![](https://dailynewsbangla.com/wp-content/uploads/2024/01/14.jpg)
রাজশাহীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট সমস্যা
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী নগরীতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট সমস্যা। এতে কোন ধরনের ভ্রুক্ষেপ দেখাচ্ছেনা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। বরং অপরিকল্পিতভাবে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাদক অটোরিক্সার লাইসেন্স বা নিবন্ধন। পরিচ্ছন্ন এই শিক্ষা নগরী এখন যানজটের নগরীতে রুপান্তরিত হচ্ছে। বিশ্বের কাছে গ্রীণসিটি, ক্লিনসিটি হিসেবে ভুষিত হলেও বর্তমানে বাড়ছে যানজট বিড়ম্বনা। বাসা থেকে বের হলেই পড়তে হচ্ছে যানজট ভোগান্তিতে। রাসিক মেয়র হিসেবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রথম মেয়াদে নগরীকে ঢেলে সাজাতে না পারলেও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি আমুল পরিবর্তনের মাধ্যমে রাজশাহীবাসিকে উপহার দিয়েছেন একটি পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন নগরী । যার প্রশংসা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কাছেও উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে রাজশাহীকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এমন দৃষ্টিনন্দন শহরে দিন দিন বেড়েই চলেছে যানজট সমস্যা।
এদিকে যানজট নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। ট্রাফিক পুলিশের উদাসিনতা ও রাসিকের অবহেলা যেন যানজটের অন্যতম কারন। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় বাড়ছে এই যানজট। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার ধারে গাড়ি পার্কিং, যত্রতত্র যাত্রীদের উঠা নামা, রাস্তার মাঝ বরাবর গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকায় এই যানজটের প্রধান কারন। আবার ফুটপাত দখল হওয়ার সুবাদে পথচারীদের হাঁটতে হয় রাস্তা দিয়ে। এতেও যান চলাচল বাঁধার মুখে পড়তে হয় হরহামেশাই। এব্যাপারে সাধারণ মানুষ বলছে, যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় এমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কারন পুলিশের সামনেই রাস্তার মাঝে গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, পুলিশ কিছু বলেনা। কিছু সময় পুলিশ হটিয়ে দিলেও পরবর্তীতে আবার রাস্তার উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখে গাড়ি চালকরা। কোন সচেতন ব্যক্তি নিষেধ করলেও রিক্সা চালকদের অশালীন আচরনের মুখে পড়তে হয় নিষেধকারিদের।
![](https://dailynewsbangla.com/wp-content/uploads/2024/01/416020859_3609518659261769_3140692002832932624_n-300x135.jpg)
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নগরীর অভিমুখে ঢুকতেই প্রথম বড় যানজটের মুখোমুখি হতে হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে। এরপর দেখা মিলবে ভদ্রা মোড়ে। সেখানে রাস্তার চার ভাগের তিন ভাগ রাস্তা দখল করে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও অটোরিক্সা দাঁড়িয়ে থাকে। এর কারনে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তবে এই নগরীতে যানজটের ভয়াবহ অবস্থানে রয়েছে, বাস টার্মিনাল, কামরুজ্জামান চত্বর (রেলগেট), রেলগেট বাসষ্ট্যান্ড (রাজশাহী-নওগাঁ), রেলগেট থেকে সাহেব বাজার, কুমারপাড়া থেকে রাজশাহী কলেজ গেট, লক্ষিপুর মোড়, আদালতের প্রবেশদ্বার ও কোর্ট ষ্টেশন মোড়। তবে রেলগেট হতে বাজার ও কুমারপাড়া হতে কলেজ গেটের যে যানজট দেখা যায় তার সিংহভাগ কৃত্রিম।
সরেজমিনে দেখা গেছে এই এলাকায় যে সকল কমার্শিয়াল ভবন রয়েছে দুই একটা ছাড়া কোনটিতে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা নাই। যার কারনে রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং করে রেখে মার্কেট ও অফিসিয়াল কাজ করা হচ্ছে। অথচ এই সমাধানে দৃষ্টি নেই নগর পরিকল্পনাকারি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)’র। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রয়েছে যেন তেন ভাবে ভবন নির্মানের নকশা (প্ল্যানপাশ) দেওয়ার অভিযোগ। তবুও সরকার এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
