তাসলিমার বাড়িতে শোকের মতম বোয়ালমারীর এক পরিবারের ৭ জন চালকসহ ৮ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শনিবার সকালে (২৪ জুন) এ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তাসলিমা বেগম (৫০) সহ একই পরিবারের ৭ জন ও চালকসহ ৮ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় তাসলিমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামে চলছে শোকের মতম। নিহত তাসলিমা বেগম (৫০), ফেলাননগর গ্রামের সৌদি প্রবাসি আজিজার শেখের স্ত্রী। তাসলিমার দুই মেয়ে, কমলা (৩০), বিউটি বেগম (২৬), কমলার ছেলে আরিফ (১২), হাসিব (১০), এবং মেয়ে আফসা (১), বিউটির ছেলে মেহেদী (১০) নিহত হয়। গাড়ির চালক মৃদুল (২৬) ফরিদপুরের গোলক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা। চালককে আহত অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। কমলার স্বামীর নাম আলমগীর, উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং বিউটির স্বামী রনি আলফাডাঙ্গার কুচিয়াগ্রামের বাসিন্দা। তবে কমলা বেগম ঢাকার চক বাজারে বসবাস করতো। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসাইন ও থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব, গুনবহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম তাসলিমার বাড়িতে পরিদর্শন করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে তাসলিমার বাড়ির লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। একই পরিবারের ৭ জন নিহতের ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাসলিমা বেগমের চাচতো ভাসর মো. মাসুদুর রহমান (৫২) বলেন, তাসলিমার স্বামী আজিজার শেখ বিদেশে থাকে। মাস খানেক আগে তাসলিমা হৃদ রোগ জনিত কারনে ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসা শেষে শনিবার সকালে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। ভাঙ্গা এলাকার আসলে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এ সময় এ্যাম্বলেন্সে থাকা একই পরিবারের ৭জন যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয়। তিনি আরো জানান, তাসলিমার আরেক মেয়ে চায়না বেগম (২৫) এবং ছেলে আনিচ শেখ (১৮) বাড়িতে রয়েছে। বোয়ালমারী থানার ওসির মাধ্যমে আমরা তাদের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। চায়না বেগম বার বার মুর্ছা যাচ্ছিল। কান্নজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এক মাস মাকে দেখি না, চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে মা বাড়ি ফিরে আসছিল কিন্তু নির্মম সড়ক দুর্ঘটনায় মা সহ বোন ভাগ্নে ভাগ্নিদের হারালাম। এ শোক আমরা কি ভাবে সইবো। আনিচ শেখ এখনও নিশ্চিত নয় তার মা বেঁচে আছে না মারা গেছে। সকাল ৯ টায় তার মার সাথে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। তার পরে আর যোগাযোগ করতে পারেনি। এ ব্যাপারে থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাসলিমার বাড়িতে ছুটে যায়। এলাকার চেয়ারম্যানের সহায়তায় পরিবার ও এলাকার লোকজনদের লাশ আনার জন্য হাসপাতালে পাঠানো ব্যবস্থা করি। পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশ ক্রমে বোয়ালমারী থানা পুলিশ শোকাহত পরিবারের পাশে আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসাইন বলেন, খুবই হৃদয় বিদাড়ক একটি ঘটনা। বোয়ালমারীতে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। খবর পেয়ে আমরা নিহত পরিবারের খোজ খবর নিতে ছুটে যায়। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশ ক্রমে উপজেলা প্রশাসন নিহত তাসলিমার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের তহবিল থেকে নিহতদের দাফন কাফনের জন্য প্রতিজনকে প্রাথমিক ভাবে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আমি বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) টাকাটা হস্তন্ত করবো।