ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

পাষন্ড সৎ পিতার হাতে কন্যা শিশু হত্যা, পিবিআই পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় আসামী গ্রেফতার

গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ময়মনসিংহ: জন্নাতুল পেটে থাকতেই প্রায় তিন বছর আগে তার বাবা আতিকুল (৪০) মারা যায়। জান্নাতুল জন্মের কিছুদিন পরেই মা আকলিমা(৩৫) নতুন সংসার পাতেন গৌরিপুরের কোনাবাড়ি গ্রামের বাবুল মিয়ার সাথে। আকলিমা তার বর্তমান স্বামী বাবুলের ৩য় স্ত্রী। সৎ বাবা ও মা দুজনেই রাস্তায় মেরামত শ্রমীক হিসেবে কাজ করে।

কখনও গাজীপুর , কখনও নারায়নগঞ্জ। ছোট্ট জান্নাতুলকে দুইচক্ষে দেখতে পারেনা সৎ বাবা বাবুল। তুলতুলে ছোট্ট শরীরের উপর তাই মাঝেমধ্যেই নেমে আসে নির্যাতনের কালশিরা দাগ। গলা টিপে জঞ্জালটাকে দূর করতে মন চায় তার। অপুষ্টি অবহেলায় ধুলো মাটি খেয়ে- মেখে প্রকৃতির এককোনে বেড়ে উঠতে থাকে জান্নাতুল।

চলমান “করোনা ভাইরাস” এর প্রাদুর্ভাবে কাজ না থাকায় বাবুল মিয়া সস্ত্রীক নিজ গ্রাম কোনাবাড়ি পৈত্রিক বাড়িতে এসে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু বাবুল নেশা ও চোরি অপরাধে জরিয়ে পড়ে। নেশাখোর এবং চুরি অভ্যাসের কারনে গ্রামে কেউ তাকে পছন্দ করেনা। সে গ্রামে আসলেই চিছকে চুরি বেড়ে যায়। তাই বাপচাচা ও গ্রামের মানুষ এই আপদকে বিদেয় করতে চায়।

গত ১৮ মার্চ, ২০২০ তারিখ সকাল বেলা বাবুল মিয়া চা খেতে বাজারে যায়। জান্নাতকে বারান্দায় বসিয়ে রেখে মা ঘরের পেছনে লাকড়ি কুড়াতে যায়। সকাল ১০ টার দিকে বাবুল মিয়া ফিরে এসে দেখে মেয়ে বারান্দায় পায়খানা করে সেটা গায়ে হাতে মেখে খেলা করছে। দেখে মাথা গরম হয়ে ওঠে। পাষন্ড বাবুল মেয়ের মা আশেপাশে না থাকার সুযোগে আচ্ছা করে মাথায় গালে মুখে চড় থাপ্পড় মারে।

তারপর গলা চেপে ধরে। খুনের নেশা পেয়ে বসে তার মথার উপর। কিছুক্ষণ পর মেয়ের কান্না শুনে মা আকলিমা দৌড়ে বাড়ি আসতে থাকে। বাবুল সেটা আঁচ করতে পেরে উঁচু বারান্দা থেকে জান্নাতকে উঠানে ফেলে দেয়। জীবন বের হওয়ার শেষ ছটফটানি করতে থাকে জান্নাত। এরমধ্যে তার মা এসে মেয়ের এই অবস্থা দেখে মাথায় পানি এবং বুকে তেল ডলে দিতে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে মা এর সকল চেষ্টাকে ব্যর্থ করে অবহেলিত জীবনের শেষ প্রদীপটুকু নিভে যায়।

নিস্তেজ নিথর দেহ নিয়ে মা আকলিমা স্বামীকে অনুরোধ করে হাসপাতেলে যেতে। মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছালে কর্তব্যরত ডাক্তার (জবানন্দিমতে) মেয়েকে মৃত ঘোষণা করে। হাসপাতালে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে মৃত্যুর কারন জিজ্ঞেস করলে বলে- পড়ে যেয়ে মাথায় আঘাত লেগে মারা গেছে। মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে কি করবে সে, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে আকলিমার।

এমতাবস্থায় গ্রামে ফিরলে খুনের রহস্য ফাঁস হতে পারে ভেবে পাষন্ড বাবুল লাশ গুম করতে পরিকল্পনা আঁটতে থাকে। পুলিশ জানার আগে দ্রুত পার্শ্ববর্তি বড় বোনের বাড়ি রোকসানা খাতুন, স্বামী –মিন্টু মিয়া, সাং বালুয়াপাড়া, গৌরীপুর এর বাড়িতে ওঠে। তারপর সন্ধ্যার পর মৃত জান্নাতকে নিয়ে গৌরীপুর পৌরসভাস্থ বাড়ীওয়ালাপাড়া ২ নং রেলগেইট সংলগ্ন ভৈরবগামী রেল লাইনের পূর্বপাশে বসে লাশ গুমের পরিকল্পনা করতে থাকে বাবুল ও তার স্ত্রী আকলিমা।

এভাবে রাত ১০ টা পর্যন্ত কোন উপায় করতে না পেয়ে সেখানেই লাশ রেখে চলে আসে। গ্রামে ফিরলে লোকজন জানাজানি হবে পুলিশ এরেস্ট করবে ভেবে তারা টঙ্গী, গাজীপুর চলে যায়।
ইতোমধ্যে পরের দিন ১৯/০৩/২০২০ তারিখ জান্নাতের লাশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে থানা পুলিশ লাশের সুরৎহাল, পোস্টমর্টেম ইত্যাদি সম্পন্ন করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন সম্পন্ন করে।

পরে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে তাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন আসলে এসআই( নিঃ) উজ্জ্বল মিয়া বাদি হয়ে গৌরীপুর থনার মামলা নং -২৫, তারিখ -১৭/৮/২০২০ , ধারা- ৩০২/৩৪ দঃবিঃ রুজু করেন। থানা পুলিশ দেড়মাস মামলা তদন্ত করার পর মামলাটি পিবিআই ময়মনসিংহ জেলা গত ২৭/৯/২০২০ তারিখে স্বউদ্যোগে গ্রহণের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে তদন্ত শুরু করে।

ময়মনসিংহ পিবিআই পুলিশ সুপার, জনাব গৌতম কুমার বিশ্বাসের দিক নির্দেশনায়, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার সহায়তায় গত ০১/১০/২০২০ তারিখ টঙ্গী পূর্বথানা পূর্ব আরিচপুর এলাকা থেকে মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শ্‌ক, পিবিআই মোঃ আবুল কাশেম হত্যা মামলার প্রধান আসামী বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রী আকলিমা খাতুনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তারা জান্নাতুল ফেরদৌসকে হত্যায় নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়ে দ্বায় স্বীকার করে উপরোক্ত ঘটনার বর্ননা দেয়। আজ ০২/১০/২০২০ তারিখ আসামীদ্বয়কে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দী গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।