ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০ , আজকের সময় : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

কুষ্টিয়ায় হাসপাতালে ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে যা লিখলেন সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয়

সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে দেশের ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নজর কেড়েছে সারাদেশের। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা জানিয়ে ১৯ অক্টোবর নিজের ফেসবুক এ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেছেন সুপরিচিত মেধাবী সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয়। যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীর প্রতিবেদন। পাঠকদের জন্য পোস্ট টি হুবহু তুলে ধরা হলো–রাত আড়াইটার দিকে Himel এসে বললো– ভাই একটা লাশ আছে। দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে তাই আসলাম’।

আমি তখন কেবলই কিছুক্ষণের তন্দ্রায় পানির ট্যাংকির সিঁড়িতে হেলান দিয়েছি। ওরাও রাতে ১১ টার দিকে ডিউটি শেষ করে গিয়েছে; সকালে সাংগঠনিক প্রোগ্রাম করে আবার পরদিন বিকেলে আসার কথা, রাতে করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হলে পুনরায় আসতে হয়েছে জেনে ওদের জন্য দোয়া ছাড়া ওই মুহূর্তে আমার তেমন কিছু করার ছিলোনা।Likhon ইতোমধ্যেই পিপিই পরে ফেলেছে, ওরা বিদায় নিলো…।

একদল ছাত্রলীগ নেতা কর্মীর ডেডিকেশনের গল্প শোনাবো আজ, যেখানে প্রতিটা শব্দ আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার। এ যেন জাতীয় এক যুদ্ধে যোদ্ধাদের জলজ্যান্ত চেহারা! পরিশ্রান্ত চোখেমুখে যুদ্ধ জয়ের ছাপ। সেদিন সারাদেশের মতো আমাদের উপজেলাতেও পুলিশের ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশ চলছিলো। পেশাগত কারনে সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিলাম। বিকালের দিকে খবর পেলাম শাশুড়ী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমি পৌছে তাকে সংজ্ঞাহীন পেলাম,নিথর। সিমটম গুলো স্ট্রোকের।

এই করোনাকালে খুব জরুরি কি করা যায় আমাদের মফস্বল শহর কুষ্টিয়ায়! সেটা নিয়ে তড়িঘড়ি ভাবছিলাম। শহরের সরকারি হাসপাতালে Sweet ভাইয়ের চেনাজানা সম্পর্কে আইডিয়া ছিলো। হঠাৎ মাথায় এলো সুইট ভাইকে ফোন করি। গাড়িতে ওঠার সময় ভাই কে ফোন করলাম। ভাই পরামর্শ দিলেন Rimon আছে ওখানে,তাদের নেতাকর্মীদের আরও অনেকেই হাসপাতালে আছে,কিন্তু আদৌও এই মহুর্তে কে কে আছে ওদের রোস্টার ডিউটিতে! সেটা তখন সুইট ভাইয়েরও জানা নেই। উনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন– ‘ঘাবড়াইওনা ওরাতো থাকছেই সার্বক্ষণিক নো টেনশন।

আমি রিমনের ফোন নম্বর নিয়ে রিমন কে ফোন করলাম। রিমন জানালো– টানা ডিউটি শেষে আইসোলেশনে। বিচলিত হলাম,গাড়িতে তখন আমরা একটু পরপর আম্মুর পালস্ খোঁজার চেষ্টা করছি। রাস্তাটা দীর্ঘ মনে হচ্ছিলো। এরকম সিচুয়েশনে যারা পড়েছেন তারা উপলব্ধিও করতে পারবেন বিষয়টা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রিমনের ফোন– ‘ ভাই আমি লিখনের নম্বর টেক্সট করেছি আপনাকে, লিখন ইমার্জেন্সিতে আছে, ডিউটি করছে। আমি লিখনকে ফোন দিলাম, ও বললো– ‘শহরে ঢোকার সময় ফোন দিবেন ভাই। আমি গেইটে চলে আসবো।