এদিকে যানজট নিয়ে মন্তব্য ও পরামর্শ দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর রাজশাহী সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ সফি উদ্দিন। তিনি বলেন, এই যানজট নিরসনে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এর মধ্যে পার্কিং এর সুব্যবস্থা করা, চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, অনিয়ম তান্ত্রিকভাবে অটোরিক্সার নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করা, রাস্তার মোড়ে গাড়ি দাঁড়ানো বা যাত্রীদের উঠা নামা বন্ধ করা, ফুটপাত ও রাস্তার উপরে দোকান উচ্ছেদসহ যানজটের কারন সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে রাজশাহীর উন্নয়ন ও পরিবর্তন নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের অবহেলা বা উদাসিনতা রয়েছে। রাজশাহীর উন্নয়নগুলো হচ্ছে একটি গন্ডির মধ্যে। এই উন্নয়নগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। যানজট নিরসনে শহরের বাইরে অর্থাৎ নওদাপাড়া এলাকায় বাস টার্মিনাল করলেও আধুনিকায়নের অভাবে সেই টার্মিনালের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। কারন সেখান থেকে যাত্রীরা উঠা নামা করেননা। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সকল ধরনের যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে, তাহলে সবাই সেই টার্মিনাল মুখি হবে। রেলষ্টেশন এলাকা থেকে সকল ধরনের বাস সরিয়ে নিতে হবে। নগরীর তালাইমারি মোড় থেকে কোর্ট পর্যন্ত পদ্মার পাড় দিয়ে আলাদা বাইপাস বা ফ্লাইওভার ব্রিজ নির্মান করতে হবে এবং বিশেষ বিশেষ পয়েন্টে যাত্রীদের উঠা নামার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এছাড়াও নগরীর আশেপাশে যুগোপযোগী বাজার সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে সাহেব বাজারের উপর চাপ কমবে। প্রতিটি মোড় থেকে ১০০ গজ দুরে যাত্রীদের উঠা নামা করাতে হবে। সাহেব বাজার এলাকায় কয়েকটি পয়েন্টে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবেই সম্ভব হবে এই নগরী থেকে যানজট নিরসন।
যানজট সমস্যা নিয়ে রাজশাহী মেট্রো পলিটন পুলিশের সহকারি উপ-পুলিশ কমিশনার হেলানা আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি খুব অল্প সময় হয়েছে এখানে এসেছি। এসেই আমার যানজট সমস্যা চোখে পড়েছে। সেটি সমাধানে কয়েকদফা বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করেছি। যানজট নিরসনে আমি আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কারনে তা পিছিয়ে গেছে। ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ প্রচেষ্টায় চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষকরে রিক্সা ও অটোরিক্সা চালকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কোথায় গাড়ি দাঁড় করানো যাবে, কোথায় যাত্রী নামানো যাবে, একটি মোড়ের কোন জায়গায় পার্কিং করা যাবে, এগুলো তারা জানেনা। এমনকি তারা এখনও জানেনা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে। এছাড়াও নগরীর কিছু জায়গা রয়েছে, যেগুলো রাসিক মেয়রের নির্দেশনা প্রয়োজন। যেমন সাহেব বাজার, বাস টার্মিনাল, রেলগেট সিএনজি ষ্ট্যান্ডে যানজট দুর করতে হলে মেয়রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তাছাড়া পুলিশের সাথে বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সাথে সাংঘর্ষিক ব্যাপার হবে। তবে এই নগরী আপনাদের, এই নগরীর পরিবেশ বান্ধব করতে আপনাদের সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
এব্যাপারে রাজশাহী কর্পোরেশনের সচিব আল মাহমুদ রনি’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, আধুনিক রাজশাহীর কারিগর গণমানুষের নেতা এমএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন যানজট সমাধানে কাজ করছেন। যানজটের বিষয়টি মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে ওভারব্রিজ বা ফ্লাইওভার নির্মান করেছেন, ভদ্রা থেকে কোর্টষ্টেশন পর্যন্ত আরও একটি ফ্লাইওভারের প্রস্তুতি রয়েছে। আর নগরীতে জনসাধারনের চলাচলের জন্য যে পরিমান অটোরিক্সা ও রিক্সা প্রয়োজন সেই পরিমান নিবন্ধন দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। বর্তমানে রিক্সার নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। যানজট নিরসনে দখল হওয়া রাস্তা ও ফুটপাত উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন। তবে এই সমাধানে সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলে খুব দ্রুত যানজটমুক্ত নগরী পাবে রাজশাহী বাসী।
Print [1]