ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫ , আজকের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

রাজশাহীতে বাকবিতণ্ডার জেরে মিস্ত্রিকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করল বিজিবি সদস্যরা

রাজশাহীতে বাকবিতণ্ডার জেরে মিস্ত্রিকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করল বিজিবি সদস্যরা

রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহীতে কথা কাটাকাটির জেরে বাবু (২৫) নামের এক সেনেটারি মিস্ত্রি ও সহযোগী হামিম সম্রাট (২৮) কে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১৩ আগষ্ট) দুপুরে নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন আহমেদ নগর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।

সূত্রমতে জানা গেছে, সম্প্রতি শহিদুল ইসলাম শহীদ নামে এক বিজিবি সদস্য ওই বাসায় ভাড়া আসেন। বাসার সেনেটারি ফিটিংসে সমস্যা হওয়ায় বাবু নামের এক মিস্ত্রিকে ডাকা হয়। কাজ করতে গিয়ে বাবু ও শহীদের স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। স্ত্রী ফোনে স্বামীকে জানানোর পর শহীদ বাসায় এসে মিস্ত্রির সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিতে শহীদ আহত হন বলে দাবি করেন তিনি। পরে শহীদ নিজ ক্যাম্পে ফোন করলে আরও বিজিবি সদস্য বাসায় এসে মিস্ত্রিকে মারধর করে। এ সময় ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন এক স্কুলশিক্ষিকা। বিজিবি সদস্যরা তার ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে ফেলে এবং তাকে অপমান করে। পরে মিস্ত্রি ও তার সহযোগীকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এমন খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন দেখা করতে চাইলে দীর্ঘ সময় (প্রায় তিন ঘন্টা) অপেক্ষার পর ক্যম্প থেকে জানানো হয় বাবুকে থানায় পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় রাতে মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং ২৫/২৫)। মামলার বাদী শহিদুল ইসলাম শহীদ।

মামলার এজাহারে শহীদ দাবি করেছেন, মিস্ত্রি বাবু তার স্ত্রীর সাথে অশালীন আচরণ করে এবং তাকে ধাক্কা মারে। তিনি বাধা দিতে গেলে লোহার রেঞ্চ দিয়ে আঘাত করে। এ সময় সহকর্মীদের সহায়তায় তিনি ‘উদ্ধার’ হন এবং পুলিশে আসামিকে সোপর্দ করেন।

তবে বাড়ির মালিক সজিব এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ভাড়াটিয়া শহীদ মিস্ত্রি বাবুকে মারধর করেছে, আমাকেও অপমান করেছে। আমার বাসায় থাকা শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করেছে। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে বলে আমি মনে করি, কারন তারা সমাধান না দিয়ে ঝামেলা বাড়িয়েছে। আমি তাদের এমন আচরনে হতাশ হয়েছি”

এ বিষয়ে বিজিবি সদস্য শহীদুল ইসলাম কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিবুল হক বলেন, “আমার সদস্যকে মারধর করে জখম করা হয়েছে। পরে অন্য সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্যাম্পে আনা হয়েছিল, আটকে রাখা হয়নি। পরে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।”

তবে এঘটনায় সচেতন মহল বলছেন— “আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য আইনের বাইরে গিয়ে কাউকে শারীরিকভাবে নির্যাতন বা দীর্ঘ সময় আটক রাখতে পারেন না। কারন বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ ও ৩৩-এর পরিপন্থী। এ ধরনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়।”

মামলা বা অভিযোগ ছাড়া আটক রাখা হলে তা অবৈধ আটক (Illegal Detention) হিসেবে গণ্য হয়, যা সংবিধানবিরোধী।