ছিলেন ড্রাইভার হলেন সাংবাদিক
ফরিদ আহমেদঃ শরীফুল ইসলাম শরীফ। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে ছিলেন। গাড়ীর ড্রাইভার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কয়েকবছর হলো দেশে ফিরে আসেন। এরপর মধু মামুনের পিকআপ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর মধু মামুনের গাড়ী চালক ছেড়ে বনে যান সাংবাদিক। নানা অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে ওঠেন নামধারী এই সাংবাদিক। কখনো সাংবাদিক, কখনো আইনের সহায়ক, আবার কখনোবা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিংবা ব্যক্তির কাছে দাবিকৃত চাঁদা না পেলে সংবাদ প্রকাশের হুমকিসহ বিভিন্নভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করে দাবড়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলার এপান্তর থেকে তেপান্তর পর্যন্ত। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মিরপুর উপজেলাবাসী। প্রশাসনের নাকের ডগায় আঙ্গুল দিয়ে একের পর এক অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।
একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, মিরপুর পৌরসভার আশরাফুল হক খান চৌধুরীর নামে নওপাড়া কৃষ্ণপুর মৌজার ১০১৪ দাগ নং এ প্রায় ৭৪ শতক জমি আরএস রেকর্ডে। অথচ ক্রয় সুত্রে দলিলমুল্যে মালিক হলেন কৃষ্ণপুর এলাকার হাশেম আলী।
বিষয়টি নিয়ে আশরাফুল হক খান চৌধুরীর মেয়ে
মেহতামৌ এর কাছ কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে জমিটির দখল বুঝিয়ে দেবেন বলে জানান এই চতুর সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম শরীফ। এরপর ৮০ হাজার টাকা নেন এই সাংবাদিক শরীফ। তবে ভূমি অফিসে আরও টাকা লাগবে বলে অতিরিক্ত টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করেন মেহতামৌকে। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে সরাসরি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন আশরাফুল হক খান চৌধুরীর মেয়ে মেহতামৌ। এসময় মেহতামৌ জানান, সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম শরীফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’ অফিসের নাম ব্যবহার করে টাকা নিয়েছে।
বিষয়টি অবগত নয়, এবং ভুমি অফিসে রিসিট ছাড়া কোন টাকা আদায় করা হয়না বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার।
শুধু তাই নয়, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তার অপ-সাংবাদিকতার কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের জিম্মি করে দামী ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাসপাতালের দামী দামী ওষুধ উত্তোলন, কৃষি অফিস থেকেও সুযোগ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও হালসা কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
এসব ভূয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা না নেয়া হলে সাংবাদিক সমাজ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করলেন সুশীল সমাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবাইল ইউনিয়নের গেটপাড়া এলাকার নাদের আলী মন্ডলের ছেলে শরীফ হাসান। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে গাড়ীর চালক হিসেবে কাজ করে কয়েক বছর পূর্বে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। এরপর ভুয়া সনদপত্র দিয়ে চাকরির চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হন। এরপর ফেসবুক ও একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক বনে যান। নিউজ পোর্টালের কার্ড হাতে পাওয়ার পর নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতে শুরু করেন। নেই সাংবাদিকতার কোন প্রশিক্ষণ, নেই একাডেমিক সনদ। নিউজ সম্পর্কে নেই কোনো ধারনা কিংবা নিউজ লিখতে না পারলেও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্নভাবে মানেুষের সাথে প্রতারণা করতে থাকেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক উপজেলার বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শরীফ হাসান নিজেকে একজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। স্থানীয় প্রশাসন এসব ভূয়া ও নামধারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জরুরী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এ ব্যাপারে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ধারী শরিফুল ইসলাম শরিফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিন্টু বিশ্বাস এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সাংবাদিক পরচিয় দিয়ে কেউ অপরাধ করলে,অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব ভূয়াদের কোনো ছাড় নেই। যদি তার বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Print [1]