ভরা বর্ষা মৌসুমেও পাওয়া যাচ্ছে না
দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ
মোহাম্মদ আককাস আলী : ভরা মৌসুমেও খাল-বিল, নদী-নালা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। প্রাকৃতিক উৎসে জন্মানো কৈ, মাগুর, শিং পাবদা, চাপিলা, বোয়াল, প্রভৃতি সুস্বাদু দেশীয় মাছ এখন দেখাই যায় না। বাজারে যেসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগই খামারে উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের মাছ। দেশে প্রাকৃতিক উৎসের মাছ কমে গেলেও বিদেশি হাইব্রিড জাতের মাছের উৎপাদন বেড়ে গেছে বহুলাংশে। দেশে উৎপাদিত রুই, কাতলা, নলা, পাঙ্গাস মাছ যা পাওয়া যায়, তাও প্রাকৃতিক উৎসের নয়। কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায় পোনা উৎপাদন করে খামারে চাষ করা। পুকুর জলাশয় উৎপাদিত এসব মাছ ফরমালিনের পানিতে চুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয় বলেও ভোক্তাদের অভিযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক উৎসে জন্মানো দেশি জাতের সুস্বাদু মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ জলাশয়ে মৎস্য সম্পদের স্থায়ী অভয়ারণ্যের অভাবে। দেশি প্রজাতির মাছের বংশ বৃদ্ধি এবং তাদের বাড়তে দেয়ার জন্য যে অবারিত নদী খাল-বিল, হাওরের প্রয়োজন তা আর অবশিষ্ট নেই। অতীতে এদেশের খাল-বিল, নদী নালায় কোনো রকম যত্ন ছাড়াই জন্ম নিতো অজস্র দেশীয় প্রজাতির মাছ। এক সময় নদ-নদী বিল-ঝিলের মিঠা পানিতে সুস্বু দেশীয় মাছে ভরপুর ছিল এবং ভরা বর্ষা মৌসুমে খাল বিলে যেখানে সেখানে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কৃষি জমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, খাল বিল ডোবা ভরাট উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণসহ মাছের বিচরণ ক্ষেত্রের প্রতিকূল পরিবর্তনের কারণেও হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে আমাদের নদী-জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো মৎস্য কুলের বেঁচে থাকার মতো অনুকূল পরিবেশ আর অবশিষ্ট নেই। অধিক মুনাফালোভীরা হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়গুলো থেকে দেশীয় জাতের মাছ বিলুপ্ত করে ফেলেছে। আত্রাই নদী, ছোট যুবনা নদী, তুলসী গঙ্গা নদীসহ বিভিন্ন খাড়ীর অনেক শাখা প্রশাখা বিলীন হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য নেই। একসময় ওইসব নদী বিল- হওর এবং খালেই জন্ম নিতো অজস্র দেশীয় প্রজাতির মাছ। এসব মূল্যবান জলাধার এবং নদী আজ নিঃশেষ হওয়ার পরও এখনও যে অর্ধশতাধিক বিল-ঝিল কোনো রকমে বেঁচে আছে, এর বেশির ভাগেরই বর্ষার দু’তিন মাস ছাড়া নাব্যতা থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে অনেক নদীই শুকিয়ে যায়। অনেক নদীর বুকের ওপর এখন ধানি জমি হয়েছে। তার পরও রয়েছে বসতবাড়ী এবং শিল্প এলাকাগুলোর আশপাশের নদী নালায় পানি দূষণের প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে অবৈধ দলখদারি। বছরের পর বছর নদী হাওরগুলো সংস্কার না হওয়ায় অনেক স্থানে তল ভরাট হয়ে গেছে। দেশী মাছের প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জলাশয়গুলো স্থায়ী মৎস্য অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশি মৎস্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে নদী, খাল-বিল খনন সংস্কার কার্যক্রমের কোনা বিকল্প নেই। এসব উন্মুক্ত জলাশয়ে পানির সংস্থান হলে প্রাকৃতিক উৎসবের মাছের বংশবিস্তার ও বৃদ্ধি সহজ হবে। এভাবেই বিলুপ্তির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে দেশীয় মৎস্য সম্পদ।
Print [1]