দৌলতপুর (কুষ্টিয়া): কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে রীতিমতো তামাশা করেছেন আয়োজকরা। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন মেম্বার সমন্বিতভাবে এই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। তবে সম্মেলনস্থলে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। দেখা যায়নি সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের কোনো প্রস্তুতিও। এ নিয়ে দোলাচলে থাকার পর শেষ মুহূর্তে তারা পিছুটান দেন। ইউপি মেম্বাররা দুই দফা সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবার পিছুটান দেয়ার ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের শিতলাইপাড়া গ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিবারের গৃহবধূ রুবিনা খাতুনের (৪৫) নামে দুস্থদের জন্য সরকারি বরাদ্দের ভিজিডি কার্ড তৈরি করে চাল আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবুকে দুদিন আগে (২৪ নভেম্বর) কারাগারে পাঠানো হয়। চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করলে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (দৌলতপুর) বিচারক মো. এনামুল হক জামিন শুনানির পর জামিন নামঞ্জুর করে চেয়ারম্যানকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ড জালিয়াতির ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নিজেদের গা বাঁচাতে নির্দোষ প্রমাণের জন্য রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মানিক আহম্মেদ, আব্দুস সবুব ওরফে সবিরসহ সেখানকার আরো কয়েকজন ইউপি মেম্বার সমন্বিতভাবে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন।
আগের দিন বুধবার এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের অবগত করা হয়। সেই মোতাবেক বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনের জন্য পূর্ব নির্ধারিত রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদে যান। কিন্তু সাংবাদিকরা গিয়ে দেখেন প্যানেল চেয়ারম্যান মানিক আহম্মেদ ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। ছিল না কোনো ব্যানার ও লিখিত বক্তব্যের কপি।
এমনকি সংবাদ সম্মেলনের জন্য উপযোগী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিকদের উপস্থিতিও ছিল না। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হওয়া সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলনের এই আয়োজনকে পর্যাপ্ত নয় মন্তব্য করে তা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। একপর্যায়ে আব্দুস সবুব ওরফে সবির মেম্বার ব্যানার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় বিলম্ব হওয়ার জন্য আয়োজকরা দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে উপস্থিত সাংবাদিকদের পেশাগত অন্য কাজ থাকার কারণে সময় দিতে না পারায় ফিরে আসেন।
এদিকে প্যানেল চেয়ারম্যান মানিক আহম্মেদ, ইউপি মেম্বার আব্দুস সবুব ওরফে সবির বিকেল ৪টায় পুনরায় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে সাংবাদিকদের উপস্থিতি কামনা করেন। এই সময়ের মধ্যেই তারা সংবাদ সম্মেলনের জন্য অপরিহার্য আয়োজন সম্পন্ন করে রাখবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু পরিবর্তিত সময় বিকেল ৪টায় সাংবাদিকরা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আরো বাজে অবস্থার মুখোমুখি হন। এ সময় প্যানেল চেয়ারম্যান মানিক আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, অনিবার্য কারণে আজ (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তারিখ নির্ধারণ হলে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া হবে।
এই তথাকথিত সংবাদ সম্মেলনের নামে দফায় দফায় সাংবাদিকদের ডেকে অসম্মান করার বিষয়ে জানার জন্য সংবাদ সম্মেলনের আহ্বায়ক আব্দুস সবুব ওরফে সবির মেম্বারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি প্যানেল চেয়ারম্যান মানিক আহম্মেদকেও।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের নামে এগোনো-পেছানোর তামাশা খেলার মাধ্যমে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের ইউপি মেম্বারদের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণে সাংবাদিকরা রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন। একই সাথে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কী কারণে তৃণমূলের এই জনপ্রতিনিধিরা এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ দোলাচলে লিপ্ত হলেন তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এখানকার সাংবাদিকরা।