হাসপাতালে ঢুকেই অপেক্ষারত পেলাম হিমেল আর লিখনকে। এতক্ষণ আমি জানতাম না এখানে হিমেলকেও পাবো। যাক! ওদের দু’জন কে দেখে আমি কিছুটা স্বস্তি পেলাম। তবে অবাক আর আপ্লুত হতে আপনিও বাদ থাকবেন না বাকিটা জানলে! গাড়ি থেকে না নামতেই স্ট্রেচার নিয় এলো ওরা দু’জন। খুবই প্রফেশনাল ভাবে রোগী স্ট্রেচারে তোলা দেখে আমি ওদের ওপর আরও বেশি আস্থা রাখলাম। এমনিতেও ওরা খুবই স্নেহের ছোট ভাই এবং খুবই আস্থাভাজন স্মার্ট তরুণ।

হাসপাতালের মধ্যে যত ধাপ আগাচ্ছিলাম, ততবেশি আস্থা বাড়ছিলো করোনা মহামারীর শুরু থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবকের কাজে থাকা এই তরুণদের প্রতি। সময়ের সাথে সাথে আমার স্বস্তি ফিরতে শুরু করলো, কারন ততক্ষণে ওরা দু’তিনজনে রোগী সেটাপ সহ সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র ঠিক করা এবং ওষুধ পত্র কেনা শেষ করে ফেলেছে। জরুরি তাগিদে ওদের সাহায্যে বাইরের ডায়াগনস্টিকে রোগী নিয়ে সিটি স্ক্যান করিয়ে আনাও শেষ। এর আগে, প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে শরীরে। আমরা আল্লাহ কে ডাকছি।

আর অবাক হয়ে দেখছি, সকল রোগীর প্রাথমিক প্রতিবিধান, হাসপাতালে করোনা সতর্কতা দেখভাল, নিয়মিত সচেতনতা বৃদ্ধি, অক্সিজেন সরবরাহ, জরুরি রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষার দ্রুত ব্যবস্থা করা, চিকিৎসক, নার্সদের নির্বিঘ্নে কাজের পরিবেশ তৈরি করে দেয়া, আর লাগাতার আগতদের প্রয়োজনীয় তথ্যসরবরাহ এবং আরও অন্যান্য কাজগুলো ওরা খুবই পেশাদার ভাবে করে যাচ্ছিলো! এ দৃশ্য দেখলে আপনিও আন্দাজ করতে পারবেন, বিগত মাসগুলোতে তারা আসলেও প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ হয়ে উঠেছে! এযেন দেশের পাশে সাহসী সৈনিকদের দৃঢ় অবস্থান! করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মহামারী আকার ধারণ করলে ২শ’ ৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ও রোগীদের যাবতীয় ভোগান্তি দূর করতে হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ড সহ বিভিন্ন পয়েন্টে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের নির্দেশ ও পরামর্শে নিয়মিত কাজ করছেন ৬৫ জন ছাত্র নেতাকর্মী।

যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলার অন্যতম ছাত্রনেতা হাফিজ শেখ চ্যালেঞ্জ। এই সম্মুখ যোদ্ধাদের সাথে অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের আরও জানাবো,যেসব ক্ষেত্রে আপনি সত্যিই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বেন তাদের ত্যাগ,আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের প্রতি। পাশাপাশি টিম ওয়ার্কের অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য চোখ এড়ানোর মতো নয়! যেমন, ওরা টিমে সবাই সবার খোলা মনে প্রশংসা করছিলো! যে গুনটা রাজনীতির পাড়াই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৭৫ জনের সবাই যে এ্যাট এ টাইম কাজ করছিলো ঠিক তা-না। উপলব্ধি করলাম ওরা লেখাপড়া,রাষ্ট্রীও ও সাংগঠনিক আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি এই মহান সেবায় নিজেকে অ্যডজাস্ট করে নিয়েছে ইতোমধ্যেই। জানলে খুশি হবেন যে এই টিম হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা, বিভিন্ন কর্মী, কমকর্তা সবার সাথে এতটাই সমন্বয় করে কাজ করছেন, যেন হয়ে উঠেছেন একে-অপরের পরিপূরক। এই অবজারভেশন গুলো প্রথম দিনের। ২য় দিন শাশুড়ী মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা মানসিক ভাবে বেশ স্বস্তি পেলাম। আর ওরা কয়েকজন পেশেন্ট সুস্থ জেনেও ধারাবাহিক ভাবে খোঁজ নিতে আসছিলো।

