
বোয়ালমারীতে কোরবানীর মাংস প্রতিপক্ষের কাছ থেকে নেওয়ায় হামলায় একজনের মৃত্যু
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোরবানীর মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত হয়ে মারা গেছেন ভ্যান চালক হুমায়ূন কবীর (৪৮)।
গত রবিবার (৮জুন) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে নয়টা পযন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামে। মৃত হুমায়ুন কবির ওই গ্রামের মৃত মালেক মোল্লার ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। হামলায় বানিয়াড়ী গ্রামের বাসিন্দা ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালক হুমায়ূন কবীর মাথায় ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রবিবার বিকেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থনান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান হুমায়ূন কবীর।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে বানিয়াড়ী গ্রামের আধিপত্য নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে। এর একটি পক্ষর নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেন ও নবীর হোসেন চুন্নু। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন লিয়াকত হোসেন । লিয়াকত হোসেন পাশের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। অপরদিকে নবীর হোসেন ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বোয়ালমারী পল্লি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি। সংঘর্ষে মৃত্যু হওয়া হুমায়ূন কবীর আগে লিয়াকত হোসেনের সমর্থক ছিলেন। তবে গত শনিবার ঈদুল আজহার দিন হুমায়ূন কবীরসহ লিয়াকতের কয়েকজন সমর্থক জামাল হোসেনের বিলি করা কোরবানীর মাংস গ্রহণ করেন। এ নিয়ে ঈদের দিন থেকে ওই গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
গত রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বানিয়াড়ী গ্রামের ছাকেনের চায়ের দোকানে লিয়াকত ও তার সমর্থকদের সাথে হুমায়ুন কবিরেরসহ তার পরিবারের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে লিয়াকতের সদস্যরা হুমায়ুন কবিরদের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। এ হামলায় মাথায় ধারাল অস্ত্রের গুরুতর আহত হুমায়ূন কবীর। পাশাপাশি আহত হন হুমায়ুন কবিরের বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা (৫৮), তার মেয়ে বেনি বেগম (২৩) ও ভাগিনা। এরা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হুমায়ূন কবীরকে রবিবার সকালে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রবিবার বিকেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থনান্তর করা হয়। সেখানে আজ সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেনের পক্ষের নবীর হোসেন বলেন, হুমায়ূন কবীর আগে লিয়াকত হোসেনের দেওয়া কোরবানীর গোস্ত খেত। এবার আমাদের কাছ থেকে কোরবানীর গোস্ত নেওয়ায় লিয়াকতের সমর্থকরা এ হামলা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটায়। নবীর হোসেন জানান হুমায়ুনের মৃতদেহের ময়না তদন্ত চলছে। ময়না তদন্তের পর তার মৃতদেহ এলাকায় এনে দাফন করা হবে। এ ঘটনার পর লিয়াকত হোসেন পলাতক রয়েছে। আজ সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে তার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোনটি ধরেন নি। পরে ফোনটি বন্ধ করে দেন্। খুদে বার্তা দিয়েও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ফলে এ ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা যায়নি। ময়না ইউপি চেয়াম্যান আব্দুল হক মৃধা বলেন, গ্রাম্য দলপক্ষ ও প্রতিপক্ষের কছে থেকে কোরবানীর মাংস গ্রহন করায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাতে মৃত্যুর গুজব রটিয়ে কয়েকটি বাড়িতে ভাংচুর ও গরু লুটের ঘটনা ঘটে। তবে একটি বাদে লুট হওয়া বাকি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, নিহত ব্যক্তি আগে লিয়াকতের সমর্থক ছিলেন তবে এ বছর তিনি জামাল হোসেনের পক্ষের কাছ থেকে কোরবানীর মাংস নেওয়ায় এ হামলা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওসি আরও বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে রবিবার রাতে কিছু ভাংচুরের ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে পরিস্থিতি পুরিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলাদায়েরের প্রস্তুতি চলছে।