বাগমারায় মাছ চুরি মামলার পর অস্ত্র দিয়ে ফাসানোর চেষ্টা
রাজশাহী ব্যুরো: বিল দখলের জেরে একের পর এক মামলা মুকাদ্দমায় সর্বশান্ত হচ্ছে বাগমারার নরদাস এলাকার অসহায় পরিবার। চলছে পক্ষ বিপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি। ২০ মে (সোমবার) রাজশাহীর আদালতে কাগজপত্র নিয়ে ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে বাগমারা উপজেলার নরদাস ইউনিয়নের ৪নং মেম্বার রফিকুল ইসলামকে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার আদ্যপ্রান্ত। ২০ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সময় হাতিয়ার বিল থেকে ২লক্ষ ধার (কর্য) নেন নরদাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নরদাস কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুল। এরপর বিল কমিটি টাকা টা ফেরত চাইলে শুরু হয় প্রতিহিংসার আগুন। এরপর এই হাতিয়ার বিল যেন এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিন থেকে কুটকৌশলের বিষাক্ত ছোবলে বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ মে (শনিবার) নরদাশ ইউপির মনোপাড়া গ্রামের একটি পুকুরে মাছ চুরির অপরাধে একটি নাটকীয় মামলা করেন উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের আ: গফুরের ছেলে নুরুল ইসলাম। ঐ মামলায় বলা হয়েছে ভোর সাড়ে পাঁচ টার দিয়ে পাঁচটি ভুটভুটিতে ২০ মন মাছ চুরি ও পুকুর পাহারা দেওয়া ভাউড় (টং ঘর) ভাংচুর করা হয়েছে। অথচ ঐ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই ঘটনাটি কাল্পনিক মাত্র। এলাকাবাসি বলছে একটি প্রভাবশালী মহল পুলিশকে প্রভাবিত করে বাগমারা থানায় এজাহার নামীয় ৯ জন ও অজ্ঞাত ৬/৭জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বী একজন নেতা মামলাটির তদবির করতে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছেন। নাম জানতে চাইলে তারা বলেন, ঐ নেতার নাম শহিদ। সে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠ রয়েছেন। এই নেতা, বিবাদীদের ধরাতে পুলিশের সাথে বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালিয়ে বাদশা (৪০) নামে একজনকে ধরিয়ে দেন। এদিকে ঐ নেতার সাথে মামলার বাদী নুরুল ইসলাম এজাহার নামীয় আসামী ও তাদের আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র মেতে উঠেছেন। যোগসূত্র হিসেবে পরের দিন অর্থাৎ ১৯ মে রাতে মামলার বাদি নুরুলসহ নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুলের নেতৃত্বে কলেজ শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুস সালাম, আব্দুল মজিদ, ডেমো মমতাজ, কর্মচারী আ: মতিনসহ অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন মিলে বেলাল (৩৫) নামের এক ভুটভুটি চালককে বেধরক পিটিয়েছে। বেলাল নরদাস গ্রামের মৃত এরশাদ আলীর ছেলে। আহত বেলালের সাথে কথা বলতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে জানা যায়, বেলালের সাথে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক নির্যাতনের কথা। সে জানায়, গত শনিবার পুকুরের মাছ চুরির বিষয়ে একটা মামলা হয়েছে। এখন শুনছি এখানে আমাকেও নাকি আসামী করা হবে!! তাই বিষয়টি নিয়ে এমপি মহোদয়ের কাছে গেছিলাম। এটাই আমার অপরাধ। আমি এলাকায় পাঁ রাখতেই, মনিরের ছেলে সালাম এসে আমাকে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে। এরপর আমার গলা চিপে ধরে এবং গালিগালাজ করে। সে সময় ফছিরের ছেলে মোবারককে চেয়ারম্যান আবুল বলে যে, ওর টেমরে একটা চাইনিজ কুড়াল ঢুকিয়ে দে! আমি পুলিশকে খবর দিচ্ছি। শালাকে অস্ত্র মামলা দিব। এরপর সালাম, রশিদ, মতিন, মমতাজ মোবারকসহ ১৫-২০ মিলে স্কুলের মাঠে নিয়ে গিয়ে বেধরক পিটিয়েছে। আমার শরীর নিস্তেজ হলে সেখান থেকে কলেজের রুমে নিয়ে গিয়ে আটকিয়েছে। পরে এই ঘটনা আমার স্ত্রী জানতে পেরে ৯৯৯ ফোন করে। এরপর পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। তারা পুলিশকে বলছে যে, এর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দিতে হবে। তখন পুলিশ বলেছে, পুলিশ কি আপনাদের গোলাম? পুলিশ তখন জিজ্ঞেস করে, অস্ত্র কার? এমন প্রশ্ন করতেই অস্ত্রের মালিক মোবারক সেখান থেকে পালাই। পরে পুলিশ তৎক্ষনাৎ তদন্ত করে বুঝতে পারে এটি একটি নাটকীয় ঘটনা। তখন পুলিশ আমাকে আমার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আমার শরীর খুব খারাপ হতে থাকলে রাত তিনটার দিকে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে আসে। এরপর সাংবাদিকের সামনে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার সন্তান কলেজে পড়ে। আমার কিছু হলে আমার সন্তান ও পরিবার রাস্তায় নামবে। আমাকে তারা বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এমনকি আমাকে মেরে ফেলতে তারা দিধা বোধ করবেনা। আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ১৯ তারিখে রাতের ঘটনার ব্যাপারে এএসআই জিল্লুর সাথে কথা বললে সে জানায়, ৯৯৯ কল দিলে আমাকে সেখানে পাঠানো হয়। আমি বেলাল নামের একজনকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না। আপনার আরও কিছু জানতে হলে আমার অফিসার ইনচার্জের সাথে কথা বলেন। পরে বাগমারার হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এমন ঘটনা ঘটেছে। ৯৯৯ ফোন পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ঐ জায়গার পরিবেশ নিয়ন্ত্রন করেছি। তবে একটি পক্ষ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিষয়টি বুঝতে পেরে মামলা না নিয়ে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে দিয়েছে। ২১ তারিখে উপজেলা নির্বাচনের কারনে সবাই ব্যস্ত তাই ঐ বিষয়ে আর তদন্ত করা হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Print [1]