রাজশাহী ব্যুরো: ২০১৮ সালে অবসরে যান পশ্চিমাঞ্চল রেলের ইলেক্ট্রিশিয়ান আব্দুল গাফ্ফার। চাকরি জীবন রাজশাহীতে কাটালেও গাফফারের বাড়ি নাটোরের রাজাপুর/ গোপালপুরের ভুইয়াপুর এলাকায়। বয়সের ভারে শেষ জীবনে রোগবালাই যেন তাকে পেয়ে বসে। কয়েকবছর পূর্বে একবার হার্টস্ট্রোকও করেছিলেন তিনি। অবশেষে চলতি বছরের ২৭ জুলাই মৃত্যু বরন করেন নিজ বাসস্থানে। শোকাহত পরিবারের হাল ধরেন আব্দুল গাফ্ফারের একমাত্র সন্তান শামিম হোসেন। আব্দুল গাফ্ফারের মৃত্যুর খবরে গভীর শোক জানিয়েছিলেন গাফফারের অফিস স্টাফ। পরিবার কিছুটা স্বাভাবিক হলে দাপ্তরিক নিয়ম অনুযায়ী গত ২১ সেপ্টেম্বর তার (গাফ্ফার) মৃত্যুর সত্যতা যাচাই করতে ইন্সপেকশনে (পরিদর্শন) যান পশ্চিম রেল রাজশাহীর ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর কামাল হোসেন। সেখানে তার সেবা দিতে কমতি রাখেনি গাফ্ফারের পরিবার। আপ্যায়ন শেষে গাফ্ফারের স্ত্রী ও দুইজন সাক্ষীর সাক্ষর নেন কামাল। বিদায় বেলায় একজন শুভাকাঙ্খীর পরামর্শে কামালের পকেটে এক হাজার টাকা দিতে যান। কিন্তু এক হাজার টাকা দিলে কামাল মন খারাপ করেন এবং বলেন এগুলো কি দিচ্ছো? রাস্তায় খরচ তো অনেক হয়েছে। অন্য জায়গায় ৪-৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকি। পরে দেড় হাজার, এরপর চাপ দিয়ে দুই হাজার দুইশত টাকা দিতে বাধ্য করান কামাল। এমন অভিযোগের কল রেকর্ড মিডিয়ার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
ঘুষ গ্রহনের এমন অভিযোগ মিডিয়ার কাছে আসলে তথ্যানুসন্ধান শুরু করে সাংবাদিকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সতীর্থ জানান, কামাল হোসেন তদন্তে গেলে টাকা ছাড়া ফিরে আসেন না। তাকে খুশি না করালে মৃত্যু সনদে নানান ঝামেলা করে থাকেন। তিনি পেনশন বন্ধের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুলত টাকা আদায় করে থাকেন।। এইভাবে অনেকের থেকে মোটা উৎকোচ গ্রহন করেন কামাল। গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর দেশ যখন সংস্কারে কাজে ব্যাস্ত ঠিক তখন এই ধরনের কার্যক্রম খুবই হতাশার।
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় গাফফারের ছেলে শামিমের সাথে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উনি (কামাল হোসেন) বাসে চড়ে এসেছিলেন। কাজ শেষ হলে বাসে উঠার সময় তার হাতে এক হাজার টাকা দিই আমি। তাতে উনি নেননি অর্থাৎ তিনি অসন্তোষ। আমার কাছে টাকা নাই বললে তিনি বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে বলেন। পরে বাধ্য হয়ে ম্যানেজ করে তাকে বাইশশত টাকা দিয়েছি।
অবৈধ টাকা গ্রহনের ব্যাপারে অভিযুক্ত সেই ওয়েলফেয়ার কর্মকর্তা কামাল হোসেনের সাথে সাক্ষৎ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং বলেন, এগুলো সামান্য ব্যাপার। তবে আমি জোরপূর্বক নেয়নি সে খুশি হয়ে দিয়েছে। কেউ আমার ব্যাপারে এগুলো তথ্য দিয়ে মিডিয়াকে উৎসাহিত করছে। পরে এভাবে টাকা নেয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তার ভুল স্বীকার করেন। কারন যেকোন ধরনের তদন্ত বা পরিদর্শনের জন্য সরকার থেকে বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। আপনি এভাবে প্রতিটি তদন্তের জন্য পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা অবৈধভাবে নিয়ে থাকেন, বললে তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। পরে তিনি সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ করেন।
এব্যাপারে চীফ কমান্ড্যান্ট অফিসার (পশ্চিশ) মো: জহিরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আপনারা যে ব্যাপারে বললেন, আসলে খুবই দুঃখজনক। তিনি এই ধরনের সুবিধা বা উৎকোচ নিতে পারবেন না। যদি এই ধরনের কাজ করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিবে। তবে তিনি আমার দপ্তরের অধিনস্ত নয়। আপনারা চীফ পার্সোনাল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরে অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা চীফ পার্সোনাল অফিসার প্রকৌশলী এসএম রাসেদ ইবনে আকবর এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দাপ্তরিকভাবে আমার বক্তব্য দেয়ার নিয়ম নাই। তারপরও যেহেতু আপনার আমার কাছে এসেছেন, আমি শুনলাম। আপনাদের কাছে কি কি তথ্য প্রমান রয়েছে, আমাকে দিয়ে সহযোগিতা করেন। অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।