ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩ , আজকের সময় : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন চিত্রনায়ক ফারুক

বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন চিত্রনায়ক ফারুক

কাজী মোস্তফা রুমি, স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান দুলু (চিত্রনায়ক ফারুক) এমপি। কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের সোম টিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত আছেন তার বাবা আজগর হোসেন পাঠান। জানাজার নামাজ শেষে সেখানেই ফারুকের মরদেহ দাফন করা হয়।

চিত্রনায়ক ফারুকের ভগ্নিপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.বি.এম মফিজুর রহমান খান জানান, জীবিত অবস্থায় ফারুক অসিয়ত করে গেছেন। মৃত্যুর পর যেন তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবা আজগর হোসেন পাঠানের কবরের পাশে শায়িত করা হয়।

চিত্রনায়ক ফারুক সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ফারজানা পাঠান, কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান তুলশি ও পুত্র রওশন হোসেন শরৎ পাঠান, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তাঁর প্রথম জানাজার নামাজ সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউ.এস বাংলার ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয়। পরে সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার উত্তরায় নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১১টায় জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য রাখা হয়। বাদ জোহর এফডিসিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট গুণীজনরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ও সেখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে চ্যানেল আই কার্যালয় প্রাঙ্গণে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাদ আসর তার সংসদীয় আসন ঢাকা ১৭ এর গুলশান-২ আজাদ মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোম গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে এলে গুণীজনরা সর্বশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। মঙ্গলবার রাত নয়টায় সোম টিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে চতুর্থ জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার কবরের পাশে শায়িত হন নায়ক ফারুক।

আজগার হোসেন পাঠান ও আফজালুন্নেছা দম্পতির ঘরে ১৮ আগস্ট ১৯৪৮ সালে চিত্রনায়ক ফারুক জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। নায়ক ফারুক ভালবেসে ফারজানাকে বিয়ে করেন। দুই সন্তান ফারিহা তাবাসসুম পাঠান তুলশি ও রওশন হোসেন পাঠান শরৎ এবং স্ত্রীকে নিয়ে তিনি উত্তরায় নিজ বাসভবনে বসবাস করতেন।

দুপুরে সরেজমিনে দক্ষিণসোম গ্রামে মিয়া ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি নীরব, নিস্তব্ধ। বাড়িতে তাঁর আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী নির্বাক মানুষে পরিণত হয়েছেন। এর মাঝে কথা হয় তাঁর দুই ভাগনে মোসাদ্দেক হোসেন পাঠান কল্লোল ও মোশারফ হোসেন পাঠান হিল্লোলের সাথে। তারা বলেন, মামা প্রায় দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থ্য হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি তাঁর নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়ীতে এসেছিলেন। এছাড়াও প্রতি বছর বাড়ীতে এসে দুই ঈদের নামাজ পড়তেন, রমজানে এলাকার মানুষদের সাথে ইফতার করতেন। গরীব, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের জন্য তিনি সব সময়ই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। তিনি গাজীপুরে অবস্থিত নিজ মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, সাবেক এমপি, ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.বি.এম মফিজুর রহমান খান, সাবেক এমপি এ.কে.এম ফজলুল হক মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মনির উদ্দিন আহাম্মেদ, দূর্ণীতি দমন কমিশনের সাবেক মহা পরিচালক মোঃ শহীদুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ রেজাউল করিম ভুইয়া, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড. আশরাফী মেহেদী হাসান, পৌর মেয়র এস.এম রবীন হোসেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আবু বকর মিয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আবু বকর চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, ভক্ত অনুরাগী, সূধীজনসহ সর্বস্তরের জনগণ গভীর শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।