ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩ , আজকের সময় : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

বোয়ালমারীতে নিজের নবজাতক শিশু বিক্রি করে জেলে গেলো বাবা

সন্তান ছেলে না মেয়ে, মা এখনো জানে না নবজাতক শিশু বিক্রি করে জেলে গেলো বাবা

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু সন্তানকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগে এক বাবাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৭ জুন) তাদের ফরিদপুর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে শিশুটির মামা দাউদ খালাসী বাদি হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করলে ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামে। নবজাতক শিশুটি বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতআলী থানার উপপরিদর্শক শ্রীবাস গাইন জানিয়েছেন। জানা যায়, বিয়ের পর থেকে বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামের রবিউল শেখ-শারমিন আক্তার দম্পতির ৩ বছরের এক কন্যা সন্তান নিয়ে সংসার চলে আসছে। রবিউল পেশায় একজন ভ্যান চালক। মাঝে মধ্যে দিনমজুরেরও কাজ করতো। যা আয় করে তাতেই খুশি ছিল তার স্ত্রী। ৬ মাস আগে নারগিস নামে এক নারীকে স্ত্রীর অজান্তে বিয়ে করে রবিউল। স্ত্রী তা সহ্য করেও একই বাড়িতে সংসার করে আসছিল। ঘটনার দিন ৯ মাস ৮ দিনের অন্ত:স্বত্বা শারমিন। গত ৮ জুন শ্বশুর ইদ্রিস শেখ, স্বামী রবিউল ও তার সতিন নারগিস জোর করে অটো গাড়ীতে নিয়ে শারমিনকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে শারমিনকে জোর করে সিজার করায়। সিজারের পর একবার সন্তানকে চোখে দেখে বরিউলের স্ত্রী। পূর্বে থেকেই স্বামী রবিউল শেখ সন্তানকে বিক্রি করার জন্য লোক ঠিক করে রেখেছিল। সন্তান বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হলে মামা দাউদ খালাসি ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় শিশু চুরি অভিযোগ এনে শুক্রবার (১৬ জুন) মামলা দায়ের করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করা হয় থানায়। মামলার পরপরই ওই রাতেই শিশুর বাবা কমলেশ্বরদী গ্রামের ইদ্রিস শেখের ছেলে রবিউল শেখ ও শিশুটি ক্রয় করা বাবুল মিয়া নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আসামি দুইজনকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এ মামলায় শিশুটি কেনার সাথে জড়িত আরো দুই আসামী হলেন জেসমিন ও বাবলি। মামলার বাদি শিশুটির মামা, পাশ্ববর্তী সালথা উপজেলার নটাখোলা গ্রামের দাউদ খালাসী বলেন, আমার বোনের সাথে বরিউলের সংসারে ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রবিউল ৬ মাস আগে আরেকটি বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। আমার বোন তা মেনে নিয়ে সতিনকে নিয়ে একই বাড়িতে সংসার করে আসছে। তারপরও আমার বোনের উপর রবিউল ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী, রবিউলের পিতা ইদ্রিস শেখ নানা ভাবে নির্যাতন করে আসছে। রবিবার (১৮ জুন) এ ব্যপারে শিশুটির মা অসুস্থ্য শারমিন আক্তার বলেন, আমার শশুর আর স্বামী মিলে আমাকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে জোরপূর্বক সিজার করায়। সিজার করার আগে আমাকে ইনজেকশন দিয়ে আমার কাছ থেকে কাগজে সই নেয়। অপারেশনের আগে এক নার্স আমাকে বলে যে আপনি বাচ্চা বিক্রি করবেন কেন। তখন আমি আর নাড়াচাড়া করতে না পারায় সিজার হওয়ার পর নার্সরা আমার সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে এসে কপালে চুমু খাওয়ায়। এরপর আর আমি আমার সন্তানকে চোখে দেখিনি। সন্তানকে ফিরে পাওয়া এবং স্বামীর বিচার চেয়েছেন তিনি। আমারা ছেলে না মেয়ে হয়েছিল তাও জানতে পারিনি এখনো! মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার উপপরিদর্শক শ্রীবাস গাইন জানান, শিশুটির পরিবার ও আসামিদের কাছ থেকে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি সে একজন ছেলে সন্তান। তবে শিশুটিকে উদ্ধারের পর বিষয়টি ক্লিয়ার হতে পারবো। প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি শিশুটি বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধারে জোর র্চেষ্টা চালাচ্ছে। রবিবার এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, গত ৮ জুন মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারে মাধ্যেমে ছেলে সন্তান জন্ম হবার পর শিশুটির অবস্থা একটু আশংকাজনক থাকায় তাকে ফরিদপুর জায়েদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে আনা হয়। পরে শিশুটির বাবা রবিউল নিঃসন্তান বাবুল মিয়ার কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই রাতেই শিশুটিকে বিক্রি করে দেন। শিশুটির মামা দাউদ খালাসির অভিযোগের ভিত্তিতে বাবা রবিউল ও শিশু ক্রয়ের সাথে জড়িত বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। শিশুটি বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানতে পেরেছি। শিশুটিকে উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।