![](https://dailynewsbangla.com/wp-content/uploads/2023/12/011-1.jpg)
রাস্তা নিয়ে চরম বিপাকে গোদাগাড়ী চরাঞ্চলের মানুষ
রাজশাহী ব্যুরো: ভারতের হিমালয় একেঁবেঁকে গোদাগাড়ী উপজেলার কোল ঘেসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে দেশের সর্ববৃহত নদী পদ্মা। কালের বিবর্তনে এই নদী যৌবন শক্তি হারিয়ে পদ্মার পাড় অর্থাৎ চরে গড়ে উঠেছে গ্রামের পর গ্রাম। খুব সীমিত জায়গা নিয়ে বসবাস করছে গোদাগাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ। এই চরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস অর্থাৎ পুরো একটি ইউনিয়ন রয়েছে নদীটি ঐপারে। যার নাম চর আষাড়িয়াদহ। দক্ষিনে ভারত সিমান্তের কাঁটা তারের বেড়া আর উত্তরে পদ্মার পানি।
এই ইউনিয়নের মানুষ শহরের মত জীবনযাপন না করলেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইতমধ্যেই নিজেদের সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তন করে বাড়িয়েছে শিক্ষার হার। এই চরে রয়েছে দুইটা হাইস্কুল, নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি মাদ্রাসা ও পাঁচটি বাজারের ন্যয় বড় মোড়। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে দিন দিন শিক্ষার হার বেড়ে ৮০% গিয়ে ঠেকেছে। তারা তাদের শারিরিক শক্তি দিয়ে চরের উর্বর জমিতে লক্ষ লক্ষ টন ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে তারা মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে নির্দ্বিধায়। অথচ এই ফসল ফলাতে ও বাজারজাত করতে দুর্বিসহ কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল প্রতি মৌসুমে প্রতিদিন নদীর চর থেকে হাজার হাজার বস্তা টমেটো, পিঁয়াজ, ধান, গম, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকারের কালাই পার হয়ে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন বাজারে আসছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে চরের বিভিন্ন ফসল সরাসরি ঢাকায় প্রবেশ করছে। আবার প্রতিদিন এপার থেকে সার, বীজ, দোকানিপণ্যসহ অসংখ্য মানামাল পার করতে হচ্ছে শত কষ্ট উপেক্ষা করে। প্রতি বছর কয়েক লাখ টন আবাদ আসে চর থেকে। এমন সম্ভাবনাময় এলাকার সবচেয়ে বড় কষ্ট রাস্তাঘাট। তাদেরকে প্রতি বছরই রাস্তা নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। যেখানে প্রতি বছর রাস্তার পিছনে খরচ করতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। উপজেলার ফুলতলা (ভাটোপাড়া) খেয়া ঘাটের পাড় থেকে জমি ভাড়া নিয়ে চলাচলের জন্য প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা করতে হয়েছে নৌকা মাঝিদের। বর্তমান সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের কল্যানে যেখানে রাতদিন কাজ করছেন, সেখানে এই এলাকার মানুষকে রাস্তা ভাড়া নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। রাস্তার ব্যাপারে ঘাটের মাস্টার শরিফুল মাঝির সাথে কথা বলে জানাযায়, ফুলতলা খেয়া ঘাটটি এই এলাকার মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ চলাচল করেন। অথচ নৌকা থেকে নামার পর অর্থাৎ ঘাট থেকে প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা তাদের ভাড়া নিতে হয়। এতে প্রতি বছর তাদের দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। অনেকবার চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে বললেও কোন কাজ হয়নি। তার দাবি অনেক সাংবাদিক ও পুলিশ এই ঘাট দিয়ে যাওয়া আসা করেছেন, তারাও তাদের সমস্যাটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বর্তমানে এই অঞ্চলের মানুষের প্রানের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তা টুকু যেন সরকারি করন করে দেয়। যেন আর কোন দিন তাদের জমির ভাড়া দিতে না হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা: খালিদ হোসেন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি অল্প কিছুদিন হলো এখানে এসেছি, তাই বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভুমিহীনদের থাকার জন্য ঘর করে দিচ্ছে আর মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা থাকবেনা এটা তো হয়না। আমি এখনি দেখছি বলে, ৯ নং আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলাকে ফোন দিয়ে রাস্তার বিষয়ে জানাতে বলেন। পরে চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ইউএনও স্যার আমাকে রাস্তার ব্যাপারটি জানাতে বলেছেন। এর আগে এলাকার মাঝি ও কয়েকজন সাধারণ মানুষ আমাকে জানিয়েছিল কিন্তু সময় অভাবে বিষয়টি সমাধান করতে পারিনি। তবে আমাদের এপারে শুধু ঐ রাস্তায় নয়, পুরো ইউনিয়নে রাস্তার বেহাল দশা। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর বেশকিছু রাস্তা মেরামত করে দিয়েছি। আবার কিছু পাকা করেছি। তাতে আরও ৮০ শতাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই শোচনীয়। সরকার থেকে বড় কোন বরাদ্দ ছাড়া এতগুলো রাস্তা মেরামত বা চলাচল উপযোগী করা সম্ভব নয়। আপনাদের মাধ্যমে উর্ধতন মহলের দৃষ্টিপাত করতে চাই। তারা যেন এপারের মানুষের দূঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে ভালো উদ্যোগ নেয়।