ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ , আজকের সময় : মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

যৌন হয়রানির দায়ে জেলে গেলেও সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

যৌন হয়রানির দায়ে জেলে গেলেও সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

রাজশাহী ব্যুরো: শিক্ষক দ্বারা যৌন হয়রানির কড়াল থাবা থেকে ছাড় পাচ্ছেনা শিক্ষার্থীরা। এমন অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করেছিল মোহনপুর উপজেলার ধুরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। যার সত্যতা পাওয়ায় জেল হাজতে যেতে হয়েছে সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোহরাব আলীকে। ‘২০০৯ সালেও বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থাকাকালে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে জেল খাটতে হয়েছে এই সোহরাব আলীকে। ২০২৩ সালেও তার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ। জেলা আওয়ামীলীগের ক্ষমতাধর নেতা হওয়ায় সেসময় এবং এসময় তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেইনি কেউ। অবশেষে গত বছরের ১৫ অক্টোবর যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে উত্তম মধ্যম দিয়েছে ছাত্র ছাত্রীরা। তার অপসারণ চেয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভও করে তারা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হন অভিভাবকরাও। তাতেও কোন লাভ হয়নি। জামিনে ফিরে এসেই ভুক্তভোগীদের হুমকি ধামকি দিতে থাকে এই প্রভাবশালী শিক্ষক। বিষয়টি অভিভাবকরা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আক্কাস আলীকে জানালেও তিনি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়। এতে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুসে উঠেন ছাত্র ছাত্রী ও তাঁর অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলে বিচারক সেই প্রধান শিক্ষককে আবারও জেল হেফাজতে নেন।
তবে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ ছিল। সে জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ৪ নং মৌগাছী ইউপি চেয়ারম্যান। জানাযায়, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক মেম্বার আক্কাস আলীর একান্ত ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ায় ঘটনার চার মাস অতিবাহিত হলেও জেলে থাকা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত না করে তাকে বাঁচানোর সকল চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন এমন অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অষ্টম শ্রেনীর এক ছাত্রী বলেন, প্রধান শিক্ষক ‘ সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে তার কোলে বসিয়ে ছবি তোলেন। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করেন। বিভিন্ন ছাত্রীকে তার কক্ষে একা দেখা করতে বলেন। তার কথা না শোনলে তাকে ফেল করারও হুমকি দেন। এই শিক্ষক নানা সময় একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ তাদের। বিষয়গুলো স্কুলের সভাপতি, অন্যান্য শিক্ষক, কর্মচারী, এমনকি এলাকার লোকজনও জানে বলেও উল্লেখ করেন ওই ছাত্রী।
প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম মাহমুদ হাসান তদন্ত শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষক সোহরাব আলী খাঁন যৌন হয়রানির সাথে জড়িত এবং তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করেন।
এ বিষয়ে মোহনপুর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম মাহমুদ হাসান জানান, তিনি ধুরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তার কাছে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। প্রধান শিক্ষককে বহিস্কার প্রসঙ্গে তিনি জানান, এবিষয়ে আমার কিছুই করার নাই। সবকিছুই সভাপতি করবেন। যেহেতু আপনারা আসছেন সভাপতিকে ডেকে নিয়ে বিষয়টি আমি দেখছি।
পরে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ধুরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব আলী খাঁনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।
বিষয়ে নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, যেহেতু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেহেতু বিষয়টি আদালতের ব্যাপার। তাছাড়া এটা ম্যানেজিং কমিটি দেখবে।