মোহনপুরে চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারে পুলিশের গড়িমশি
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর মোহনপুরে চুরি ও মাদকের তৎপরতা বাড়লেও থানা পুলিশের ভূমিকা কচ্ছপের মত। পুলিশের নাকের ডগায় চুরি হলেও তা উদ্ধার ও আসামী সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এতে পুলিশের বিরুদ্ধে আংগুল তুলছেন ভুক্তভোগী ও সচেতন জনগন। বিভিন্ন ইউনিয়নে পুলিশের বিট অফিসার থাকলেও তাদের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নিয়ে জনগণের মাঝে চলছে নানা রকম আলোচনা ও সমালোচনা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এই উপজেলায় প্রায় ডজন খানেক মটর বাইক হারিয়েছে। কিন্তু এসব চুরির ঘটনায় থানায় তিনটি মামলা রজু হয়েছে।
২৮ মার্চ বেলা সাড়ে ৩ টার সময় থানা সংলগ্ন বরইকুড়ি গ্রামের খোকন এর বাড়ির নিকট হতে হোন্ডা কোম্পানির হরনেট লাল রংয়ের মোটর সাইকেল চুরি হয়। এঘটনায় খোকন মোহনপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও খোকন নিজ উদ্যেগে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং তা পর্যালোচনা করে চোরকে সনাক্ত করলেও মোহনপুর থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে গড়িমশি করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী খোকনের।
বিষয়টি নিয়ে খোকন সাংবাদিকদের জানান, এনজিও থেকে টাকা তুলে অনেক কষ্টে মোটর সাইকেলটি শখ করে কিনেছিলাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশকে দিয়েছি। চোরকে সনাক্ত করেছি। থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে গড়িমশি করছে এবং দিনের পর দিন ঘোরাচ্ছে। কি কারণে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেনা বুঝতে জানিনা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মটর সাইকেল চুরিই নয়, থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উপজেলা থেকে র্যাব ও ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদকসহ কারবারিদের গ্রেফতার করছে হরহামেশাই। কিন্তু মাদক উদ্ধারে থানা পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সূত্রমতে, থানা সংলগ্ন গ্রাম বরইকুড়ি, আমরাইল, মৌগাছি, শ্যামপুর, কেশরহাট, ত্রিমোহনীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫টি মোটর সাইকেল ও ৩টি ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে থানা পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, ডিএসবি শাখার মোহনপুর থানা জোনের এএসআই শাহরিয়ার আলম এর ভাড়া বাড়িতে দিনে দুপুরে আলমারি ভেঙ্গে ২ টি স্বর্নের সীতা হার, ২ টি চেইন, ২ টি আংটি চুরির ঘটনায় মামলা হলেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গত ২২ জানুয়ারি মোহনপুর থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ভাড়া বাসার সামনে থেকে সন্ধ্যার দিকে একটি লালকালো পালসার মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটলেও চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার ও আসামী সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল চুরির সাথে জড়িত নয়, শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে এঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, এগ্রো আমান কোল্ড স্টোরেজ সংলগ্ন কালভার্ট (ব্রিজ) আঞ্চলিক মহাসড়কের নিকট হতে ব্যাটারী চালিত অটোভ্যান, মৌগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন বিশ্বাস এর বাড়ির সামনে থেকে কালিগ্রামের আলতাফ মিস্ত্রির ছেলেের পালসার মোটর সাইকেল, একই মাসে মাদারিগঞ্জ এলাকার আলম নামে একজন মৌগাছিতে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে আসে। মৌগাছী বাজার জামে মসজিদে জুম্মার নামায আদায় করার সময় তার পালসার মোটরসাইকেল চুরি হয়।
চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল মালিক কালিগ্রামের আলতাফ মিস্ত্রির ছেলে সবুজ বলেন, থানায় অভিযোগ করেছি। এখনো মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে খোঁজ খবর পেলে আমাকে জানাবে। এবিষয়ে অটোভ্যান মালিক উপজেলার বজরপুর গ্রামের মৃত সুরুজ মন্ডলের ছেলে মোঃ আফছার আলী (৬০) জানান, তার ছেলে সোহাগ (১৫) শনিবার (২ডিসেম্বর) বেলা ১০টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের বজরপুর ত্রিমোহনী এগ্রো আমান কোল্ড স্টোরেজ কালভার্টের উপর থেকে ব্যাটারী চালিত মোটা চাকার ভ্যানটি হারিয়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুজি করেও অটোভ্যানটি আর পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে মোহনপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশ আজও কোন আমার ভ্যানটি উদ্ধার করে দিতে পারেনি। এব্যাপারে মোহনপুর থানা ওসি হরিদাস মন্ডল জানান, মাদক উদ্ধার ও চুরি ঘটনা নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। শীঘ্রই চোরদের সনাক্ত ও চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করা হবে। তবে পুলিশের এমন অসহযোগিতা নিয়ে কথা বললে পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান, পিপিএম জানান, চুরি ও মাদক নিয়ে পুলিশ সব সময় ততপর। বিগত ৬ মাসে বেশ কয়েকটি অটোরিক্সা উদ্ধার করেছে পুলিশ। যিনি পুলিশি সেবা পাচ্ছে না তাকে আমার অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। পুলিশ সব সময় মানুষের সেবা ও কল্যানে কাজ করছে।
Print [1]