রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে আইনী সহায়তা নিতে গেলেই ভুক্তভোগীরা পাবেন যাতায়াত ভাড়াসহ দুপুরের খাওয়ার খরচ। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব শেখ মফিজুর রহমানের মানবিক উদ্যোগে ও আর্থিক সহায়তার মধ্যদিয়ে গঠন করা হয়েছে এই “দরিদ্র তহবিল”। রাজশাহী আদালতে স্মার্ট বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি অসহায় ভুক্তভোগীদের জন্য এই ক্ষুদ্র সহায়তার ব্যবস্থা করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তিনি।
রবিবার (২জুন) হাসিনা খাতুন (২৫) ও শেফালী বেগম (৫৬) কে যাতায়াত ভাড়া ও দুপুরের খাবার খরচ দিয়ে তহবিলটির শুভউদ্বোধন করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারি জজ মো: আরিফুল ইসলাম, লিগ্যাল এইডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ও কর্মরত ষ্টাফরা। উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জেলা জজ বলেন, প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষ আসে ন্যায় ও প্রাপ্য বিচারের আশায়। কিন্তু আদালতে আসার পর অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত ও সর্বশান্ত হয় । আবার অনেকে আছেন যারা মামলা চালানোর মত অর্থনৈতিক অবস্থা থাকেনা। তাই যারা অসহায় ভুক্তভোগী তাদের জন্য এখন থেকে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র সহায়তা প্রদান করা হবে। যেন তাদের যাতায়াত ভাড়া ও দুপুরের খাবার নিয়ে কোন চিন্তা করতে না হয়। তবে এই সহায়তাটি শুধুমাত্র প্রথমদিন পাবে। পরে কথার প্রাসঙ্গিকতায় তিনি উল্লেখ করেন, আমি যখন সাতক্ষীরা, মাগুরা ও শরিয়তপুর ছিলাম সেখানেও এই তহবিল গঠন করেছি। যা চলমান আছে। তবে এই ফান্ড কোন সরকারি সহায়তায় নয়, এটি ব্যক্তি উদ্যোগে করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রোগ্রামের টাকা বাঁচিয়ে এই ফান্ডের তহবিল করা হয়ে থাকে। আশাকরি এই ক্ষদ্র সহায়তা দুস্থদের জন্য কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।
পরে ভুক্তভোগী হাসিনা’র সাথে কথা বলে জানা যায়, বিয়ের পর তার স্বামী তিনটি সন্তান নষ্ট (গর্ভপাত) করেছেন। এখন আর বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছেনা। তাই তাকে তালাক দিয়েছেন। অবশেষে শুভাকাঙ্খিদের পরামর্শে নায্য বিচারের আশায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে এসেছেন তিনি। এরপর শেফালী বেগমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সে পাশের গ্রামের একজনকে ৬০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। কিন্তু বার বার চেষ্টা করে সেই ধারের টাকা তুলতে পারেনি। অবশেষে ন্যায় বিচারের আশায় এই অফিসে এসেছেন।
এদিকে তহবিল গঠন নিয়ে জেলা জজ শেখ মফিজুর রহমানে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাজশাহী জজ আদালতে অসংখ্য আইনজীবী। আইনজীবী রায়হান কবীর বলেন, বর্তমান জেলা জজ স্যার যোগদানের পর থেকে রাজশাহী বিচার ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ। তিনি অসহায় ও দরিদ্রদের প্রতি অনেক আন্তরিক। তিনি আসার পর বহু মামলার জট কমেছে। আশাকরি আগামীতে স্মার্ট বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি আদালত চত্বরের আমুল পরিবর্তন করবেন।