1. zillu.akash@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@dailynewsbangla.com : Daily NewsBangla : Daily NewsBangla
বের হচ্ছে থলের বিড়াল, প্রকাশ হচ্ছে রুয়েট কর্মকর্তার নানা জালিয়াতি - dailynewsbangla
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
আমের রাজধানী নওগাঁয় এবার আড়াই হাজার কোটি টাকা আম বিক্রির সম্ভাবনা  বগুড়ায় আলী হাসান হত্যা মামলার প্রধান আসামি সবুজ গ্রেফতার বগুড়া আদমদীঘিতে মাদকবিরোধী অভিযানে ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার  ভেড়ামারায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের ব্রিফিং বোয়ালমারীতে একটি স্কুলে তিন শিক্ষকের দেখা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা একটি ক্লাস করেই বসে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের বোয়ালমারীতে কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মকর্তা পলাতক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী টোকেন চৌধুরীর বিপক্ষে অভিযোগের  ব্যাখ্যা বগুড়া আদমদীঘিতে স্কুলছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু তড়িঘড়ি লাশ দাফনের চেষ্টা উপজেলা নির্বাচনে ভোট বর্জনে লিফলেট বিতরন শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুরক্ষিত– খাদ্যমন্ত্রী

বের হচ্ছে থলের বিড়াল, প্রকাশ হচ্ছে রুয়েট কর্মকর্তার নানা জালিয়াতি

ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

বের হচ্ছে থলের বিড়াল, প্রকাশ হচ্ছে রুয়েট কর্মকর্তার নানা জালিয়াতি

রাজশাহী ব্যুরো: রাজনৈতিক চাপে ফেলে নিয়োগের শর্ত শিথিল করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এক কর্মকর্তার নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির খবর পাওয়া গেছে।

২০১১ সালের ৩০ মে অনুমোদনহীন সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদের (সহকারী রেজিস্ট্রার) বিপরীতে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন মুফতি মাহমুদ রনি। তিনি ‘অবৈধভাবে’ দীর্ঘ ১৩ বছরের চাকরি পর গায়েবি পদ তৈরি করে রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের ‘’ অতিরিক্ত পরিচালক” হয়েছেন। তবে এই অতিরিক্ত পরিচালক পদে আসতেও তাকে ধাপে ধাপে আশ্রয় নিতে হয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, প্রতারণা আর জালিয়াতির।

প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার নিয়োগসহ পদোন্নতির প্রতিটি পদে পদে ভয়াবহ জালিয়াতি এবং একাডেমিক বিভিন্ন সনদপত্র, থিসিস জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সহকারী রেজিস্ট্রার পদের জন্য ২৬ অক্টোবর আবেদন করেন রনি। রুয়েটের চাকরির নীতিমালায় এই পদের ন্যূনতম যোগ্যতা সরকারি/আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনিক/ একাডমিক/ পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অত্যাবশ্যক বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রাজনৈতিক চাপে ফেলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত শিথিল করেন। এই সুযোগে তিনি চাকরির আবেদন ফরমে ‘এস.এম. এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’ নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (বেসরকারি) লিয়াজো অফিসার হিসেবে ৬ বছর ৫ মাস ১১ দিনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন। অথচ বিধিমালা অনুযায়ী, এস.এম. এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড একটি ঠিকাদারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ওই পদে চাকরির জন্য রনির আবেদন করার যোগ্যতাই ছিল না। কিন্তু তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে লিয়াজো ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন সপ্তম গ্রেডের এই চাকরি। শুধু তাই নয়; ৬ বছর ৫ মাস ১১ দিনের ‘লিয়াজো অফিসার’ পদে যে সনদ দেখিয়ে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে ঢুকেছেন ওই সময়ের মধ্যে তার (রনি) আরো তিনটি প্রতিষ্ঠানে (আর.এম সলিউশন, আব্দুর রহিম এন্ড এসোসিয়েটস এবং রেডিয়েন্ট পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং) কাজ করার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।

অবৈধভাবে চাকরি নিয়েই থেমে থাকেননি রুয়েটের এই ‘অবৈধ’ কর্মকর্তা। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে তিনি উপ-পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে আবেদন করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও রুয়েটের চাকরি নীতিমালা অনুযায়ী, এই পদে ন্যূনতম যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল গবেষণা সম্প্রসারণ/ প্রশাসনিক কাজে সরকারি/ আধাসরকারি কিংবা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা।

এর মধ্যে সহকারী পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) বা সমমানের পদে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু এই পদের জন্য আবেদনপত্রে তিনি সরকারি/ আধাসরকারি/ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুয়েটে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিরত ৪ বছর ৮ মাসের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। আর এই পদে নিয়োগের জন্য প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণে তিনি আবারো পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যতিত দ্বিতীয় নিয়োগপ্রাপ্তিতেও কথিত সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (এস.এম. এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড) ভুয়া সনদটিই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮০তম সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি উপ-পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগ পান।

এখানেই থেমে থাকেনি এই কর্মকর্তা ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদ হিসেবে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদ সৃষ্টি প্রসঙ্গে একটি চিঠি ইস্যূ হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি- এই চার দপ্তরে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদ থাকবে। সেখানে আরো বলা হয়েছে- জাতীয় বেতনস্কেল-২০১৫-তে বর্ণিত গ্রেড-৪ এর পূর্ণ বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম চাকরির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা কোনক্রমেই শিলিথযোগ্য নয়।