যা আসলেও প্রমান করে দেশের ক্রান্তিলগ্নে এই মানব সেবায় তারা কতটা আন্তরিক! আর তাদের শারীরিক পরিশ্রম নিয়ে বলার মতো আসলে কিছু নেই,কেবল উপলব্ধি করে নেয়া যায়। আরেকটা বিষয় শেয়ার করবো ভেবেছিলাম। কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের এই টিমের কার্যক্রম কাকতালীয় ভাবে হোক আর পদ্ধতিগত ভাবে হোক হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকের বিড়ম্বনা অনেকাংশেই মুক্ত করেছে।

এক বা দু’দিন হাসপাতালটা পর্যবেক্ষণ করলে আপনার খুবই দৃঢ়তার সাথে মনে হবে যে– দেশের প্রতিটা হাসপাতালে যদি এরকম একটা করে টিম থাকে তাহলে সারাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কয়েকদিনেই একযোগে অন্তত ৪০% ডেভেলপ হবে। রীতিমতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই টিম। লেখা প্রায় শেষের দিকে..। আমি তখন আমাদের ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে ডাক্তার রাজিব মৈত্রের খোঁজে যাচ্ছি। ষাটোর্ধ এক মহিলা নিজেই রোগী। পুত্রবধূ সাথে আছে, কাপড় ধুতে গেছে। বৃদ্ধা অনুরোধের সুরে বললেন ছাত্রলীগের ছেলেদের দেখিয়ে দিতে।

আমি পাশের আরেকটা কোরিডরের প্রবেশ পথ দেখিয়ে দিয়ে বললাম– চাচী, দেখবেন ওরা পিপিই পরে আছে। চাচী জানালেন পিপিই চেনা নেই তার। উনি লেখা পড়তে পারবেন না আন্দাজ করে আমি বললাম– দেখবেন হানিফ সাহেবের ছবি দেয়া আছে ওদের পোশাকে। চাচী হাঁটা ধরলেন গন্তব্যে। আমি সাথেই হাঁটছি। আমার হঠাৎ জানতে ইচ্ছে হলো কোন জরুরি প্রয়োজন কিনা! দেখছিলাম উনার হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে। জানতে চাইলাম। উনি আঞ্চলিক ভাষায় বললেন– ওরা আমাকে এ্যাম্বুলেন্স থেকে কোলে করে নামিয়েছে। বউমার কাছে শুনলাম,আমার জন্য ওষুধ কিনতে দোকানে গেছে অনেকবার।

আমার হাতপাখা কেনার দরকার ছিলো, কিনে দিসে, আমাদের জন্য রাতের খাবার এনে দিসে। ছেলেগুলোকে দেখতে চাই, রাতে আমি বাবাগুলাকে দেখিনি, জ্ঞান ছিলো না। হ্যা এটাই রাজনীতি !! অসামান্য প্রাপ্তি!!! নেতার নির্দেশনায় আন্তরিক প্রতিফলন,মানবতা বোধ, ধৈর্য্য, শ্রম,মেধা,ত্যাগ, বর্তমান বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির আদর্শিক এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ তোমাদের অনেক দূরে এগিয়ে নিবে। তোমাদের সুসংগঠিত ও আন্তরিকতার সাথে দক্ষ সেবা আমরা কুষ্টিয়াবাসী মনে রাখবো।  আমরা তোমাদের ভুলবো না