ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ , আজকের সময় : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

মাসোহারা না দিলেই গ্রেফতার, আতঙ্কে সাধারণ মানুষও

রাজশাহী ব্যুরো: ঠিকঠাক মাসোহারা না দিলে আর কথার বাইরে গেলেই পড়তে হবে গ্রেফতারি রোষানলে। এমন ভয়ে শুধু মাদক ব্যবসায়ীরা নয় চরম আতঙ্কে থাকেন সাধারণ মানুষও। কখনো ডিবি পুলিশ, কখনো র‍্যাব, আবার কখনো বিজিবি’র নাম ভাঙ্গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে। ঐ প্রতারকের নাম মিন্টু ওরফে মাইকেল।

আবার কোন দপ্তরে সবুজ নামেও পরিচিত। সে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। মিন্টু নাটোর জেলার হলেও দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহীর পুলিশ প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের হয়ে মাসোহারা উত্তোলন করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন ঘটনার বেশকিছু অডিও কলরেকর্ড ফাঁস হয়েছে। তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন নামে পরিচিত বলেও ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড থেকে জানা গেছে। সে প্রতিমাসে র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, পিবিআইসহ প্রশাসনের বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা’র নাম করে মাদক স্পর্ট থেকে মাসোহারা উত্তোলন করেন।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষকে জিম্মি করে টাকা লেনদেনের অডিও ভিডিও ফুটেজ সংবাদকর্মীদের হাতে এসেছে।

অডিও কল থেকে জানা যায়, প্রশাসনের সকল দপ্তরের যেকোন মামলা গায়েব করতে পারবে মর্মে টাকা দাবি করছেন। এছাড়াও র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ডিবি পুলিশ ও পিবিআই এর কয়েক জনের নাম উল্লেখ্য করে মাসোহারা ও মামলার ভয়ভীতি প্রদান করে মোটা অংকের টাকা দাবি করছেন।

গোদাগাড়ী ও চারঘাট এলাকার মাদক কারবারি তাকে প্রশাসনের আদায়কারী হিসেবে চিনেন। সেই তকমা দেখিয়ে মাছ বিক্রেতা থেকে আজ কোটি টাকার মালিক এই মিন্টু। অল্প বয়সে নাটোরে করেছেন আলিশান বাড়ি।
সম্প্রতি এই মিন্টু গোদাগাড়ীতে কয়েকজন মাদক কারবারি ও সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানাযায়, ২০২০ সালের ২২ মার্চ সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওয়ানপাড়া এলাকার পদ্মার চর থেকে মাদক ব্যবসায়ী রফিকুলের মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহ উদ্ধারের পর সে (রফিকুল) বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। এরপর রফিকুলের স্ত্রী রুমিসা খাতুন বাদি হয়ে ২০২০ সালের ১৭ জুন দুই জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই মামলায় একজনকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে দেড়শত (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা চাঁদা দাবি করে। তবে কল রেকর্ডে একজন পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয়ে কথা বলার অডিও হাতে এসেছে। অডিও কলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম সুমন বললেও তথ্যদানকারির পাঠানো ছবি অনুযায়ী, সে এএসআই রবিউল। এএসআই রবিউল পিবিআই রাজশাহী অফিসে কম্পিউটার সেকশনে রয়েছেন। মুলত চাঁদা দাবিকারীর নিকট বিশ্বাস যোগাতেই মিন্টু ওই কর্মকর্তার অডিও কল রেকর্ড তাকে দেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে এএসআই রবিউলের সাথে কথা বললে তিনি কল রেকর্ড ও সকল ঘটনার বর্ণনা অস্বীকার করেন। তিনি এরকম কাউকে চিনেন না বলে জানান।
অডিও কল রেকর্ড থেকে আরও জানা যায়, প্রতারক মিন্টু জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী’র নাম উল্লেখ করে ভয় দেখাচ্ছেন। এমনকি ওই অফিসারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে মর্মে অর্থ দিলে মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দিবেন বলে জানান।
গোদাগাড়ীর অসংখ্য মানুষ বলছেন, মিন্টু মুলত জেলা ডিবি’র ইন্সপেক্টর আতিকুর রেজার লোক। অডিওতে তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি উজ্জ্বল নামে একজনকে তার কথা না শোনায় তাকে তিনি আটক করিয়েছেন। র‍্যাবের মাঠ পর্যায়ে দুজন অফিসারের নামও উল্লেখ্য করেন এবং তাদের সাথে তার সক্ষতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করছেন।
কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, মিন্টুর অনেক ক্ষমতা। যখন তখন যে কাউকে ফাঁসাতে পারেন। যাকে তাকে আটক করানোর ক্ষমতা রয়েছে মিন্টুর। হয়রানির শিকার হওয়া এক ভুক্তভোগী পরিবার জানান, ঐ সোর্স গোদাগাড়ীর বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর নিকট বিজিবি, র‍্যাব, ডিবি পুলিশের লোক বলেই পরিচিত। মাসোহারা না পেলে সে তৎক্ষনাৎ তাদের আটক করায়। এর আগে এক মাদক কারবারিকে হুমকি দিয়ে চাঁদা না পেয়ে ডিবি’র ইন্সপেক্টর আতিকুর রেজাকে দিয়ে ধরিয়ে দেন। অপরদিকে গত ১৫ নভেম্বর মাদক না পেয়েও একজনকে টাকা নেওয়ার উদ্দেশ্যে আটক করায় এবং টাকা না পেয়ে পরে ২০ গ্রাম হিরোইনের মামলা দেয়।
পরে প্রতারক মিন্টুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সে কারো থেকে কোন প্রকার টাকা নেন না। এমনকি কোন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তার যোগাযোগ নাই। পরে সাংবাদিকদের সাথে দেখার করার প্রস্তাবনা দেন।
বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এই ধরনের কাউকে চিনিনা। তবে সত্যি যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।