এছাড়া চতুর্থ গ্রেডভুক্ত উল্লেখিত পদে জনবল সর্বদা উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু এই কর্মকর্তা প্রশাসনকে জিম্মি করে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরে উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর চতুর্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) পদে আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন পান। এছাড়া চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী, এই পদের জন্য প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১৩ বছরের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও মাত্র ১০ বছরের অভিজ্ঞাতেই তিনি অতিরিক্ত পরিচালক বনে যান। অথচ রুয়েটের অর্গানোগ্রামে গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালকের কোন পদের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তিনি আবারো তৎকালীন প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ‘অস্তিত্ববিহীন’ এই পদেই বর্তমানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। রুয়েটের এই কর্মকর্তার চাকরিপ্রাপ্তি ও পদোন্নতির অনিয়ম-জালিয়াতির খতিয়ান নয়, নিজের একাডেমিক কাজেও তিনি আশ্রয় নিয়েছেন নানা অনিয়ম- জালিয়াতির।

২০১১ সালে রনি যখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন তখন তার চাকরির আবেদনে রুয়েটে এম.এসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। অথচ চাকরি পাওয়ার পর তিনি ২০১১ সালের ১২ জুলাই এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। রুয়েটে চাকরিরত অবস্থায় এমএসসি কোর্সের জন্য আবেদন করলেও রাবিতে এমবিএ কোর্স করার বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন রনি।

এমবিএ করার বিষয়টি গোপন রাখলেও শেষ পর্যন্ত এমবিএ’র সদনপত্র চাকরির ব্যক্তিগত নথিতে নথিভুক্ত করতে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন ভিসি বরাবর তিনি আবেদন করেছিলেন। এই কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির (রোল: ০৮০৪২০২০০১) অংশ হিসেবে যে থিসিস করেছেন সেখানেও করেছেন ভয়াবহ জালিয়াতি। তিনি ০৭২০৯৯ রোল নম্বরধারী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ০৭২০৬২ রোল নম্বরধারী কামরুন নাহার নামের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের দুই শিক্ষার্থীর যৌথ থিসিস পেপার নকল করে নিজের পেপারস জমা দিয়েছেন বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

এমন অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ রনি গণমাধ্যমকে জনান, নিয়োগের সকল শর্ত পূরণ করেই ২০১১ সালে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে প্রশাসন আমাকে চাকরি দিয়েছে। পরবর্তী নিয়োগ (উপ-পরিচালক) ও পদোন্নতিও ( অতিরিক্ত পরিচালক) নিয়োগের শর্ত, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে দিয়েছে। আমার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন নিয়োগ ও পদোন্নতি দিলো?

চাকরিরত অবস্থায় একই সাথে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে অধ্যয়নরত ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রুয়েটে এমএসসি করার জন্য অনুমতি নিয়েছিলাম। কিন্তু রাবিতে এমবিএ স্বান্ধ্য কোর্স করেছি তাই অনুমতি নেয়া হয়নি। থিসিস জালিয়াতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই দুই শিক্ষার্থী বিএসসির থিসিস করেছে। আর আমি করেছি এমএসসির থিসিস। কিন্তু আমাদের একই শিক্ষক তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। থিসিস করার সময় তাদেরকে আমার সঙ্গে কাজ করতে বলে। সঙ্গত কারণে থিসিসের কিছু বিষয় একই ছিল। এটি কোন জালিয়াতি বা কপি করার ঘটনা নয়।’

জানতে চাইলে রুয়েটের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ থেকে ১৩ বছর আগের কথা। ওই সময় নিয়োগে কী শর্ত চাওয়া হয়েছিল সেগুলো তো মনে নেই। আমি ভিসি ছিলাম। এছাড়া নিয়োগ বোর্ডের ৬-৮ সদস্য ছিল। চাকরিপ্রার্থীকে পরীক্ষা-ভাইভা ফেইস করেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট ছিলো কিনা, আমি মনে করতে পারছি না। অফিসের ফাইল ও রেকর্ডপত্র দেখলে বুঝা যাবে আসলে কী হয়েছে না হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিয়োগে চাপ তো ছিলোই। স্থানীয় নেতারা নিয়োগের সময় অনবরত ফোন করতেই থাকে। এটি সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।’

রুয়েটের বর্তমান রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, তৎকালীন প্রশাসন তাকে কোন ক্রাইটরিয়ার ভিত্তিতে চাকরি দিয়েছেন তা আমার জানার কথা নয়। যদি নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই কর্মকর্তা জালিয়াতি করেই থাকে তাহলে সেই বিষয়ে সিণ্ডিকেট কিংবা ফাইলে নোট দিতে হবে। চাকরিরত অবস্থায় অন্য কোথাও অধ্যয়নরত থাকলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি সে থিসিস জালিয়াতি করে থাকেন তাহলে সে ফৌজদারি অপরাধ করেছে। তিনি আরো বলেন, কারো থিসিসের সঙ্গে যদি ৩০ শতাংশের মিল পাওয়া যায় তাহলে সেটি অপরাধ এবং বাতিলযোগ্য।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