এম রহমান, দৌলতপুর,কুষ্টিয়া ঃ
পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দৌলতপুরের কামারপাড়া,তারগুনিয়া, আল্লারদর্গা,উপজেলা বাজার,
পশ্চিম দক্ষিন ফিলিপনগরসহ বিভিন্ন এলাকার কামারশিল্পীরা এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা বছর যেভাবে তাদের পেশায় ভাটা থাকে, ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা যায়।
ঈদের কোরবানির জন্য ছুরি, দা, বঁটি, কুড়ালসহ নানা ধরনের ধারালো অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই সময়ে কামাররা দিনরাত কাজ করছেন, কখনও আগুনের তাপে ঘাম ঝরিয়ে, কখনও হাতুড়ির শব্দে এলাকার নিস্তব্ধতা ভেঙে।
কামার শিল্পী জনি কর্মকার জানান,”ঈদের সময়টাই আমাদের মূল উপার্জনের সময়। তবে এবার কয়লা, লোহা এবং অন্যান্য কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। কয়লার দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় লাভের অংশ অনেক কমে গেছে। তবুও কাজ করছি মন দিয়ে, কারণ এই সময়টাই বছরের বাকি সময়ের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেয়।”
একইভাবে সোহেল কর্মকার, মজিবর কর্মকার .জনি কর্মকার .রশিদ কর্মকার .বজু কর্মকার .মোস্তফা কর্মকার, জুলমত কর্মকার . ইংরাজ কর্মকার বলেন, “আগে মানুষ বেশি পরিমাণে কামারপাড়ায় ছুরি বা দা বানাতে আসতো। এখন অনেকে বাজারের থেকে তৈরি জিনিস কিনে নেয়। তারপরও ঈদের আগে কিছুটা ব্যস্ততা থাকে। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।”
পশ্চিম দক্ষিন ফিলিপনগর এলাকার হবিবুর রহমান কামারের দোকানে আসা মফিজুর রহমান মাষ্টার বলেন, পারিবারিকভাবে সবাই মিলে কোরবানি করি। সবাই মিলে সেই গরুর মাংস নিজেরাই কাটাকাটি করি। তাই কোরবানির জন্য কিছু প্রয়োজনীয় চাপাতি, দাঁ, চাকু শান দিতে ও কয়েকটি কিনতে এসেছি। কারণ এখনই কামারদের এখানে অনেক ভিড়। পরে আরও ভিড় বেশি হবে, তাই আজই এই কাজগুলো সেরে ফেললাম। তবে বছরের এই সময়টায় এসব সামগ্রীর চাহিদা বেশি হওয়ায়, দামও একটু বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাইজ ও মানভেদে দা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, বড় ছুরি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ছোট ছুরি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। অনেকেই পুরনো দা-ছুরি শান দিতে আসছেন। এতে কামারদের অতিরিক্ত আয় হচ্ছে।
পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কামাররা আজও এই পেশায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কোরবানির ঈদে কিছুটা বাড়তি আয় তাদের মুখে হাসি ফোটায়, যদিও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই শিল্প টিকে থাকবে কিনা সে আশঙ্কাও তারা প্রকাশ করেছেন।