ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ , আজকের সময় : বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

মামলাকৃত জমিতে রাকাবের ঋণ – সমস্যা রয়েছে আরডিএ’র নকশাতেও

রাজশাহী ব্যুরো: ২০১৫ সালে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পান মোঃ রাইহানুল হক @ রাসেল। রাসেল রাজশাহী নগরীর খোঁজাপুর এলাকার শাহজাহান আলী ওরফে শাহজান মিস্ত্রির ছেলে। চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন পর বাড়ি নির্মানের জন্য ঋণ পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেন রাসেল। কিন্তু ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই ঋণ গ্রহীতার নামে বৈধ্য জমি বা সম্পদ থাকতে হবে। বাড়ি নির্মানের ঋণ পেতে কাগজ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন এমন অভিযোগ উঠেছে রাকাবের কর্মচারি রাইহানুল হক রাসেলের বিরুদ্ধে।

এবার বাড়ি নির্মানের জন্য প্রয়োজন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) থেকে প্ল্যান পাশ বা নকশার। সেই কাজটিও তিনি সুকৌশলে করে ফেলেন। এরপর ২০২১ সালে গৃহনির্মাণের জন্য আরেকটি বড় ঋণ পেয়ে যান রাসেল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০১৯ সালে উক্ত জমিটির সিমানা নির্ধারন নিয়ে রাসেলের পিতা শাজাহান আলীসহ তিন জন বাদী হয়ে প্রতিবেশি আলী নেওয়াজ বাচ্চু ও আলতাফ আলীর বিরুদ্ধে জেলা রাজশাহী সদর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে মামলা করেন। যার মোকাদ্দমা নং ৭১/২০১৯। মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে।

বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন যে, আরএস ৩৬৬ হাল দাগের জমিতে পরিমানের সমস্যা রয়েছে। কারন, খতিয়ানে জমির পরিমান উল্লেখ রয়েছে .৪২ একর কিন্তু নকশায় আছে .৪৫ একর। বাদীর দাবি, বিবাদীরা তাদের জমির কিছু অংশ জবরদখল করিয়াছে। অর্থাৎ জমিটির মুল সমস্যা হচ্ছে সিমানা নির্ধারন। শুধু তাই নয়, তার জমির সংলগ্ন আলী নেওয়াজ বাচ্চুর জমি নিতে নানা কুটকৌশলে মেতে উঠেন শাজাহান ও ছেলে রাসেল।

অবশেষে বাচ্চুকে ধরাসায়ী করতে প্রায় ২৫ বছর আগের করা বাড়ির বিরুদ্ধে আরডিএ’র নিকট অভিযোগ করেন শাজাহান। এখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি। হয়রানি করাতে বাচ্চুর আরেক ভাই আবু হেনা’র বাড়ির বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি অথচ আবু হেনা’র জমির সাথে তাদের কোন সংযোগ নেই। এত নাটকের কারন একটাই, সংলগ্নের জমিটি পেতে হবে।

সকলের প্রশ্ন জমির সিমানা নির্ধারন না করেই কিভাবে আরডিএ প্ল্যানপাশ দিল? আবার মামলাকৃত জমিতে রাকাব কর্তৃপক্ষ কিভাবে লোন/ঋণ দিলো?

এদিকে ঐ জমির উপর আরডিএ যে প্ল্যানপাশ দিয়েছিল, সেই প্ল্যানপাশ বা নকশার তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমত বাড়ি নির্মান করছেন রাসেল। বিষয়টি আরডিএ অবগত হলে, নকশা ভহির্ভুত বাড়ি করায় ইমারত নির্মান আইন ১৯৫২ এর ৩খ ধারা অনুসারে গত ২ আগষ্ট ২৩ তারিখে চলমান কাজটি কেন বন্ধ করা যাবেনা মর্মে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয় এবং নকশার বাইরে নির্মান করা অংশটুকু অপসারনের নির্দেশ দিয়ে একটি নোটিশ জারি করে। যার অনুলীপি রাকাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজাপুর এলাকায় গেলে দেখা যায়, বাড়িটিতে নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে রাসেলের পিতা শাজাহান আলী জানান, আমি এই সম্পর্কে কিছু জানিনা। যা কিছু জানে, সব ছেলেই জানে। ছেলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে চাকরি করে। পরে ছেলের ব্যাপারে খোঁজখবর নিলে জানাযায় সকল ঘটনা। পরে সাংবাদিকরা রাইহানুল হক রাসেলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এগুলো আরডিএ ও আমার পারিবারিক বিষয়, আপনারা মাথা গলাবেন না।

এরপর বাড়ি নির্মান বন্ধের নির্দেশ নোটিশ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি দ্রুত উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং সাংবাদিকের সাথে অস্বাধাচরন করে ফোন কেটে দেন।
পরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) যোগাযোগ করলে তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসেন। জানতে চাওয়া হয়, রাসেলের ঋণের ব্যাপারে।

কবে ঋণ পেয়েছেন, কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, এপর্যন্ত কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং এই ঋণের জন্য কি ধরনের কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে? কিন্তু তাদের ভাষ্য, কারো ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার নির্দেশনা নাই। এসময় রাকবের এজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, এগুলো কনফিডেনসিয়াল তথ্য, আপনি চাইলে দেওয়া যাবেনা।

মামলাকৃত জমিতে ঋণ দেয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান আমরা সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ঋণ দিয়েছি। তবে আরডিএ’র একটি নোটিশ পেয়েছি। এরপর রাকাব কর্তৃপক্ষ রাসেলের সেই ঋণটি স্থগিত করে দিয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী বলছেন, কমিশন না হলে, রাকাবে ঋণ মিলেনা। রাসেলের মত এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে এই রাকাবে। যার অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে রাকাবের ঋণের তেলেশমাতি।