
আধুনিক সভ্যতাকে হার মানিয়ে ঘোড়ায় টানা তেলের ঘানিতেই চলে জিয়াউলের সংসার
মোহাম্মদ আককাস আলী : আধুনিক সভ্যতাকে হার মানিয়ে ঘোড়ায় টানা তেলের ঘানিতেই চলে জিয়াউল বারীর সংসার। জিয়াউল বারী নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের পরাণপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। শিবপুর বাজারের ধানহাটি এলাকা
টিনের ঘরে ঘর-ঘর-ক্যাঁচ-ক্যাঁচ শব্দে ঘুরছে কাঠের তৈরি ঘানি। ঘানির ভেতরে রয়েছে সরিষা। কাঠের হাতলের চাপে সরিষা ভেঙ্গে একটি পাত্রে ফোটায় ফোটায় চুইয়ে পড়ছে বিশুদ্ধ সরিষার তেল। এভাবেই আড়াই বছর ধরে সরিষা থেকে তেল সংগ্রহ করছেন জিয়াউল বারী। জিইয়ে রেখেছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আর এই তেলের ঘানি দিয়েই চলে জিয়াউল বারীর জীবন চাঁকা। চারদিকে যখন ভেজালে সয়লাব তখন চোখের সামনেই ঘরের দুয়ারে খাঁটি তেলের ঘানি। কালচে সোনালী রঙের ফোটায় ফোটায় তেলের সাথে বের হয় বিশ্বাস। এই তেলে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। যারা এর সঠিক গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা এখনো ঘানিতে ভাঙ্গা সরিষার তেল ব্যবহার করেন। জিয়াউল বারী বলেন, তার ঘানিতে একবারে ১০-১২ কেজি সরিষা ভাঙ্গানো যায়। একদিনে পর্যায়ক্রমে দুই থেকে তিনবার সরিষা ভাঙানো যায়। মেশিনে সরিষা ভাঙানোর খরচ ও সময় কম লাগার কারণে মেশিনে সরিষা ভাঙাতে মানুষের ঝোঁক বেশি। তাছাড়া হাতের কাছে ঘানিও এখন তেমন মেলে না। তিনি আরোও বলেন, অনেকে সরিষা ভাঙ্গাতে আসলে তা চুক্তিতে ভেঙ্গে দেয়। প্রতিদিন তার এই ঘানি থেকে ৮ শো থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়। ঘানির তেল বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলছে সুখের সংসার। ঘানির ঘোড়া ঘোরানোর সময় চোখ বেঁধে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জিয়াউল বারী বলেন, ঘোরার সময় চোখ খোলা থাকলে ঘোর লাগে। এ ছাড়া কুকুর-বিড়াল দেখলে ঘোড়া ঘুরতে চায় না।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, প্রযুক্তির দাপটে বিলুপ্তির পথে ঘানি শিল্প। ঘানি ভাঙ্গা তেল শতভাগ খাঁটি হয়। কারণ এতে কোনো কেমিকেল মেশানো হয় না। এতে তেলের গুণগত মান ঠিক থাকে।
Print [1]