রাজশাহী ব্যুরো: প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক স্পট ও মাদক কারবারিদের থেকে টাকা চাওয়ার অডিও কল রেকর্ডসহ সংবাদ প্রকাশ হলেও এখনও গ্রেফতার হয়নি মাসোহারা উত্তোলনকারি মাইকেল মিন্টু। কখনো ডিবি পুলিশ, কখনো র্যাব, কখনো পিবিআই, আবার কখনো বিজিবি’র নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা উত্তোলন করতো মিন্টু।
এমন চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ হলেও গা ভাঁষিয়ে উল্টো মিন্টুর বিরুদ্ধে তথ্যদাতাকে চরম শিক্ষা দিবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, সেই মাসোহারা উত্তোলনকারি মিন্টুকে বাঁচাতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন তিনি।
মিন্টুর পক্ষে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করিয়ে ক্ষান্ত নন ঐ কর্মকর্তা। পরবর্তীতে সাংবাদিককে সায়েস্তা করতে মিথ্যা মামলা করানোর প্রক্রিয়া করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের এমন ভুমিকায় বলে দিচ্ছে, এই মিন্টু জেলা পুলিশের আবিষ্কার।
এদিকে গোদাগাড়ী অঞ্চলের মানুষ বলছে, মিন্টু মুলত ডিবি’র ইন্সপেক্টর আতিক রেজার লোক। মিন্টুকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন মাদক স্পটে অভিযান পরিচালনা করেছেন ইন্সপেক্টর আতিক।
মিন্টু ও আতিকের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেক নিরাপরাধ মানুষ, এমনটায় দাবি এই অঞ্চলের মানুষের। এতদিন মিন্টুর ব্যাপারে ওপেন সিক্রেট থাকলেও তাকে বাঁচাতে এবার সরাসরি কাজ করছেন পুলিশের এই অসাধু কর্মকর্তারা।
মিন্টু নাটোর জেলার সদর থানার ছাতনী এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। বয়স ৩২ বছর। তার একাধিক বউ রয়েছে। গোদাগাড়ীর আলাতলি চরে প্রথম বিয়ে করলেও দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে ভাড়া থাকেন পবা উপজেলার বায়া বাজারে।
সেখান তিনি গোয়েন্দা পুলিশ হিসেবে বেশ পরিচিত। তবে অনেকেই বলছে তার আরও বউ থাকতে পারে।
এদিকে মিন্টুকে বাঁচাতে নিখুঁত কুটবুদ্ধি করে চলেছেন জেলা ডিবি’র ইন্সপেক্টর আতিকুর রেজা। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ রাজশাহী জেলা ডিবিতে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকায় গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
তার বাড়ি সিরাজগঞ্জে হলেও রাজশাহীকে আপন করে, গড়েছেন অঢেল সম্পদ। রাজশাহী নগরীতে ১০ তালা বাড়ি নির্মান করছেন তিনি। এত টাকা তিনি পেলেন কোথায়? বৈধ নাকি অবৈধ? এমন প্রশ্ন এখন জনমনে!! দুর্নীতির বিষয়ে ইন্সপেক্টর আতিক রেজার বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবার সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনও করেছে ভুক্তভোগীরা।
তারপরও এখনো তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তিনি মিন্টুর মাধ্যমে অর্থ বিত্তশালীদের টার্গেট করে থাকেন। এমন উদাহরন ২০২১ সালে দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের কলেজে পড়ুয়া ছেলে সাওন আজমকে হেরোইন ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।
পরে স্থানীয়দের রোষানলে সাওনকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। পরে সাওন নিজের নিরাপত্তা চিন্তা করে ইন্সপেক্টর আতিকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন। ২২ সালের ৪ আগস্ট দূর্গাপুরের আরেক ঘটনায় ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে ফাঁসানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছিলো, জেলা ডিবি’র ইন্সপেক্টর আতিকুর রেজা পরিকল্পিতভাবে মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। দেবীপুর গ্রামের মৃত দেরাজ উদ্দিনের ছেলে আমজাদ আলী, একই গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে রহিদুল ইসলামকেও মাদকের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছেন এই কর্মকর্তা। চলতি বছরে ১৫ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনায় চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের টাকা দাবি’র অডিও ফাঁস হয়।
ওসি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও একই ঘটনায় অপর দোষী ব্যক্তি জেলা ডিবি’র কর্মকর্তা আতিকুর রেজার কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সে সময় ওসি ও আতিকুর রেজা’র বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী নারী পুলিশের উদ্ধর্তন মহলসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলেন।
ওই নারীর দাবি, ডিবি পুলিশ তাঁর স্বামীকে সাজানো মাদক মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি আরও দাবি করেন, স্থানীয় প্রতিপক্ষের দ্বারা ম্যানেজ হয়ে ইন্সপেক্টর আতিকুর রেজা তাঁর স্বামীকে মাদক উদ্ধারের সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করেন।
সম্প্রতি কয়েকদিন আগে গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ি এলাকার সেতাবুরের ছেলে উজ্জ্বলকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। অপরাধ হিসেবে সবাই বলছে উজ্জল র্যাবকে তথ্য দিত। সেসময় একজন র্যাব সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন।
কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। উল্টো আটকের স্থান পরিবর্তন তাকে ২০ গ্রাম হিরোইনের মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ রফিকুল আলম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই।
কেউ কোন অভিযোগও করেনি। ঘটনাটি সংবাদপত্রে প্রকাশে হয়েছে এবং ডিএসবি শাখায় পেপার কাটিং করা হয়েছে বললে, উত্তরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে আসেনি। তবে আপনি বললেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এদিকে চরম আতঙ্কে রয়েছে তথ্য দিয়ে সহযোগিতাকারি এবং গণমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিকরা।
না জানি কখন মিথ্যা মামলায় কারাগারে যেতে হয়। তবে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ইন্সপেক্টর আতিকের এহেন কার্যক্রমের পরও কিভাবে বহাল রয়েছে একই স্থানে। এর খুঁটির জোর কোথায়?