গ্যাং চক্রের সকলকে সনাক্ত করে এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, আরো বিপদগামী হবে এরা, অবক্ষয় হবে কাদিরদীর গ্রামের সুনাম ও সৌন্দর্য। এ চক্রের শাস্তিমূলক বিচার চেয়েছেন এলাকাবাসী।
কাদিরদী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্যা জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আল্লাহ বড় ধরণের ঘটনা থেকে ছেলেটিকে বাঁচিয়েছেন হইতো। শুনেছি আরো আগেও এরকম একটি ঘটনা ঘটিয়েছে অভিযুক্ত ছেলেরা। তারা খুবই খারাপ প্রকৃতি ছেলে-পেলে। আগামী মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের বাড়িতে এ বিষয়ে শালিস বৈঠক হবে।
এ ব্যাপারে সাতৈর ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বুলবুল শেখ জানান, ঘটনাটি শুনেছি। এ নিয়ে এলাকায় কানাঘুষা চলছে। ঘটনাটি নিয়ে আগামী মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের বাড়িতে একটি শালিশ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ঘটনাটির বিষয়ে সংর্শ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই দুইপক্ষকে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলার্থে গন্যমান্যদের নিয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় ভাবে বসার কথা হয়েছে। এ রকম একটি ঘটনা এলাকার জন্য দুঃখজনক। দুইপক্ষকে ঘটনার বিষয়ে সামনা সামনি শুনে প্রয়োজনে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হবে। শান্তি প্রিয় এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী জয়নগর ফাঁড়ি ইনচার্জ সুব্রত কুমার রায় রবিবার জানান, শনিবার ফেসবুকে দেখে ঘটনাটি জেনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাতেই গিয়েছিলাম। রাতে রাস্তায় উঠতি বয়সের ছেলে-পেলেকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেই কেউ বলে এসএসসি পরীক্ষার্থী কেউ বলে সামনে এইচএসসি পরীক্ষা দিবো। তবে অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তারা এখনো এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমাদের মত করে তদন্ত করে দেখতেছি তাদের সাথে আরো কেউ আছে কিনা। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত করে যদি তাদের সাথে আরো সংশ্লিষ্ট কারোর নাম জানা যায় তাহলে হইতো বলা যেতে পারে তারা কিশোর গ্যাং। তার আগে কিশোর গ্যাং বলতে পারছি না।