হেলাল মজুমদার কুষ্টিয়া
ভেড়ামারায় সাথী ফুড পার্কের কনফারেন্স রুমে সন্ধ্যার সময় এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
১৬ জুন বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে কালো দিবস। বাকস্বাধীনতা হরণ ও সংবাদপত্র বন্ধের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান আজকের এই দিনে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে এটি একটি গভীর শোক ও আত্মবিশ্লেষণের দিন—‘গণমাধ্যম কালো দিবস’। এ দিনে আমরা শুধু অতীতের একটি নিষ্ঠুর অধ্যায় স্মরণ করি না, বরং বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য এক বড় ধরনের সতর্কবার্তাও পাই।
১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশের সব বেসরকারি সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাখা হয় মাত্র চারটি পত্রিকা—যেগুলো সরকার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতো। (দৈনিক বাংলা, দ্য বাংলাদেশ অবজারভার (The Bangladesh Observer), দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ টাইমস (The Bangladesh Times) এই চারটি পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর সরাসরি সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। বাকিরা সব নিষিদ্ধ হয়েছিল—একটি নিঃসরণহীন, নিয়ন্ত্রিত সংবাদ পরিবেশ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। ফলে মতপ্রকাশের অধিকার কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। দেশজুড়ে নেমে আসে এক দমবন্ধ করা নীরবতা। হাজারো সাংবাদিক হারান তাদের পেশা ও পরিচয়। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের মানুষ বঞ্চিত হয় সত্য জানার অধিকার থেকে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনা বেদনাদায়ক, কারণ বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য। অথচ স্বাধীনতার কেবল চার বছর পরই এমন এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যা আমাদের সংগ্রামের মূল চেতনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। শুধু তখনই নয়, পরবর্তী বহু বছর ধরে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সরকারও এই একই পথে হেঁটেছে ভিন্ন রূপে।
আমরা দেখেছি, কোনো কোনো সরকার নিজেদের অপছন্দের সংবাদমাধ্যম বন্ধ করেছে। কোনো কোনো সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুধুমাত্র সত্য বলার জন্য। কখনো টেলিভিশন চ্যানেল বা অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কখনো আবার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে আর্থিক সংকটে ফেলা হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সংবাদপত্রকে।
প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশ প্রতি বছরই নিচের দিকে নামছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আজ মতপ্রকাশের নতুন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিকরা তথ্য প্রকাশ করলে হুমকি পান, মামলা পান, এমনকি কারাবরণও করতে হয়।
অথচ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা থাকবে, নিজের মত প্রকাশের অধিকার থাকবে, তথ্য পাওয়ার অধিকার থাকবে। কিন্তু সেই অধিকার কাগজে থাকলেও বাস্তবে তা অনেক সময়েই লঙ্ঘিত হয়।
বাকস্বাধীনতা কেবল একটি আইনি শব্দ নয়। এটি একটি রাষ্ট্রের মনুষ্যত্বের সূচক। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে সমাজে বিকাশ ঘটে না, চিন্তার চর্চা হয় না, ভুলের সংশোধন হয় না। গণমাধ্যম যদি ভয় পায়, যদি মুখ বন্ধ করে রাখে—তাহলে সত্য কোথায় থাকবে?
আজকের এই কালো দিবসে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার দিন। স্বাধীনতা মানে শুধু ভৌগোলিক মানচিত্র নয়, তা মানসিক মুক্তির নামও। আর সেই মুক্তির সবচেয়ে বড় প্রতীক হলো—মতপ্রকাশের অধিকার।
আমরা চাই, ১৬ জুন কেবল ইতিহাসের পাতায় থাকুক—নতুন করে আর কোনো কালো দিবস যেন ফিরে না আসে। রাষ্ট্র হোক সহনশীল, গণমাধ্যম হোক স্বাধীন, আর সমাজ হোক আলো ও তথ্যনির্ভর।
আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক—
সত্যের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, বাকস্বাধীনতার পক্ষে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ডা: আমিরুল ইসলাম মান্নান, আনোয়ার পারভেজ শান্ত, সাইফুল ইসলাম, আলিম, ইয়ামিন হোসেন, বাবুল আক্তার, ফয়জুল ইসলাম মিলন, আজিজুল হাকিম, জাহাঙ্গীর খান, কাজি মিজানুর রহমান, বুলবুল আহমেদ, মঞ্জুর রাসেল, জাহিদ, মাসুদ রানা লেবু, রতন ঘোষ, ইখলাস হোসেন, জহুরুল ইসলাম, মিথুন, মাহমুদুল হাসান চন্দন প্রমুখ।