ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

অস্তিত্ব সংকটে নীলফামারীর বাঁশ শিল্প, দুর্দিনে শিল্পীরা

রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: “এলায় তো বাহে বাঁশের দাম চড়া। আগের মতন পাওয়া যায়ছে না। যখন পাও তখন কাম হয়। হামরা গরিব মানুষ বাহে, কাম না থাকিলে খাওন পামু ক্যামনে।” কথা গুলো বলছিলেন, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের বাঁশ শিল্পের কারিগর বিধবা প্রতিমা রানী (৫০)। অথচ এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বাঁশ গবেষণা কেন্দ্র।

এই ইউনিয়নে প্রতিমার মত প্রায় ৫০টি বাঁশশিল্প পরিবার কারিগরদের বসবাস। পরিবারগুলো কেবল বাঁশের তৈরীর জিনিসপত্রের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাঁশের অভাব, প্রয়োজনীয় পুঁজি, পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে চরম অস্তিত্ব সংকটে নীলফামারীর বাঁশ শিল্প। উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যায্য মূল্য না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই পাল্টাতে শুরু করেছেন পেশা। দারিদ্রতাকে আলিঙ্গন করে পিতৃ পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে যারা আগলে রেখেছেন তারাও রয়েছেন নানা সমস্যায়।

বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিক দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তারাও হয়ে পড়েছেন কোনঠাসা। ফলে আবহমান বাংলার এ শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি বাঁশ শিল্পীদের ভাগ্যে নেমে এসেছে দুর্দিন। জেলার ৬ টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঋষি সম্প্রদায়ের পুরুষদের প্রধান কাজ বাঁশ কিনে এনে সেগুলোকে মাপ অনুযায়ী করে কেটে বুনোনের উপযোগী করে দেয়া। এরপর বাঁশ দিয়ে তৈরীকৃত খলই, ডুলি, চালা, কুলা, খাঁচা, চালনি, চাটাই, ডোল, ঝুড়ি, পলো, ডালা বাজারে বিক্রি করা।

আর বাঁশের তৈরী এসব সামগ্রী নিজ হাতে তৈরী করেন বাড়ীর নারীরা। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসারতায় বর্তমানে বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রীর অনেক পন্যই তৈরি করছে প্লাস্টিক পন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। সাশ্রয়ী মূল্যসহ টেকসই ও স্থায়ীত্বের কারনে এসব প্লাস্টিক সামগ্রী দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাধারনের ব্যবহারে। ফলে প্রতিনিয়ত ব্যবহার কমছে বাঁশের তৈরি পন্য সামগ্রীর। এতে প্রতিটি গ্রামীণ জনপদে বাশেঁর তৈরি সামগ্রী এখন অবহেলিত হয়ে পড়েছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে বাশঁ শিল্পে বিরাজ করছে চরম মন্দাবস্থা। একদিকে ব্যবহারকারীর অভাব, অন্যদিকে বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাঁশ শিল্পীদের অনেকেই তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পী অনেকটা নিরুপায় হয়ে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কুটির শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতায় যে সব শিল্পীরা রয়েছেন, তারাও অনেকে বেকারত্বসহ আর্থিক দৈন্যতায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের বাঁশ শিল্পী নিপেন জানান, বাপ দাদার পেশা তাই আকড়ে ধরে আছি। ছেলে-মেয়েরা এখন আর এ পেশায় থাকতে চাচ্ছে না। পরিশ্রম বেশি, লাভ কম। আগের মত চাহিদাও নেই। ডোমার উপজেলার বালা পাড়া ইউনিয়নের ঝরনা রানী জানান, বাশেঁর দাম বেড়ে গেছে। পুজিঁ সংকট রয়েছে। চাহিদা ও মুনাফা ভাল না থাকায় পরিবারে যাচ্ছে দুর্দিন। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলার নারী উদ্যোক্তা কামরুন নাহার ইরা বলেন, চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির অংশ পরিবেশ বান্ধব বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে, পেশা সংশ্লিস্টদের বিনা সুদে কিংবা স্বল্প সুদে পরিবার ভিত্তিক ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা গ্রহনসহ পৃস্টপোষকতা প্রদান করা জরুরী।

এ ব্যাপারে কথা হয় বাঁশের তৈরী জিনিসপত্র নিয়ে কাজ বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্রীফ’র সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক আহসান হাবিবের সাথে। তিনি জানান, বাঁশের জিনিসপত্র তৈরিতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। তাদের তৈরি জিনিসপত্র রপ্তানীমুখী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। বাঁশ সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডোমারের বাঁশ গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক মাহবুবুল আলম বলেন, বাঁশ সংকট কথাটি ঠিক নয়। চাহিদা মত বাঁশ রয়েছে।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, বাঁশ উৎপাদনে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারীভাবে কোন প্রকার সহায়তা করার সুযোগ থাকলে তা অবশ্যই করা হবে।