রাজশাহী আদালতে সাক্ষর জালিয়াতির দায়ে তিন জনকে কারন দর্শানোর নোটিশ
রাজশাহী ব্যুরো: সাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে একটি মামলার নথি আদালত পরিবর্তনের চেষ্টার দায়ে আদালতের তিন জন ষ্টাফকে কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত, রাজশাহীর (প্রশাসন শাখা) সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ গোলক চন্দ্র বিশ্বাস। যার আদেশ নং ২০৪/জি,। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারি মোঃ আবুল কালাম আজাদ, স্টেনোগ্রাফার কাম-কম্পিউটার অপারেটর সুবিনয় সীমান্ত ও দায়রা সহকারি মোঃ শাহ্ আলম।
বিচার বিভাগের এই চৌকশ বিচারকের সাক্ষরিত একটি নোটিশের কপি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। সেই নোটিশে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ফৌজদারী মিসকেস নং ২০৮৬/২৪ এবং জি.আর ৪৮০/২০২৪ (গোদাগাড়ী) মামলার নথিটি সাক্ষর জালিয়াতি করে আদালত পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। ঐ মামলার দরখাস্তকারী আসামির পক্ষে আব্দুল মালেক রানা নামের কোন এক এ্যাডভোকেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিসকেসের আবেদন করেন। নোটিশে আরও বলা হয়েছে, মোঃ হায়দার আলী কর্তৃক জামিন আবেদনের বিষয়টি বিচারাধীন থাকাবস্থায় আসামী-দরখাস্তকারী বিগত ০২/১২/২০২৪ তারিখে মামলার নথি নিম্ন আদালতে প্রেরনের প্রার্থনা করা সত্ত্বেও উক্ত দরখাস্তকে ০১/১২/২০২৪ তারিখে উপস্থাপন দেখাইয়া মঞ্জুর দেখানো হয়েছে।
উক্ত নোটিশে আরও বলা হয়েছে, স্বাক্ষর জাল করে মূল মামলার নথি বিজ্ঞ আমলী
আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বিগত ০২ ডিসেম্বরে দরখাস্তটি মঞ্জুর করার কোন সুযোগ ছিল না। কারন সেই তারিখে আদালতি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাই আদালত বন্ধ থাকায় জেলা জজের উক্ত দরখাস্তটি মঞ্জুর করার কোন সুযোগই ছিল না। এমতাবস্থায় জেলা ও দায়রা জজ প্রশাসনের নিকট ইহা স্পষ্টঃতই প্রতীয়মান হয় যে,আবুল কালাম আজাদ, সুবিনয় সীমান্ত ও শাহ্ আলম উক্ত জালিয়াতির সহিত জড়িত। কারণ বেঞ্চ সহকারী মামলার নথির তত্ত্বাবধায়ক (Custodian), স্টেনোগ্রাফার কাম-কম্পিউটার অপারেটর উক্ত আদেশ টাইপ করেছেন এবং দায়রা সহকারী নথি প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ফলে তারা সকলেই উক্ত অপরাধের সাথে জড়িত বলে বিবেচিত।
এমন অপরাধের দায়ে ২০১৮ সনের সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালার ৩ (খ) বিধির অপরাধ বলিয়া বিবেচিত হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারি মোঃ আবুল কালাম আজাদ, স্টেনোগ্রাফার কাম-কম্পিউটার অপারেটর সুবিনয় সীমান্ত ও দায়রা সহকারি মোঃ শাহ্ আলম গনের বিরুদ্ধে উক্ত বিধিমালার উপরোক্ত বিধির অধীনে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে না। এই মর্মে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় এবং ০৭ (সাত) কার্য দিবস মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার নির্দেশ দেন।
এমন নোটিশ হাতে পাওয়ার পর মিডিয়াকর্মীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, মামলাটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার একটি রাজনৈতিক মামলা। এমন ঘটনার ব্যাপারে দায়রা সহাকারি শাহ আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এঘটনায় তার কোন হাত নেই। পরে স্টেনোগ্রাফার সবিনয় সিমান্ত’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। কারন, স্যারের দিয়ে সাক্ষর করানো বা নথি আদান প্রদান করানো তার কাজ নয়। তবুও বেঞ্চ সহকারি ও দায়রা সহকারি তাকে নানাভাবে অনুরোধ করে জেলা জজ স্যারের নিকট ক্ষমা চাইতে বলেন। তাদের কথাই সহজ-সরল মনে স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এরপর জেলা জজ কাজটি সে করেছে বলে ধরে নেয়। তবে এই ব্যাপারে সূক্ষ্ম তদন্ত করলেই আসল অপরাধির মুখোশ সামনে আসবে বলে ধারনা করছে সবাই।
পরে রাজশাহীর আদালত পাড়ায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অভিযুক্ত দুই স্টাফের নথি বানিজ্যে তিক্ত আইনজীবী ও সহকারিরা (মুহুরি)।