ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫ , আজকের সময় : শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫

ঘোড়াঘাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

ঘোড়াঘাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
জনবল ও চিকিৎসক সংকট সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫৮ বছর পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও মিলছেনা আধুনিক চিকিৎসা সেবা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, নবনির্মিত ভবনের কার্যক্রম চালু হলেও ৫০ শয্যার জনবল নিয়োগের অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মিলবে না ৫০ শয্যার আধুনিক চিকিৎসা সেবা। বাধ্য হয়েই ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিতে হচ্ছে ৩১ শয্যার সেবা। এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বহির্বিভাগে সেবা নেন ৪০০ থেকে ৫০০ জন, আন্তঃবিভাগে ৫০ থেকে ৫৫ জন এবং ল্যাবে গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালানো হয় ভাড়া করে আনা এনেস্থেসিওলজিস্ট দিয়ে। প্রধান সহকারী, স্টোর কিপার ও হিসাব শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদ স্বাস্থ্য সহকারীকে দিয়ে চালানো হচ্ছে। শুধু ৩১ শয্যার জন্য এ হাসপাতালে ৯ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) ও মেডিকেল অফিসার (হোমিওপ্যাথিক) একজন এবং ঘোড়াঘাট উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে একজনকে নিয়ে ২ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। বাকি ৭ জন মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। সব মিলিয়ে এ হাসপাতালের মোট ১২২ জন জনবল থাকার কথা হলেও রয়েছে ৭৪ টি বাকি ৪৮ টি শূন্য রয়েছে।
এছাড়াও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, জুনিয়র মেকানিক, এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ও ৩ জন ওয়ার্ড বয়, ২ জন আয়া, ২ জন বাবুর্চি থাকার কথা থাকলেও সবগুলো পদ শুন্য রয়েছে। তাছাড়া ৩ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৬ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী ও একজন নিরাপত্তা কর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। ৩১ শয্যার জনবল সংকট থাকলেও সীমিত এ জনবল নিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসছে। উপজেলার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮শ ৪৮ জনের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্যে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনবল সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ শয্যারও সেবা মেলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘ লাইন। শিফট অনুসারে একজন ডাক্তার রয়েছে। সেবা নিতে আসা একাধিক রোগীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, ডাক্তার নাই। পুরা বহির্বিভাগ মিলে একজন ডাক্তার। উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামের মঈন উদ্দিন বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে ইমারজেন্সি রোগী না নিয়ে আসাই ভালো। ঘণ্টার পর ঘন্টা রোগীকে নিয়ে অপেক্ষা করে রোগীর ঠিক সময়ে চিকিৎসা হচ্ছেনা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো বহির্বিভাগের প্রায় সব রোগীর চোখে মুখে হতাশার ছাপ। আরও দেখা যায়, ৩১ শয্যার পুরাতন ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও দুর্ঘটনায় আহত রোগী এবং তাদের স্বজনরা সেখানে ভিড় করে আছেন। দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক এবং অন্য স্টাফরা তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সেবাদান করছেন। হাসপাতালের প্যাথলজি, এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম রুমের সামনেও অনেক ভিড়। উপর তলায় শয্যা সংকটে অনেকে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী হাসান বলেন, এটি ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ৩১ শয্যার যে জনবলের কাঠামো থাকা দরকার সেখান থেকেও এখানে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর যে পদ আছে যে জনবলের কাঠামো থাকার কথা সেখানে নাই বললেই চলে। যার ফলে হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম থেকে অন্যান্য যে প্রশাসনিক এবং হাসপাতালের যে সেবা কার্যক্রম সেটা ব্যাহত হচ্ছে।আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার এবং কনসালট্যান্ট থাকার কথা তার মধ্যে ২ জন ডাক্তার ও একজন গাইনী কনসালট্যান্ট আছে। এ অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এ হাসপাতালটি চালানো দুঃসাধ্য। আমি এ ব্যাপারে আমার উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি এবং প্রতিমাসে আমরা তাদেরকে চিঠির মাধ্যমে জানাচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই হয়তোবা এ সমস্যার সমাধান হবে।